সেদিন রাতের ভাবনা

মায়ার সাথে পরিচয় স্কুল জীবন থেকে । সে আমার থেকে ২ বছরের জুনিয়র ছিল । তাকে তেমন ভাবে চিনতাম না বছরখানেক আগেও । একবার অ্যাডমিশন কোচিং এ ক্লাস  নিতে গিয়ে দেখি একটা মেয়ে এমন ভাব নিয়ে আছে যেন তার সাথে আমার তার জন্ম জন্মান্তরের সম্পর্ক । পরে ক্লাস শেষে মেয়েটাই জিজ্ঞেস করে বসে ,

- ভাইয়া আমাকে কি চিনতে পারছেন ?

- সরি , আমি তোমাকে চিনতে পারছিনা ।

- আমি আপনার স্কুলের ২ বছরের নিচের ব্যাচ আপনি ১৭ এর ছিলেন আর আমি ১৯ এর। আপনাকে অনেকবার দেখেছিলাম স্কুলে থাকতে । কিন্তু আপনি কলেজে ওঠার পর আর কখনো দেখিনি ।

- ওহ আচ্ছা । (আমি একে চিনতে পারিনি কারণ আমি তেমন খোঁজ খবর রাখতাম না স্কুলে কে কি আছে । আমার কাজ ছিল যাওয়া আসা আর নিজের মত পড়াশুনা করা তাই এই মেয়ে যদি মিথ্যে বলে আমি সেটা ধরতে পারব না )

- আচ্ছা ভাইয়া আসি ।

- আচ্ছা ।

এই বলে সেদিনের মত বিদায় ঘটে । কিন্তু পরবরতীতে আরো অনেক কিছু ঘটে যায় আমাদের জীবনে । আমি ছিলাম ওদের ব্যাচের কো  অর্ডিনেটর । তাই তাদের ক্লাসে প্রায় আসা যাওয়া থাকত । আর যেহেতু স্কুলের জুনিয়র তাই একটা সিম্প্যাথি দেখাতে হত । এতে করে আরো ঘনিষ্টতা সৃষ্টি হয় । আর এই ঘনিষ্টতা ক্রমেই বাড়তে থাকে যার ফলাফল হয় একটি সম্পর্ক । তখন বিশ্ববিদ্যাল়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয় যায় । প্রায় অনেক ভর্তি পরীক্ষায় আমি উপস্থিত থাকা হয় আমার যদিও সবাই জানত আমি হয়তো কোচিং এর জন্য আসতাম কিন্তু তখন এর কারণ ছিল মায়া ।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ঘুড়ে পরীক্ষা দিয়ে সে কোথাও সুযোগ পায় না । কিছু জায়গায় সিরিয়াল আসলেও ভালো সাবজেক্ট পায় না । অনেকটা অবসাদগ্রস্ত হলে সে একটি বেসকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় ।

এর মাঝে অনেক দিন তার সাথে আমার ডেট হয়েছে । অনেক জায়গায় ঘুড়েছি এক সাথে । অনেক স্বপ্ন দেখেছি দুজনে । খুব ভালই যাচ্ছিল । এর মধ্যে নতুন বছর শুরু হয় । আমার থার্ড ইয়ার এর ক্লাস শুরু হচ্ছে আর মায়ার ফার্স্ট  ইয়ার । সমস্যার শুরু আস্তে আস্তে এখান থেকেই হয় ।

প্রথম এক মাস ক্লাস করার পর তার ব্যস্ততা বেড়ে যায় । আমিও সময় দিতে পারি না আর তার লেখা পড়ার কথা ভেবে আমি সময় অসময়ে তার সময় নষ্ট করতে চাই না । আবার প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ার জন্য বাহিরের মানুষদের কথা শুনে সে আরো ডিপ্রেশন এ চলে যাচ্ছে । এদিকে আমি কিছু বললে সে সেটা পজিটিভলি নিতে পারে না কারণ আমি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এ পড়ি । তাই আমাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে । এর মাঝে কয়েকজন বন্ধুর কাছে শুনতে পাই তারা নাকি মায়াকে অনেক জায়গায় অন্য কারো সাথে ঘুড়তে দেখেছে । কিন্তু ব্যাপারগুলো নিয়ে আমি ভাবতাম না । কারণ ব্যাপার গুলো পজিটিভলি নেওয়ার চেষ্টা করতাম । শেষ যেদিন দেখা হলো সেদিন তাকে অনেক হাসি খুশি দেখতে পাই কিন্তু সেদিন তার পাশে আমি ছিলাম না । ছিল অন্য কেউ । তাকে আমি চিনিনা আর এটাও জানিনা তার সাথে মায়ার সম্পর্ক কি তাও আমি জানিনা । কিন্তু সেদিন নিজেকে খুব ব্যার্থ মনে হলো । আমি মনে তার জন্য পারফেক্ট নই । নিজেকে অনেক বড় অপরাধী মনে হচ্ছিল । চোখে ভাসছিল তাকে নিয়ে দেখা স্বপ্নগুলো যা কখনো পূরণ হবার নয় । আমি ব্যর্থ । আর এই ব্যর্থতার দায় অনেক বড় । তখন মাথায় ঘুরছিল আমার জীবনের কোনো মূল্য নেই । It's better to die ।

সুইসাইড করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম । শারীরিক কোনো জ্ঞান তখন ছিল না  অর্থাৎ আমরা শরীরের নার্ভ এর নিয়ন্ত্রণ ছিল না । তখন সব কিছু আমার মাথায় চলছিল । তখন শুধু ভাবছিলাম ,

আচ্ছা , আমি মরে গেলে কি মায়া জানতে পারবে নাকি সারাজীবন অজানাই থেকে যাবে তার । নাকি সে ভুলে যাবে আমার কথা । আমার মত কেউ তার জীবনে থাকবে বলে কি সে মনে রাখবে । আচ্ছা আমি মরে গেলে আমার মা বাবা ভাইবোনের কি হবে । তারাও কি মনে রাখবে । কিষ্টের সাগরে ভাসবে তারা না কি স্বার্থপর ভাববে সারাজীবন । আমার বন্ধুরা তো জানে আমি কষ্টে আছি । তারা কি মেনে নিবে ব্যাপারটা ।

আচ্ছা আমি মরে গেলে কি সব সমস্যার সমাধান হবে ?

হয়তো । আবার নাও হতে পারে । কিন্তু আমি তো এত বড় দ্বায় নিয়ে বাঁচতে পারব না । এত জল্পনা কল্পনা কিভাবে মুছে ফেলবো ।

আচ্ছা , মৃত্যুর পর আমার কি শাস্তি হবে ? নিশ্চই জাহান্নাম লেখা থাকবে আমার নিয়তিতে । কিন্তু আমি কি পাপী । কেন হব পাপী?

এই একটা প্রশ্ন বারবার ঘুরে ফিরে তাড়না দিয়ে যাচ্ছে । আমি কেন পাপী হব । তখন জানার ইচ্ছা জাগল । অনেকটা ঠাট্টার ছলে খুঁজতে শুরু করলাম আর মনে মনে ভাবলাম মরে যাবো যখন তখন জেনে যাওয়া তাই উত্তম ।

তাই ঘাটাঘাটি করি কিছুক্ষণ । আর এই কিচ্ছুক্ষণের দামটাই এখন আমার কাছে অনেক বেশি ।

সেদিন খুঁজতে গিয়ে জানতে পারি আসলে আমরা আমাদের বেঁচে থাকার কারণটাই জানি না । জানি না কেন এই সৃষ্টিকর্তা আমাদের সৃষ্টি করেছেন । আমরা তো দুনিয়াবি কাজে মত্ত ।

সব লজ্জা লাগতে লাগলো তখন যখন জানতে পারি আসলে আমি যেই কারণে মৃত্যু বরণ করে নিতে চাচ্ছি সেটা আল্লাহর তরফ থেকে নিষিদ্ধ । আর আমি একটু নিষিদ্ধ কাজের জন্য আরেকটি নিষিদ্ধ কাজ করতে গেছিলাম ।  আমরা ভুলে গেছি যে আল্লাহ কেন আমাদের দুনিয়াতে পাঠিয়ে ছিল । কেন আমাদের সৃষ্টি । পরকালে যে মানুষের বিচার হবে তা নিয়ে আমরা হয়ত ভুলে গেছি অথবা জাহান্নাম টা কে সহজ ভেবে নিয়েছি ।

যাই হোক, সেদিন আমি আমার জীবনের অর্থ জেনেছি । এখন জীবনে আল্লাহর জন্য কি করেছি তাই ভেবে আল্লাহর ক্ষমা চেয়ে চোখের পানি ফেলি ।

( নোট : এটা আমার বানানো একটি গল্প । এমন সুইসাইড করার ভাবনা কখনো আমার আসেনি ইনশাআল্লাহ কখনো আসবে না । মূলত আমি চাই সবাই যেনো এমনকরে ভাবতে শেখে । হয়ত মানুষ যখন এমন অবস্থায় পৌঁছায় তখন তার ভাবনার সুযোগ থাকে না তবুও ভেবে দেখি । ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন । )

লেখকঃ নাহিদ আহমেদ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url