গল্পঃ ছোটবোনের জন্যে ভালবাসা
- তোর আদরের দিন শেষ! তোর আম্মু আব্বু আর তোকে আদর করবে না!
- কেন? আমি কি করছি?!
- তোর একটা গুলুগুলু পিচ্চি বোন হইছে। সবাই এখন ওকেই আদর করবে!!
...ছোট্ট ধ্রুব কে এমন করেই জানানো হয় পরিবারের নতুন অতিথির আগমনী সুসংবাদ! তাই সে মোটেও আনন্দিত হয় নাই। এমনিতেই বেশ কিছু দিন হলো আম্মু কাছে নাই। আম্মু নাকি অসুস্থ, হাসপাতালের কেবিনে ভর্তি! এখন বুঝতে পারছে, সব ওই পিচ্চিটার ষড়যন্ত্র! মনে মনে ঠিক করে ফেলেছে, পিচ্চিটার দেখা পেলেই খামচি মেরে দাগ বসিয়ে দেবে। কত্ত বড় সাহস! আমার রাজত্বে ভাগ বসাবে!!
কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে ধ্রুব ভুলে গেলো সে কথা! এত্তো ছোট বাচ্চা! খামচি দিবে কি, স্পর্শ করতেই তো ভয় লাগে! আর কী নিষ্পাপ চেহারা! নরম তুলতুলে হাতের ফাঁকে আঙ্গুল ঢুকাতেই পিচ্চিটা আকঁড়ে ধরলো ধ্রুব কে। ধ্রুব আনন্দে চেঁচিয়ে উঠলো, "আম্মু, দেখো দেখো! আমার হাত ধরছে!"
ধ্রুব-র হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে বড় হয়ে গেলো উপমা। এখন তার কাজ হলো হাঁটি হাঁটি পা পা করে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়ানো আর কাঁচের জিনিস পত্র আছাড় দিলে আসলেই ভাঙে কিনা তার সত্যতা যাচাই করা! কোন কিছু ভেঙে গেলে উনি সামনের পাটির সদ্য গজানো দাঁত বের করে বিজয়ের হাসি দেয়।
প্রতিবাদ করবার উপায় নাই, কিছু বললেই ওনার চিৎকারে ভূমিকম্প শুরু হয়ে যায়। আরোও রেগে গেলে সদ্য গজানো দাঁত কে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে ভুলে না। কামড় খেয়ে ধ্রুব যখন পেটাতে যাবে তখনি "আম্মাআআআআ" সুরে টারজানের ডাক দেয়। সাথে বিচ্ছু বাহিনীর কাছে শেখা "কুত্তা বাত্তা" নামক সুশীল গালি তো আছেই।
ধ্রুব যতবারই বলে, "কুত্তার বাচ্চা না, বলো উত্তর বাড্ডা!"
উপমা ততবারই বলে, "নাআআআ! কুত্তা বাত্তা!"
ধ্রুব মনে মনে ভাবলো, এই পিচ্চি বড় হইয়া যে কি হবে!!
ধ্রুব-র আশঙ্কা মিথ্যে হয়নি। এই পিচ্চি বড় হয়ে ওর জীবনটা তামাতামা করে দিলো। বড় ভাইয়ের সাথে ঝগড়া না করলে ওর পেটের ভাত হজম হয় না। খাইতে বসলেও ঝগড়া করে, পড়তে বসলেও ঝগড়া করে, আর টিভি দেখার সময় তো করেই। ধ্রুব রিমোট হাতে নিয়ে খেলার চ্যানেল দিলেই ছ্যাত্ করে জ্বলে উঠে ...
- "আমি সিরিয়াল দেখতেছিলাম, তুমি খেলার চ্যানেল দিলা ক্যান?"
- সারা দিন হিন্দি সিরিয়াল দেখোস ক্যান? যা পড়তে যা!
- আমি দেখলে তোমার কি?
- ফকিন্নির সাহস কত্তো বড়? মুখে মুখে কথা কস! থাপড়াইয়া সব দাঁত ফালাই দিমু ... যা ভাগ!
- আম্মাআআআ...! তোমার ফাজিল পোলারে কিছু কও না ক্যান? শয়তান, বদমাইশ ব্লা ব্লা ব্লা ...
...ম্যাঁ ম্যাঁ করতে করতে বাড়ি মাথায় তোলে উপমা!
আর ধ্রুব মনে মনে আফসোস করে, কবে যে বিয়া দিয়া বোনটাকে বাসা থেকে তাড়াবে! একটু শান্তি তে থাকা যাবে তখন!
আজ ধ্রুব-র বিজয়ের দিন! আজ ওর বোনের বিয়ে। ওর বোনটা কে আজ বাসা থেকে তাড়াতে পারবে। ওর হারানো রাজত্ব ফিরে পাবে।
কিন্তু ধ্রুব মোটেও আনন্দিত নয়! দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছে, বাবা-মা কে জড়িয়ে ধরে উপমার কান্নাকাটি। বোনের হাউমাউ করে কান্না দেখে ওর বুকের গভীরে এক বিশাল শূন্যতা অনুভব করলো। হৃদয়ে কেমন যেন হাহাকার সৃষ্টি হলো! খুব ইচ্ছে হলো বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে একটু সান্ত্বনা দিতে!
কিন্তু ধ্রুব জানে কিভাবে আবেগ লুকাতে হয়! এইসব কান্নাকাটি-আবেগ -ভালোবাসা ওকে মানায় না। বোন কে মায়ের আলিঙ্গন থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে স্বামীর গাড়িতে তুলে দেবার জন্য এগিয়ে গেলো। ভাইকে সামনে পেয়ে হঠাৎ করেই উপমা "ভাইয়াআআআ" বলে জড়িয়ে ধরলো ধ্রুব কে। ধ্রুব ইতস্তত করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো...
-"আহা! পাগলী! তোর ম্যাঁ ম্যাঁ করার অভ্যাস এখনো গেলো না। কাঁদিস না আর! কাঁদলে তোকে আরোও ফকিন্নি দেখায়!!"
... "ভাইয়াআআ" বলে উপমা আরোও জোরে আকঁড়ে ধরলো ধ্রুব কে, হাউমাউ করে কাঁদতে থাকলো।
এবার ধ্রুব-র চোখটাও কেমন ঝাপসা হয়ে আসলো। বুঝতে পারছে এখনি চোখের জল গড়িয়ে পড়বে!
...পড়ুক না! সব আবেগ লুকিয়ে রাখতে নেই!
সাবস্ক্রাইব করুন:
লিখেছেন - Jöy Sâröwâr
- কেন? আমি কি করছি?!
- তোর একটা গুলুগুলু পিচ্চি বোন হইছে। সবাই এখন ওকেই আদর করবে!!
...ছোট্ট ধ্রুব কে এমন করেই জানানো হয় পরিবারের নতুন অতিথির আগমনী সুসংবাদ! তাই সে মোটেও আনন্দিত হয় নাই। এমনিতেই বেশ কিছু দিন হলো আম্মু কাছে নাই। আম্মু নাকি অসুস্থ, হাসপাতালের কেবিনে ভর্তি! এখন বুঝতে পারছে, সব ওই পিচ্চিটার ষড়যন্ত্র! মনে মনে ঠিক করে ফেলেছে, পিচ্চিটার দেখা পেলেই খামচি মেরে দাগ বসিয়ে দেবে। কত্ত বড় সাহস! আমার রাজত্বে ভাগ বসাবে!!
কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে ধ্রুব ভুলে গেলো সে কথা! এত্তো ছোট বাচ্চা! খামচি দিবে কি, স্পর্শ করতেই তো ভয় লাগে! আর কী নিষ্পাপ চেহারা! নরম তুলতুলে হাতের ফাঁকে আঙ্গুল ঢুকাতেই পিচ্চিটা আকঁড়ে ধরলো ধ্রুব কে। ধ্রুব আনন্দে চেঁচিয়ে উঠলো, "আম্মু, দেখো দেখো! আমার হাত ধরছে!"
ধ্রুব-র হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে বড় হয়ে গেলো উপমা। এখন তার কাজ হলো হাঁটি হাঁটি পা পা করে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়ানো আর কাঁচের জিনিস পত্র আছাড় দিলে আসলেই ভাঙে কিনা তার সত্যতা যাচাই করা! কোন কিছু ভেঙে গেলে উনি সামনের পাটির সদ্য গজানো দাঁত বের করে বিজয়ের হাসি দেয়।
প্রতিবাদ করবার উপায় নাই, কিছু বললেই ওনার চিৎকারে ভূমিকম্প শুরু হয়ে যায়। আরোও রেগে গেলে সদ্য গজানো দাঁত কে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে ভুলে না। কামড় খেয়ে ধ্রুব যখন পেটাতে যাবে তখনি "আম্মাআআআআ" সুরে টারজানের ডাক দেয়। সাথে বিচ্ছু বাহিনীর কাছে শেখা "কুত্তা বাত্তা" নামক সুশীল গালি তো আছেই।
ধ্রুব যতবারই বলে, "কুত্তার বাচ্চা না, বলো উত্তর বাড্ডা!"
উপমা ততবারই বলে, "নাআআআ! কুত্তা বাত্তা!"
ধ্রুব মনে মনে ভাবলো, এই পিচ্চি বড় হইয়া যে কি হবে!!
ধ্রুব-র আশঙ্কা মিথ্যে হয়নি। এই পিচ্চি বড় হয়ে ওর জীবনটা তামাতামা করে দিলো। বড় ভাইয়ের সাথে ঝগড়া না করলে ওর পেটের ভাত হজম হয় না। খাইতে বসলেও ঝগড়া করে, পড়তে বসলেও ঝগড়া করে, আর টিভি দেখার সময় তো করেই। ধ্রুব রিমোট হাতে নিয়ে খেলার চ্যানেল দিলেই ছ্যাত্ করে জ্বলে উঠে ...
- "আমি সিরিয়াল দেখতেছিলাম, তুমি খেলার চ্যানেল দিলা ক্যান?"
- সারা দিন হিন্দি সিরিয়াল দেখোস ক্যান? যা পড়তে যা!
- আমি দেখলে তোমার কি?
- ফকিন্নির সাহস কত্তো বড়? মুখে মুখে কথা কস! থাপড়াইয়া সব দাঁত ফালাই দিমু ... যা ভাগ!
- আম্মাআআআ...! তোমার ফাজিল পোলারে কিছু কও না ক্যান? শয়তান, বদমাইশ ব্লা ব্লা ব্লা ...
...ম্যাঁ ম্যাঁ করতে করতে বাড়ি মাথায় তোলে উপমা!
আর ধ্রুব মনে মনে আফসোস করে, কবে যে বিয়া দিয়া বোনটাকে বাসা থেকে তাড়াবে! একটু শান্তি তে থাকা যাবে তখন!
আজ ধ্রুব-র বিজয়ের দিন! আজ ওর বোনের বিয়ে। ওর বোনটা কে আজ বাসা থেকে তাড়াতে পারবে। ওর হারানো রাজত্ব ফিরে পাবে।
কিন্তু ধ্রুব মোটেও আনন্দিত নয়! দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছে, বাবা-মা কে জড়িয়ে ধরে উপমার কান্নাকাটি। বোনের হাউমাউ করে কান্না দেখে ওর বুকের গভীরে এক বিশাল শূন্যতা অনুভব করলো। হৃদয়ে কেমন যেন হাহাকার সৃষ্টি হলো! খুব ইচ্ছে হলো বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে একটু সান্ত্বনা দিতে!
কিন্তু ধ্রুব জানে কিভাবে আবেগ লুকাতে হয়! এইসব কান্নাকাটি-আবেগ -ভালোবাসা ওকে মানায় না। বোন কে মায়ের আলিঙ্গন থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে স্বামীর গাড়িতে তুলে দেবার জন্য এগিয়ে গেলো। ভাইকে সামনে পেয়ে হঠাৎ করেই উপমা "ভাইয়াআআআ" বলে জড়িয়ে ধরলো ধ্রুব কে। ধ্রুব ইতস্তত করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো...
-"আহা! পাগলী! তোর ম্যাঁ ম্যাঁ করার অভ্যাস এখনো গেলো না। কাঁদিস না আর! কাঁদলে তোকে আরোও ফকিন্নি দেখায়!!"
... "ভাইয়াআআ" বলে উপমা আরোও জোরে আকঁড়ে ধরলো ধ্রুব কে, হাউমাউ করে কাঁদতে থাকলো।
এবার ধ্রুব-র চোখটাও কেমন ঝাপসা হয়ে আসলো। বুঝতে পারছে এখনি চোখের জল গড়িয়ে পড়বে!
...পড়ুক না! সব আবেগ লুকিয়ে রাখতে নেই!
সাবস্ক্রাইব করুন:
লিখেছেন - Jöy Sâröwâr