রম্যঃ ফেইজবুক স্টাটাস

মরিচ কাটতে গিয়ে ঘ্যাঁচাং করে হাত কেটে ফেললাম। তাৎক্ষণিক দৌড়ে এসে মোবাইলটা হাতে নিয়ে রক্তমাখা হাতে যথারীতি ফেসবুকে পোস্ট করে দিলাম; ভন্দুরা মরিচ কাটতে গিয়া আমার হাত কাটি গেছে। তোমরা আমার জন্য দোয়া কইরো। বিশ্বাস করবেন না রাসেল বাঈ। পোস্ট দেয়ার দু মিনিটের মাথায় চোখের সামনে হাতের কাটা ভ্যানিস হয়ে গেলো....

শরীরে প্রচন্ড জ্বর। থরথর করে শরীর কাঁপছে। তিনটা কম্বল গায়ে দিয়েও কাঁপুনি থামাতে পারছিনা। ঘরে ঔষধও নেই। মা বললো; চল ডাক্তারের কাছে নিয়া যাই। আমি কাঁপতে কাঁপতে বললাম; ডাক্তার লাগবোনা মা। ঐ রুম থাইকা আমার ফোনটা আইনা দাও। ঠিক হইয়া যাইবো। মা পাশের রুম থেকে ফোনটা এনে আমার হাতে দিলো। চোখে ঝাপসা দেখছি। আমি কাঁপা হাতে ফেসবুকে পোস্ট করে দিলাম; আমার প্রচন্ড জ্বর বন্দুরা। আমার জন্য দোয়া করো তাড়াতাড়ি জানি সুস্থ হয়ে যাই। ওমা পোস্ট প্রসবের সাথে সাথে কিসের কি জ্বর! কিসের কি কাঁপুনি? তাৎক্ষণিক কম্বল ঝাড়া মেরে উঠে নদীতে গিয়ে ঘন্টাখানিক গোসল করে আসলাম...

পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে। বছরে ৩৬৫ দিনের ৫ দিনও বই ধরে দেখিনি। প্রেম-ঠেম, আড্ডা আর নেশা নিয়ে প্রচন্ড বিজি ছিলাম। পরীক্ষার খাতায় দু লাইন লিখতে গিয়ে পাছা চুলকে ভাবতে ভাবতে ক্রিমি সব আঙুলের মাথায় নিয়ে এসেছি, তবুও দু লাইন লেখার সাধ্য হয়ে উঠেনি।
পরীক্ষার আগের দিন ফেসবুকে পোস্ট দিলাম; ভন্ডুরা কাল আমার পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে। সবাই দোয়া কইরো। পীর আউলিয়াগণ সে পোস্টের কমেন্ট দোয়ার সাগরে ভাসিয়ে দিতে লাগলো। এবার আর আমার এ+ ঠেকায় কার বাপের সাধ্য? বিশ্বাস করেন রাসেল বাঈ, কিসের কি এ+ প্লাস! পরেদিন দেখি গোল্ডেন পাইয়া বাংলাদেশের মেধা তালিকায় আমি এক নাম্বার হইছি...

ডাক্তার করুণ কণ্ঠে বললো; দেখুন আপনার দুটো কিডনিই ড্যামেজ হয়ে গেছে। আপনার হাতে সময় খুবই কম। আপনার হাতে আর মাত্র একমাস সময় আছে.... আমার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পরলো। আমি ডাক্তারের কলার চেপে বললাম; না না না এ হতে পারেনা।
আমি বাঁচবার চাই ডাক্তারসাব, আমি বাঁচবার চাই, বলেন আপনি মিথ্যা কইতাছেন।
ডাক্তার চোখের পানি মুছে বললো; দেখুন আপনি উত্তেজিত হবেন না। যে'কটা দিন আছেন, এই সামান্য কয়দিন দুনিয়াটাকে উপভোগ করুন। আমি কান্না করতে করতে রাস্তায় নেমে এলাম। এক বোতল মদ হাতে নিয়ে ঢকঢক করে গিলে ফেললাম।
এক বুক কষ্ট নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিলাম; বিদায় পৃথিবী। ভালো থেকো সবাই। ডাক্তার বলেছে আমার দুটো কিডিনিই নষ্ট হয়ে গেছে। আমি আর একমাস বাঁচবো। দোয়া করো সবাই। পোস্ট দেয়ামাত্র শেয়ার হতে লাগলো। ওলি আউলিয়াদের দোয়ার হিড়িক পরে গেলো কয়েক মিনিটেই। এক মাস, দু মাস, তিন মাস যায় কিন্তু আমি দিব্যি বেঁচে আছি। তিনমাস পর ডাক্তারের কাছে গেলাম। ডাক্তার আমায় দেখে ভূত দেখার মত চমকে উঠলেন।
বললেন; আপনি এখনো বেঁচে আছেন?
আমি বললাম; হ ডাক্তারসাব আছিতো। ফেজবুক থাকতে আপনে কি ভাবছেন আমি এতো সহজে মইরা যামু? ডাক্তারসাব হ্যাচরা টান দিয়ে নিয়ে আমায় আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিনে ঢুকিয়ে দিলো৷ কিছুক্ষণ পর রিপোর্ট দেখে ডাক্তারসাব চোখ বড়বড় করে বার বার বলতে লাগলেন; হাউ ইট পসিবল, হাউ ইট পসিবল?
আমি বললাম; কি হইছে ডাক্তারসাব?
ডাক্তার বিচলিত কণ্ঠে বললো; আরে আপনার দুটো কিডনিই তো ঠিক হয়ে গেছে, এবং ঐ কিনডি দুটোর পাশ দিয়ে আরো দুটো কিডনি গজিয়েছে। ওহ মাই গড, হাউ ইট পসিবল?
আমি ফিক করে হেসে দিলাম। বললাম ; ডাক্তারসাব ফেসবুকের পীর আউলিয়ার দোয়ায় সবই সম্ভব। কিছুই হইলেই স্ট্যাটাস দিয়া দোয়া কি আর এমনি এমনি চাই?

সাবস্ক্রাইব করুন:

লেখাঃ Arnob
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url