উট সম্পর্কে বিস্ময়কর তথ্য। আল্লাহ পাকের এক রহস্যময় সৃষ্টি মরুভূমির জাহাজ উট।

উট প্রাণীবিজ্ঞানীদের কাছে এক মহাবিস্ময়। মানবজাতি 4,000 বছরেরও বেশি সময় ধরে উটকে ধরে রেখেছে এবং এখনও সারা পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্যে তাদের উপর নির্ভর করে। স্প্যানা জর্ডান, তিউনিসিয়া এবং ভারতসহ বিভিন্ন দেশে প্রতি বছর হাজার হাজার উট মানুষের বিভিন্ন কাজে সহায়তা করে। মানুষসহ বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণীদের শরীরের তাপমাত্রা সাধারণত থাকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট) বা এর আশেপাশে থাকে। যদি দেহের ভেতরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে ৩৮.৫ ডিগ্রির (১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট) বেশি হয়, তখন দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোর ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। ৪০ ডিগ্রির (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) বেশি হলে শরীরের লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক, খাদ্যতন্ত্র ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর ৪১ ডিগ্রি (১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রায় শরীরের কোষ মরে যেতে শুরু করে। এজন্যে যখন কোন স্তন্যপায়ী প্রাণীদের দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেড়ে যায়, তখন তার শরীর ঘেমে বাড়তি তাপমাত্রা বের করে দিয়ে ঠাণ্ডা হয়ে যায়।



কিন্তু উটের কাছে এভাবে জল অপচয় করা যেন এক ধরণের বিলাসিতা। কেননা মরুভূমিতে সবচেয়ে দুর্লভ সম্পদ হচ্ছে জল। আর তাই উটের শরীরে এক বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। ভোরবেলা উটের দেহের তাপমাত্রা থাকে ৩৪ ডিগ্রি। তারপর দিনের বেলা আবহাওয়া যখন প্রচণ্ড গরম হয়ে যায়, তখন তার দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বেড়ে ৪১ ডিগ্রি (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) পর্যন্ত ওঠে। এরপর থেকে উট ঘামতে শুরু করে। তবে উট এর আগ পর্যন্ত পানি ধরে রাখে। এভাবে প্রতিদিন এটি তার স্বাভাবিক তাপমাত্রা থেকে প্রচণ্ড জ্বরের তাপমাত্রা পর্যন্ত সহ্য করে থাকে।

উটের শরীরের ভেতরে এমন ব্যবস্থা রাখা আছে, যেন তা দিনের পর দিন ভীষণ জ্বর সহ্য করার পরেও শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোর বড় ধরনের ক্ষতি না হয়। উটের রক্ত বিশেষভাবে তৈরি করা প্রচুর পরিমাণে জল ধরে রাখার জন্য।

উট যখন একবার জল পান করা শুরু করে, তখন এটি প্রায় ১৩০ লিটার পানি (প্রায় তিনটি গাড়ির ফুয়েল ট্যাঙ্কের সমান জল) প্রায় ১০ মিনিটের মধ্যে পান করে ফেলতে পারে।

এই বিপুল পরিমাণের জল অন্য কোনো প্রাণী পান করলে তার শরীরের রক্তে মাত্রাতিরিক্ত পানি গিয়ে অভিস্রবণ চাপের কারণে রক্তের কোষ ফুলে ফেঁপে ফেটে যেত।

কিন্তু এই উটের রক্তের কোষে এক বিশেষ আবরণ রয়েছে, যা ভীষণ চাপ সহ্য করতে পারে। আর এই বিশেষ রক্তের কারণেই উটে একবারে এত পানি পান করতে পারে।

উটের কুজ হচ্ছে চর্বির আধার আর এই চর্বি উটকে শক্তি এবং পুষ্টি যোগায়। আর জল উটের শরীরের যাবতীয় আভ্যন্তরীণ কাজকর্ম সচল রাখে এবং এর শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখে।

একবার যথেষ্ট খাবার এবং জল নেওয়ার পর একটি উট প্রায় ছয় মাস পর্যন্ত কোনো খাবার বা পানি পান না করেই টিকে থাকতে পারে।

 "উটের দিকে তাকিয়ে দেখেছ, কীভাবে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে ?” (সূরা গাশিয়াহ ১৭)

১) উট হচ্ছে প্রকৃতির এক মহাবিস্ময়, ৫৩ ডিগ্রি গরম এবং মাইনাস-১ ডিগ্রি সেলসিয়াস শীতেও উট টিকে থাকে।

২) মরুভূমির উত্তপ্ত বালুর উপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা উট পা ফেলে রাখে।

৩) উট মাসের পর মাস চলতে পারে কোনো পানি পান না করে।

৪) মরুভূমির বড় বড় কাঁটাসহ গাছ যেমন ক্যাকটাস খেয়ে ফেলে উট।

৫) এটি প্রায় দেড়শ কেজির ওজন নিজের পিঠে নিয়ে শত শত মাইলের পর মাইল হেঁটে পারি দেয়।


উটকে বলা হয় মরুভূমির জাহাজ। উট ১৭০-২৭০ কেজি পর্যন্ত ভর নিয়েও হাসিমুখে চলাফেরা করে।

এই শক্তিশালী, বিশাল দেহের প্রাণীটির মানুষের প্রতি শান্ত, অনুগত হওয়ার কোনোই কারণ ছিল না। বরং এরকম স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রাণীর খুব হিংস্র হওয়ার কথা। বিবর্তনবাদীদের তৈরি বহু নিয়ম ভঙ্গ করে এই প্রাণীটি কোনো কারণে হয়ত নিরীহ, শান্ত, মানুষের প্রতি অনুগত হয়েছে।

আল্লাহ যদি উটকে মানুষের জন্য উপযোগী করে না তৈরি করতেন, তাহলে মরুভূমিতে মানুষের পক্ষে সভ্যতা গড়ে তোলা এক প্রকার অসম্ভব হয়ে যেত।

উটের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা হচ্ছে এর কাটা যুক্ত গাছপালা চিবানোর ক্ষমতা, যা অন্য কোনো প্রাণীর নেই। বড় বড় কাঁটাসহ ক্যাকটাস এর মত গাছ এটি সাবাড় করে দিতে পারে।

তবে অন্য কোনো প্রাণী হলে ক্যাকটাসের কাঁটার আঘাতে গাল, মাড়ি, জিভ ক্ষতবিক্ষত হয়ে যেত। কিন্তু উটের কোনকিছুই হয় না।

উটের মুখের ভেতরে এক বিস্ময়কর ব্যবস্থা আছে। উটের মুখের ভেতরের দিকটাতে অসংখ্য ছোট ছোট শক্ত আঙ্গুলের মত ব্যবস্থা আছে, যা তাকে কাটার আঘাত থেকে রক্ষা করে। এমন এক জিভ রয়েছে যা কাঁটা ফুটো করতে পারে না।

উটের চোখে দুই স্তর পাপড়ি আছে। যার জন্যে মরুভূমিতে ধূলিঝড়ের মধ্যেও উট তার চোখ খুলে রাখতে পারে। এই বিশেষ পাপড়ির ব্যবস্থা সানগ্লাসের কাজ করে মরুভূমির প্রখর রোদের থেকে উটের চোখকে রক্ষা করে এবং উহার চোখের আদ্রতা ধরে রাখে।

একইসাথে এটি বিশেষভাবে বাঁকা করা যেন তা সহজেই ধুলোবালি আটকে দিতে পারে।

একজন বুদ্ধিমান লোকের জন্যে উটের এমন অপূর্ব সৃষ্টি তার মহান স্রষ্টাকে চেনার জন্যে যথেষ্ট।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url