গল্পঃ মুখোশের আড়ালে

আজকাল রাফির অফিসের সিনিয়র কলিগ মিঃ রহমান ফোনে বড্ড জ্বালাতন করছেন।
রাফিকে বলবো বলবো করে বলাও হচ্ছেনা।

রাফির সাথে আমার বিয়ের তিন মাস চলে। বিয়েটা এরেঞ্জ ম্যারেজ ই ছিলো। বিয়ের পরে শুশুর বাড়িতেই ছিলাম চাকুরীর সুবাদে রাফি বিয়ের কয়েকটা দিন ছুটি কাটিয়ে ঢাকায় ফিরে কর্মক্ষেত্রে।
 তারপরে বাসা ভাড়া নিয়ে এক মাস হলো আমায় নিয়ে এসেছে।

নতুন বিয়ে করেছে শুনে রাফির অফিস কলিগেরা আমার হাতের রান্না খাবার জন্য বায়না করেছে রাফির কাছে।

দিন পনেরো আগে রাফি তার ক্লোজ কয়েকজন অফিস কলিগ দের দাওয়াত দেয়। যদিও একা হাতে সব কিছু করতে হইছে তবুও রান্নাটা আমি ভালোই করি। দুপুরে রাফির সব অফিস কলিগেরা আসে।

সবার মুখেই আমার প্রশংসা ছিলো বলা বাহুল্য আমি সুন্দরীদের কাতারেই পড়ি সেক্ষেত্রে রাফির রঙ টা অনেক চাপা কালো বলা চলে।তা নিয়ে আমার বিয়ের আগে একটু আফছোস থাকলেও এখন আর আক্ষেপ নেই এই তিন মাসে রাফির গুন গুলি দেখে তাকে মন থেকে ভালোবাসতে বাধ্য হয়েছি।রাফি যেমন দায়িত্ববান ছেলে তার ফ্যামিলির কাছে তেমন একজন দায়িত্বশীল স্বামীও বটে তার স্ত্রীর কাছে। আমার সবকিছু মুখ ফুটে বলার আগেই সামনে হাজির করে।

রাফির সব কলিগরাই আমার রান্নার প্রশংসা করলো সবার ব্যবহার ই ভালো ভদ্রতা প্রকাশ পাচ্ছে কিন্তু একজন একটু বেশি গায়ে পড়া স্বভাবের তিনি হলেন রাফির অফিসের সিনিয়র অফিস কলিগ মিঃ রহমান।

আসার পর থেকেই দেখছি উনি রাফিকে বিভিন্ন ভাবে ছোট করার চেস্টায় ব্যস্ত।

এই যেমন রাফি আপনার ভাগ্য বটে এরকম রুপসী গুনবতি স্ত্রী পেয়েছেন বটে নাহলে আপনার পাশে ভাবিকে মানায় না ভাবী আরো ভালো হাজবেন্ড ডিজার্ভ করেন। সহজ সরল রাফির মুখে অমায়িক ভদ্রতার হাসি।

সবাই বিদায় নিলো। মিঃ রহমান যাবার আগে বলে গেলেন এই দিনটি স্পেশাল ছিলো ভুলার মত না আমি আবার আসবো। মাঝে মাঝেই আপনাকে জ্বালাতে চলে আসবো ভাবী।

উনার কথা শুনে কেমন যেনো অস্বস্থি লাগছিলো।

তারপরে হঠাৎ দিন চারেক আগে এক আননোন নাম্বার থেকে কল আসে রিসিভ করে সালাম দিতেই অপরপাশের কলার ব্যক্তিটি বলে উঠলো কি ব্যপার কেমন আছেন চিনতে পেরেছেন?

আমি কিছুক্ষন চুপ থেকে বোঝার চেস্টা করলাম কে হতে পারে?

উনি আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই বললেন আমি মিঃ রহমান, আপনার কথা খুব মনে পড়ছিলো তাই ফোন করলাম।

আমি বললাম আপনি আমার নাম্বার কোথায় পেলেন?

লোকটি বিশ্রী হাসি দিয়ে বললো যাকে মনে ধরেছে তার নাম্বার পাওয়া ব্যপার না। উনার কথা শুনে আমার রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছিলো। কোনোমতে, ও, ভালো থাকবেন বলে লাইন কেটে দিলাম।

তারপর থেকেই রাফি অফিসে থাকাকালীন মিঃ রহমান কল দিয়ে ডিস্টার্ব করতেন।আমি রিসিভ করতাম না বিভিন্ন নাম্বার থেকে কল দিতেন। রাফিকে বলিনি আমি চাইছিলাম না এসব ব্যপার গুলি তার মনে বা কর্মক্ষেত্রে প্রভাব ফেলুক কিন্তু মিঃ রহমান এর জ্বালাতন দিন দিন বাড়তেই থাকে উনি আমার ফেসবুক আইডি পর্যন্ত খুজে বের করেছেন ম্যাসেঞ্জারে নিজের পিক দিয়ে যাচ্ছেন আর ভালবাসার কবিতা লিখে দিচ্ছেন।বারবার বাজে ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন অবৈধ সম্পর্ক করার জন্য।বাজে সেক্সুয়াল এটাচড ছবি দিচ্ছিলেন। আমি উনাকে ব্লক দিয়ে দেই উনি পরে অন্য আইডি দিয়ে নক দিয়ে বলেন এজন্য রাফির চাকুরী নিয়ে টানাটানি হতে পারে উনার কথা না শুনলে।

আমাকে বারবার বুঝানোর চেস্টা করছেন যে আমি রাফির চেয়ে ভালো কাউকে ডিজার্ভ করি।
রাফির মুখে শুনেছি মিঃ রহমান বিবাহিত ৫ বছরের এক বাচ্চা মেয়েও আছে উনার স্ত্রীও যথেস্ট সুন্দরী।

সুন্দরী স্ত্রী থাকা শর্তেও অন্যের স্ত্রীর দিকে লোভাতুর দৃষ্টি দিয়েছেন মিঃ রহমান।
কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।

একদিন রাফিকে সব খুলেই বললাম মিঃ রহমান এর চরিত্রের কথা তারপরে বললাম মিঃ রহমানের স্ত্রীর সাথে দেখা করবো।

আমার কথামতো রাফি একদিন হাফবেলা অফিস করে শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে ছুটি নিয়ে চলে আসে তারপরে আমি আর রাফি দুজন মিলে মিঃ রহমানের স্ত্রীর সাথে দেখা করার জন্য যাই।
মিসেস রহমান কে সব খুলে বলি আমি আর রাফি প্রমান হিসেব কল লিস্ট, ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে ছবি, ম্যাসেজ সব দেখাই।

মিসেস রহমান সব দেখেশুনে আমাদের আশস্ত করলেন এই ব্যপারে পদক্ষেপ নিবার। আমরা বিদায় নিয়ে চলে আসলাম। রাস্তায় হাটছি দুজন সন্ধ্যা গড়িয়ে এসেছে রাফি এসে আমার হাত ধরে বললো তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে মিঃ রহমান এর অফার গ্রহন করতো তুমি কেন আমার মত কুৎসিত একজন কে এত ভালবাসলে?
আমি রাফির হাত ধরে বললাম আমার সহজ সরল মনের এই রাফিটাকেই যে মনে ধরেছে।।

সাবস্ক্রাইব করুন:

লেখিকাঃ স্মৃতি
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url