স্বপ্ন ভাঙা এক ভালবাসার গল্প

একা একা ছাদে বসে বসে ইইই টার কথা ভাবতেছি । আকাশের চাঁদ টার সাথে আমার ইইই টার খুব মিল । আম আর জামরুল গাছের মাঝ দিয়ে চাঁদ টা দেখা যাচ্ছে , কিন্তু মাঝে মাঝে বাতাসে গাছের পাতা গুলো দোল খাচ্ছে আর চাঁদ টা ও আড়াল হয়ে যাচ্ছে । মনে হচ্ছে যেন চাঁদ টা আমার সাথে লুকোচুরি খেলতেছে । আমার ইইই টা ও আমার সাথে এই চাদের মত লুকোচুরি খেলে , কিন্তু ইইই টা চাঁদের মত আলো আঁধারের না ভালোবাসার লুকোচুরি খেলে । ইইই টা মাঝে মাঝে আমাকে একটু ভালোবাসে আবার কষ্ট ও দেয় । কেন যে এমন করে তা ওই ইইই আর আল্লাহ ই জানে আমি জানি না

ও ইইই এর কথাই তো বলিনি, আমি যাকে খুব ভালোবাসি তাকে আদর করে ইইই বলি । ওই অন্য সবার মত জান, পাখি , ময়না , টিয়া এই সব আমার বলতে ইচ্ছা করে না আর করলে ও বলি না । সবাই যা বলে আমি ও যদি তাই বলি তাহলে আমার ভালোবাসা টা আমার কাছে কেমন সস্তা সস্তা লাগে, তাই আমি ওকে ওই নাম দিছি । কিন্তু কয়দিন হল ইইই টা আমার সাথে কথাই বলে না, শুধু শুধু কোন কারন ছাড়াই আমার সাথে এমন করতেছে ।

ইইই টা তো আমাকে অল্প অল্প ভালোবাসে , সেদিন মনে হয় একটু বেশি আবেগি হয়ে একটু বেশি ভালোবাসছিল তাই আমি বলছিলাম যে তুমি আমারে এত ভালবেসো না, তুমি বেশি ভালবাসলে আমার চোখে পানি চলে আসে । আর এতেই সে ভালোবাসার বরাদ্দ টাকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আমার সাথে কথা পর্যন্ত বন্ধ করে দেছে । আচ্ছা বলেন , যে জায়গা ২০ কেজি জিনিস ধরে সেই জায়গা যদি ৩০-৪০ কেজি জিনিস দেওয়া হয় তাহলে প্রবলেম তো একটু হবেই তাই না ? তাহলে আমার কি দোষ

আগে আমি স্বপ্ন টপ্ন দেখতাম না , আজ কাল ইইই টার জন্য খুব বেশি চিন্তা হয় তাই যত সময় জেগে থাকি ওর কথা ভাবি আর ঘুমালে ওকে নিয়েই স্বপ্ন দেখি । স্বপ্ন মাঝে মাঝে ভালো হয় আবার খারাপ ও হয় , আসলে স্বপ্নের তো কোন ব্রেক নাই যে খারাপ দিকে গেলে থামায় দিবো । তাই স্বপ্ন ওর মত চলে আর আমি আমার মত , এই ভাবেই চলতেছিল দিন কাল ......

ওই ইইই টা আমার কোন কথাই শোনে না , আমি বলি এক রকম আর সে করে এক রকম । এই তো সেদিন প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে হঠাৎ একটা মেসেজ আসল “ আমি বৃষ্টি তে ভিজতেছি খুব মজা লাগতেছে ।” আমি তারে বার বার বলি সব সময় সাবধানে থাকবা । কিন্তু কে শোনে কার কথা ! আমি মুটামুটি নিশ্চিত ছিলাম যে জ্বর জারি কিছু একটা বাধাবেই । একটু পর আবার এসএমএস আসলো “ আমি আজকে খুব মজা করছি তুমি কিছু করনি ? ”
হুমম, আমি ও খুব মজা করছি । একটু আগে সিটি কর্পারেশন ড্রেনে সাতার কাটে আসলাম , খুব মজা পাইছি ...
ফাজিল ছেলে একটা ।
তখন এই পর্যন্তই চলল।

ওই দিন রাতে ফোন দিলাম , ফোন ধরার কোন নাম নেই । কয়েক বার ট্রাই করে না পেয়ে ফোন টা রেখে দিতে গেলাম আর সাথে সাথে মেসেজ আসল উনার খুব জ্বর হয়েছে । তখন আমার মেজাজ টাও খুব খারাপ হল , যেহেতু ফোন ধরতেছে না তাই মেসেজেই একটু রাগ দেখালাম মানে একটু বকা ঝকা দিলাম । আর এর ফলশ্রুতিতে তার ফোন টাও অফ হয়ে গেল ।
একে ইইই টার জ্বর তার উপর আবার কথা ও বলতে পারতেছি না , তাই খুব খারাপ লাগতেছিল ইইই টার জন্য ।

কেন যে ওকে বকা দিতে গেলাম , মেয়েটা এমনি তেই জ্বরে কষ্ট পাচ্ছে তার উপর আবার আমি কষ্ট দিলাম । নিজেকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছা করতেছে । অনেক রাত হয়ে গেছে তবুও ঘুম আসতেছে না । ফোনে আবার একটা মেসেজ আসল ...
“ তুমি আমারে অত বকা দিলে কেন ? তুমি বকা দিলে আমি কষ্ট পাই বোঝ না ? আমি তুমারে অনেক ভালোবাসি , আমারে আর বকা দিও না । আমার খুব কষ্ট হচ্ছে , তুমি আমার কাছে থাকলে খুব ভালো লাগত ।”
একটা দরিদ্র লোক যখন অনেক টাকা এক সাথে পায় তখন খুশি তে তার চোখে পানি চলে আসে , আমি হলাম দরিদ্র প্রেমিক , এত ভালোবাসা সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই তাই আমার চোখে ও পানি চলে আসল । কিন্তু তা খুশিতে নাকি কষ্টে তা আমি জানি না । । ।

সাবস্ক্রাইব করুন:

সেই রাত টা অনেক কষ্টে কাটালাম, তারপর পরের দিন সকালে ইইই টার কাছে গেলাম ।
একটা বাসায় ও আর ওর সাথে পড়ে কয়জন এক সাথে থাকে । মেস এর মত সিস্টেম এর কি। অনেক বার বেল দেওয়ার পর দরজা টা খুলা হল । দেখলাম আমার ইইই টা দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে আর ওর দুইটা মায়াবী চোখ আমার দিকে তাকায় আছে । এই চোখ দুটো আমার জীবনের সব থেকে মূল্যবান সম্পদ ,আমি নিজেকে ভুলে যেতে পারি কিন্তু ওই চোখ দুটোর মায়া ভুলার ক্ষমতা আমার নেই । ওর চোখের দিকে তাকালে আমি সব ভুলে যায় , তখন যদি কেউ আমার মাথা টা ও কেটে নিয়ে যায় তবুও আমি বুঝতে পারব না । কিন্তু আজ ওর চোখ দুটো বড্ড বেশি লাল আর চাহনি টা অনেক করুণ ছিল । ওর চোখ দুটো এমনিতেই আমার হৃদয় তোলপাড় করে তোলে , আজকে আরও বেশি করতেছিল।

ঘরে ঢুকে ইইই টা চুপ করে বসে পড়ল , আমি বললাম “ কেমন আছো ?”
তার কোন সাড়া শব্দ নেই , বুঝলাম রাতের রাগের প্রতিশোধ টা নেওয়া হচ্ছে । আমি জানি ও আমার উপর রাগ করে থাকতে পারবে না । ভালোবাসার মানুষের সাথে রাগ করে থাকা হাতের উপর আগুন নিয়ে রাখার চেয়েও কঠিন কাজ । তাই আমি আর বেশি কিছু বললাম না , দেখি কত সময় রাগ করে থাকতে পারে ।
আমার সাথে কথা না বলে চুপ করে বসেই থাকল , আমিও কথা না বলে ওর কপালে হাত দিয়ে দেখলাম বেশ গরম । খুব কম মেসেই থারমোমিটার থাকে , তাই অনেক খুজেও কিছু পেলাম না । তারপর আবার বাইরে আসলাম তার আগে খাবার দাবার এর অবস্থা একটু দেখে নিলাম । মেসে সকালে কেউ খাওয়া দাওয়া করে না , যে যার মত বাইরে চলে যায় । তাই ওর জ্বর থাকলেও যে সকালে খাওয়া দাওয়া হয়নি তা ভালই বুঝলাম ।

জ্বর মেপে দেখি ১০২ এর একটু বেশি , তারমানে অনেক জ্বর ই । টেবিল এর উপর একটা প্রেসকিপসন আর কিছু ওষুধ দেখলাম। কিন্তু ওষুধ গুলর একটা ও খাওয়া হয়নি । আর সকালের ওষুধ গুলো সব খাওয়ার পরে খাওয়া লাগবে । আমি ও একা একা থাকি তাই রান্না বান্না করার অভ্যাস আছে । অল্প সময় আর ভিতরে তাই আলু ভর্তা আর ডিম ভাজি করলাম ।
এখন পর্যন্ত সে আমার চলা ফেরার উপর সামান্য দৃষ্টিপাত ছাড়া আমার সাথে কোন কথা বলেনি । খাবার রেডি করে তার সামনে দিলাম কিন্তু সে চুপচাপ বসেই থাকলো ।
বকা দিয়ে দোষ আমি করেছি খাবার তো আর কোন দোষ করে নি , তাই খাবার টা খেয়ে নেও । এইভাবে একটু বোঝালাম কিন্তু কাজ হল না ।
রাতে তোমার জ্বর হইছে শোনার পর খারাপ লাগতেছিল তাই রাতে কিছু খাইনি, সকালে ও কিছু না খেয়ে তোমার কাছে চলে আসছি ,এখন তুমি খাবা কিনা তুমি জানো ।

সে কোন কথা না বলে আমার দিকে তাকায় এই থাকল । তারপর তার মুখে এক গাল ভাত দিলাম , কোন কথা না বলে সে গ্রহন করল । তারমানে আমি তাকে খাওয়ায় দেই সেও এটা চাচ্ছিল কিন্তু মুখে বলতেছিল না । এই জন্য লোকে বলে মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফাটে না ।
কিন্তু কথাই আছে ঠেলার নাম ,বাবা জি ! ঠেলায় পড়লে বিড়াল ও গাছে ওঠে । আলু ভর্তা একটু শুকনো তো তাই গলায় আটকে গেছে , আমার ইইই ও এখন ঠেলায় পড়ে একটা কথাই বলল , আর টা হলও “ পানি খাবো” ।
ওর কথা শুনে আমি একটু হেঁসে দিলাম আর তা দেখে ইইই ও একটু না হেঁসে পারল না । কিন্তু তবুও আমার সাথে আর কথা বলল না ।
যাই হোক তারপর খাবার খাইয়ে ওষুধ খাওয়ালাম । আবার জ্বর মেপে দেখি যে জ্বর তা একটু কমছে । মনে মনে খুশি হলাম যে ভালোবাসার কাছে জ্বর ও হার মানল । তারপর ইইই তার কপালে হাত রাখলাম ।
এখন কি একটু ভালো লাগতেছে ?
সে চুপ করেই থাকলো ।

ভাত খাওয়ালাম , ওষুধ খাওয়ালাম , পানি খাওয়ালাম এত কিছু করলাম তাও আমার সাথে কথা বলবা না ? একটা গাছের জন্য ও যদি এত কিছু করতাম তাও মনে হয় গাছটা আমারে চুমো খাইত , আর তুমি ! ঠিক আছে লাগবে না কথা বলা , আমি চলে যাচ্ছি ।

আমি ওর পাস থেকে উঠে দরজা পর্যন্ত মাত্র গেছি আর তখন পিছন থেকে শুনতে পেলাম “ তুমার হাত টা আমার কপালে রাখো , আমার খুব ভালো লাগতেছে ।”
আমি ফিরে যেয়ে ওর পাশে বসলাম । আমার ইইই টা আমার চোখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকায় আছে ।
কি করব আর একবার বল ,
পারব না ।
তাহলে একবার I LOVE YOU বল ।
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই সে আমার উপর ঝাঁপায় পড়ল ।
“ কুত্তা , ফাজিল ,বেয়াদপ আমারে আর কোন দিন বকবা , বল বকবা ? ” বলতে থাকলো আর আমার বুকে কিল ঘুসি মারতে থাকলো ।
তারপর আমার গলা জড়ায় ধরে বার বার I LOVE YOU বলতে থাকলো ।

সাবস্ক্রাইব করুন:

আমি ও ভালবাসায় সায় দিতে ইইই টাকে জড়ায় ধরবো ঠিক তখন ই মাথার কাছে কিছু একটা অনুভব করলাম ।

আম্মু মাথা ধরে ঠেলতেছে আর বলতেছে উঠে পড়ো বাবা , তাড়াতাড়ি গোসল করে পাঞ্জাবি টা পরে নাও , নামাজ পড়তে যাওয়া লাগবে । তোমার আব্বু রেডি হয়ে বসে আছে ।

এই বাপ মার একটা চিরন্তন সমস্যা হল ছেলে মেয়ে যখন ই একটু প্রেম ভালোবাসা করবে তখন ই বাধা দেওয়া । সে প্রেম ভালোবাসা বাস্তবে হোক বা স্বপ্নে , বাধা বাপ মা দিবেই ...

কি আর করার স্বপ্ন ভাঙা এক ভালোবাসা নিয়ে ঈদের দিনটা শুরু হল ।
দিন গুলো আজো এই ভাবেই চলতেছে...
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url