গল্পঃ মেঘের পরে রোদ
আকাশী নীল শাড়ি,কানে সোনার জুমকো,কপালে বড় নীল টিপ,হাতে নীল রেশমি চুড়ি আর চোখে গাঢ় করে মমতা মাখা কাজল টেনে ঘণ্টাখানেক ধরে অপেক্ষায় তন্বী।দিনটি ২রা মার্চ,আজ ওদের মানে তন্বী আর প্রিয়ন্তের ২য় বিবাহবার্ষিকী।দিনটি একদিকে খুব সুখের অপরদিকে এই দিনটি কষ্টও দেয় তন্বীকে।এই দিনে তার বুনা হাজারটা স্বপ্ন একধাপ এগিয়ে যায় পূরণের পথে।যাকে নিয়ে এত এত স্বপ্ন দেখা তাকে নিজের করে পাওয়ার সুখটা নিশ্চয় হাতের মুঠোয় চাঁদ পাওয়ার মতই।কিন্তু এই দিনেই তন্বীকে তার অসম্ভব প্রিয় দুটি জিনিস থেকে একটিকে বেঁচে নিতে হয়।অনেক বুঝানোর পর মা রাজি হলেও তন্বীর বাবা কিছুতেই বর হিসেবে মেনে নেয়নি প্রিয়ন্তকে।কেনই বা মেনে নিবে?সাধারণ ঘরের ছেলে প্রিয়ন্ত,কতটুকুই দিতে পারবে তন্বীকে।তার উপর দুইবোনের ভরণপোষণের দায়িত্বও কাঁধে।শেষ চেষ্টা করেও যখন বাবাকে বুঝাতে ব্যর্থ তন্বী তখন না চাইতেও ঘর থেকে বের হয়ে যেতে হয় তাকে।প্রিয়ন্তের হাত ধরে অজানায় পাড়ি দেওয়ার স্বপ্নটা দেখলেও ওইদিন বুঝেছিল বাবা মাকে কতটা ভালবাসে ও।সকাল থেকে চমকে উঠার জন্যে প্রস্তুত তন্বী কারণ রাতে একবারের জন্যেও উইশ করেনি প্রিয়ন্ত।সারাক্ষণই মনে হচ্ছিল এই বুঝি প্রিয়ন্ত চলে এসেছে বাসায়।কিন্তু না আসেনি ও।আচ্ছা মানুষটার মনে আছে তো আজকের দিনটার কথা??ভাবতে থাকে তন্বী।
-----অপেক্ষা ব্যাপারটা তন্বীর মোটেও পছন্দ না হলেও আজ খারাপ লাগছে না অপেক্ষায়।এই অপেক্ষায় কোনো অনিশ্চয়তা নেই।শ্যাওলা পড়া সৃতি গুলোকে স্বল্প পরিমাণ সূর্যের আলো দেবার মতই।শুরুটা মোটেও ভালো ছিলনা ওদের।অল্প বেতনের টাকায় ৬জনের একটা পরিবারের দেখভাল কিছুটা কঠিনই বটে।নিজের করে বুনা ছোটছোট স্বপ্ন গুলোকেও বিসর্জন দিতে হয়েছে তাকে।কিন্তু এত কিছুর মাঝেও একা লাগেনি,কখনো মনে হয়নি দুটি প্রিয় জিনিসের মাঝে প্রিয়ন্তকে বেছে নিয়ে ভুল করেছে ও।ঘরে অসংখ্য কাজের লোক থাকাতে বিয়ের আগে কখনোই কিছু করে খেতে হয়নি তন্বীর।কিন্তু এখন পুরো পরিবারের কাজ একাই সামলায় ও।অলস দুপুর হয়না কোনোদিন কিংবা ব্যস্ততা থেকে ফুরসত।ক্লান্ত নিস্তর শরীর নিয়ে যখন বুঝতে পারে সে কারো পুরো পৃথিবীটা দখল করে আছে তখন আর পরের দিনের কাজ করতে খারাপ লাগে না ওর।তন্বী বুঝতে পারে পুরোপুরি প্রিয়ন্তকে,মানুষটাও যে ওর মতই সারাদিন কাজে ডুবে থাকে জানে ও।
------বিয়ের শুরুতে একটা ছোট চাকরি করলেও এখন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি প্রিয়ন্তের।দুই বোনের বিয়ে দেওয়া শেষ আর মা-বাবাও গত বছর একটা সড়ক দুর্ঘটনায় অজানায় পাড়ি জমায়।এখন তার জীবনের মানে শুধুই তন্বী আর একটাই চাওয়া ওর,তন্বীর বিসর্জন দেওয়া সবকয়টা স্বপ্ন পূরণ করা।দিনের শুরুতে শিশির ভেজা ঘাসে পা ভেজানো থেকে শুরু করে আকাশ ছুঁয়া পাহাড় দেখা পর্যন্ত সব পূরণ করা চাই।কি করে পারলো এই মেয়েটা একটা সাধারণ ছেলের জন্যে পরিবার ছাড়ার মত এতবড় ত্যাগ স্বীকার করতে।তন্বীর খুব ইচ্ছে ছিল বিয়ের পরপরই একটা ফুটফুটে মেয়ে বাবু হবে ওর কিন্তু সংসারের কথা ভেবে মেয়েটা আজ অব্দি একবারের জন্যেও প্রকাশ করেনি ইচ্ছাটা।ঘোরাঘুরির শখ ছিল খুব তন্বীর কিন্তু গুনে বের করা যাবে বিয়ের পর কয়টা দিন ওকে নিয়ে ঘুরেছে প্রিয়ন্ত।সব কিছু নিয়ে এত ব্যস্ত ছিল যে গত বিবাহ বার্ষিকী ভুলেই গিয়েছিল।এত কিছুর পরও মেয়েটা একটা দিনের জন্যেও অভিযোগের সুরে কথা বলেনি কোনোদিন।
-------সময় এসেছে প্রিয়ন্তর তার পুরো পৃথিবীটার জন্যে কিছু করার।আজকের দিনটির জন্যে দীর্ঘ অনেক টা সময় অপেক্ষা করেছে ও।আজ থেকে দুইমাস আগে যেদিন জানতে পেরেছিল তাদের ভালোবাসার সংসারে অতিথির আগমন ঘটবে সেদিন থেকেই চেষ্টা সমস্থ টা ঠিক করার।তন্বীর বাবাকেও রাজি করানো শেষ।নানা ডাকবে কেও,খানিকটা ভাবার পর আর ফিরিয়ে দিতে পারেনি প্রিয়ন্তকে।ভুলে যায়নি তন্বীর কাছের বান্ধবীদের দাওয়াত করতে।তন্বীর সবচেয়ে প্রিয় জায়গাটায় একটা ছোট্ট অনুষ্ঠান যেখানে তন্বীর ভালো থাকার সব উপকরন থাকবে।
সাবস্ক্রাইব করুন:
-------ভাবনায় ছেদ পড়ে ঘড়ির আওয়াজে,একি প্রায় ৯টা বাজতে চলল কিন্তু প্রিয়ন্ত আসেনি এখনও।চিন্তায় পড়ে যায় তন্বী,কোনো বিপদ হলনা তো আবার??ভাবতে ভাবতেই জানালার পাশে তন্বী।ওইতো প্রিয়ন্তের অফিসের গাড়িটা,যাক জনাবের আসা হয়েছে তাহলে।দৌড়ে নিচে চলে যায় তন্বী কিন্তু না মানুষ টা না এসেছে শুধু গাড়িটাই।ড্রাইভার বলল অফিসে একটা অনুষ্ঠান থাকায় যেতে বলেছে তন্বীকে।তন্বীর বুঝতে বাকি থাকেনা মানুষটার মনে নেই আজকের দিনটির কথা এইবারও।দু'ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো চোখ বেয়ে।মনমরা ভাব নিয়েই গাড়িতে উঠে বসে ও।মনে পড়তে থাকে আগের সব কথা।অন্য কিছুনা প্রিয়ন্তের কাছে একটু ভালোবাসাই আশা করে ও।যা দিয়ে পুরো পৃথিবীটা ডেলে সাজাবে ও।তন্বী,প্রিয়ন্ত আর একটা বাবু ছোট্ট সুখময় একটা সংসার।তারপরও কেনো আশাহত হতে হবে তাকে??
-------গাড়ি থেমে আছে অনেকক্ষণ।তন্বী ভাবনায় এতটায় ডুবে ছিল যে ড্রাইভারের ডাক শুনতে পায়নি ও।কিন্তু একি এটাতো প্রিয়ন্তের অফিস না,ওর সবচেয়ে পছন্দের জায়গা এইটা।যেখান থেকে শুরু হয়েছিলো ওর আর প্রিয়ন্তের পথচলা।এই রেস্টুরেন্টেই হাতটা ধরে জানতে চেয়েছিল প্রিয়ন্ত,ওর সাথে মিলে একি স্বপ্ন দেখবে কিনা??একসাথে কাঁদবে কিনা??খুব কষ্টে ওর শার্টটাই ভিজিয়ে দিবে কিনা??জানতে চেয়েছিল বিয়ের পর যে ফুটফুটে বাবুর স্বপ্নবুনা ওর,তার বাবা হতে দিবে কিনা??এই হাতটা শেষ অব্দি ধরে থাকতে দিবে কিনা??সামনে এগোয় ও কিন্তু একি ওর বাবা-মাও যে উপস্তিত।বুঝতে বাকি থাকেনা মানুষটার কান্ড সব।হতে পারে একটু দেরিতে কিন্তু তন্বীর পুরো সত্তাটায় সুখ দিয়ে দিয়েছে মানুষটা।আর কিচ্ছু চায়না তন্বী জীবনে।শুধু পথচলায় ক্লান্ত হয়ে গেলে চোখ ফিরিয়ে যেনো এই পাগল ছেলেটাকেই পাশে পায়।
--------চারিদিকে চোখ বুলাচ্ছে তন্বী কিন্তু মানুষটা কই??এক কোনায় দাঁড়িয়ে ছিল প্রিয়ন্ত কারণ তন্বীর চোখের পানি সহ্য হয়না ছেলেটার।ও জানত চোখ ঝাপসা হয়ে এলে ওর শার্টটাই ভিজানো হবে আজকে।জড়িয়ে ধরে এর আগেও কেঁদেছে তন্বী কিন্তু না আজকের পানিটা কষ্ট দিচ্ছেনা প্রিয়ন্তকে।এই পাগলী মেয়েটাকে এত খুশি দিতে পেরে নিজেও কয়েক ফোঁটা জল বিসর্জন দেয়।অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফেরার পথে তন্বীও একটা কাগজ ধরিয়ে দেয় প্রিয়ন্তের হাতে।সম্বোধন বিহিন ওই চিঠিটাই লিখা ছিল......
........."আমি তোর পৃথিবীর একচ্ছত্র রানী হতে চাই।দুঃস্বপ্নে ঘুম ভাঙ্গার পর বালিশে না শুয়ে তোর বুকে মাথা রেখে ঘুমোতে চাই।সকল কান্নায় ভিজাবো বলে তোর শার্ট টাই চাই।তোর চোখে চোখ রেখেই বেচে থাকার মানে বুঝতে চাই।চাই তোর না বলা কথা গুলো বুঝতে যাতে অলিখিত ভাবেও সুস্পষ্ট ভালোবাসা বুঝানো থাকে।আমি চাই তোর হাত ধরেই সামনে আগাতে যাতে পড়ে যাওয়ার ভয় না থাকে।পাশে রাখিস?তোর ভালবাসতে না ইচ্ছে হলে বাসিস না,আমাকে সুযোগ দিলেই হবে।এতটা ভালবাসবো যে দুইজনের জন্যে বড্ড বেশিই হয়ে যাবে।আমার পৃথিবীতে আমি আর আমার অস্তিত্ব খুঁজতে চাইনা,চাই পুরো সত্তায় তোর সাবলীল অবস্থান।দিবি তো আমায়??বল,দিবিনা????"
-----------চোখের পানি আটকানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে যায় প্রিয়ন্ত কিন্তু অবাধ্য চোখ দুটো আজ বেসামাল হয়ে পরেছে।একি পাশে বসা পাগলীটাও যে কাঁদছে।বুকে টেনে নেয় পুরো পৃথিবীটাকে,জানালার কাঁচ উঠিয়ে দিতে বলা হয় ড্রাইভারকে।ওরা চায়না ওদের চোখের পানি দেখে কেউ ওদের ভুল করে দুঃখী ভাবুক।ওদের পৃথিবীতে আজ দুঃখের জন্যে কোনো জায়গা বরাদ্দ নেই,দুঃখ আসতে হলে কষ্ট করে আসতে হবে,খুব কষ্ট......!!!
সাবস্ক্রাইব করুন:
by- শাহনাজ শানু
-----অপেক্ষা ব্যাপারটা তন্বীর মোটেও পছন্দ না হলেও আজ খারাপ লাগছে না অপেক্ষায়।এই অপেক্ষায় কোনো অনিশ্চয়তা নেই।শ্যাওলা পড়া সৃতি গুলোকে স্বল্প পরিমাণ সূর্যের আলো দেবার মতই।শুরুটা মোটেও ভালো ছিলনা ওদের।অল্প বেতনের টাকায় ৬জনের একটা পরিবারের দেখভাল কিছুটা কঠিনই বটে।নিজের করে বুনা ছোটছোট স্বপ্ন গুলোকেও বিসর্জন দিতে হয়েছে তাকে।কিন্তু এত কিছুর মাঝেও একা লাগেনি,কখনো মনে হয়নি দুটি প্রিয় জিনিসের মাঝে প্রিয়ন্তকে বেছে নিয়ে ভুল করেছে ও।ঘরে অসংখ্য কাজের লোক থাকাতে বিয়ের আগে কখনোই কিছু করে খেতে হয়নি তন্বীর।কিন্তু এখন পুরো পরিবারের কাজ একাই সামলায় ও।অলস দুপুর হয়না কোনোদিন কিংবা ব্যস্ততা থেকে ফুরসত।ক্লান্ত নিস্তর শরীর নিয়ে যখন বুঝতে পারে সে কারো পুরো পৃথিবীটা দখল করে আছে তখন আর পরের দিনের কাজ করতে খারাপ লাগে না ওর।তন্বী বুঝতে পারে পুরোপুরি প্রিয়ন্তকে,মানুষটাও যে ওর মতই সারাদিন কাজে ডুবে থাকে জানে ও।
------বিয়ের শুরুতে একটা ছোট চাকরি করলেও এখন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি প্রিয়ন্তের।দুই বোনের বিয়ে দেওয়া শেষ আর মা-বাবাও গত বছর একটা সড়ক দুর্ঘটনায় অজানায় পাড়ি জমায়।এখন তার জীবনের মানে শুধুই তন্বী আর একটাই চাওয়া ওর,তন্বীর বিসর্জন দেওয়া সবকয়টা স্বপ্ন পূরণ করা।দিনের শুরুতে শিশির ভেজা ঘাসে পা ভেজানো থেকে শুরু করে আকাশ ছুঁয়া পাহাড় দেখা পর্যন্ত সব পূরণ করা চাই।কি করে পারলো এই মেয়েটা একটা সাধারণ ছেলের জন্যে পরিবার ছাড়ার মত এতবড় ত্যাগ স্বীকার করতে।তন্বীর খুব ইচ্ছে ছিল বিয়ের পরপরই একটা ফুটফুটে মেয়ে বাবু হবে ওর কিন্তু সংসারের কথা ভেবে মেয়েটা আজ অব্দি একবারের জন্যেও প্রকাশ করেনি ইচ্ছাটা।ঘোরাঘুরির শখ ছিল খুব তন্বীর কিন্তু গুনে বের করা যাবে বিয়ের পর কয়টা দিন ওকে নিয়ে ঘুরেছে প্রিয়ন্ত।সব কিছু নিয়ে এত ব্যস্ত ছিল যে গত বিবাহ বার্ষিকী ভুলেই গিয়েছিল।এত কিছুর পরও মেয়েটা একটা দিনের জন্যেও অভিযোগের সুরে কথা বলেনি কোনোদিন।
-------সময় এসেছে প্রিয়ন্তর তার পুরো পৃথিবীটার জন্যে কিছু করার।আজকের দিনটির জন্যে দীর্ঘ অনেক টা সময় অপেক্ষা করেছে ও।আজ থেকে দুইমাস আগে যেদিন জানতে পেরেছিল তাদের ভালোবাসার সংসারে অতিথির আগমন ঘটবে সেদিন থেকেই চেষ্টা সমস্থ টা ঠিক করার।তন্বীর বাবাকেও রাজি করানো শেষ।নানা ডাকবে কেও,খানিকটা ভাবার পর আর ফিরিয়ে দিতে পারেনি প্রিয়ন্তকে।ভুলে যায়নি তন্বীর কাছের বান্ধবীদের দাওয়াত করতে।তন্বীর সবচেয়ে প্রিয় জায়গাটায় একটা ছোট্ট অনুষ্ঠান যেখানে তন্বীর ভালো থাকার সব উপকরন থাকবে।
সাবস্ক্রাইব করুন:
-------ভাবনায় ছেদ পড়ে ঘড়ির আওয়াজে,একি প্রায় ৯টা বাজতে চলল কিন্তু প্রিয়ন্ত আসেনি এখনও।চিন্তায় পড়ে যায় তন্বী,কোনো বিপদ হলনা তো আবার??ভাবতে ভাবতেই জানালার পাশে তন্বী।ওইতো প্রিয়ন্তের অফিসের গাড়িটা,যাক জনাবের আসা হয়েছে তাহলে।দৌড়ে নিচে চলে যায় তন্বী কিন্তু না মানুষ টা না এসেছে শুধু গাড়িটাই।ড্রাইভার বলল অফিসে একটা অনুষ্ঠান থাকায় যেতে বলেছে তন্বীকে।তন্বীর বুঝতে বাকি থাকেনা মানুষটার মনে নেই আজকের দিনটির কথা এইবারও।দু'ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো চোখ বেয়ে।মনমরা ভাব নিয়েই গাড়িতে উঠে বসে ও।মনে পড়তে থাকে আগের সব কথা।অন্য কিছুনা প্রিয়ন্তের কাছে একটু ভালোবাসাই আশা করে ও।যা দিয়ে পুরো পৃথিবীটা ডেলে সাজাবে ও।তন্বী,প্রিয়ন্ত আর একটা বাবু ছোট্ট সুখময় একটা সংসার।তারপরও কেনো আশাহত হতে হবে তাকে??
-------গাড়ি থেমে আছে অনেকক্ষণ।তন্বী ভাবনায় এতটায় ডুবে ছিল যে ড্রাইভারের ডাক শুনতে পায়নি ও।কিন্তু একি এটাতো প্রিয়ন্তের অফিস না,ওর সবচেয়ে পছন্দের জায়গা এইটা।যেখান থেকে শুরু হয়েছিলো ওর আর প্রিয়ন্তের পথচলা।এই রেস্টুরেন্টেই হাতটা ধরে জানতে চেয়েছিল প্রিয়ন্ত,ওর সাথে মিলে একি স্বপ্ন দেখবে কিনা??একসাথে কাঁদবে কিনা??খুব কষ্টে ওর শার্টটাই ভিজিয়ে দিবে কিনা??জানতে চেয়েছিল বিয়ের পর যে ফুটফুটে বাবুর স্বপ্নবুনা ওর,তার বাবা হতে দিবে কিনা??এই হাতটা শেষ অব্দি ধরে থাকতে দিবে কিনা??সামনে এগোয় ও কিন্তু একি ওর বাবা-মাও যে উপস্তিত।বুঝতে বাকি থাকেনা মানুষটার কান্ড সব।হতে পারে একটু দেরিতে কিন্তু তন্বীর পুরো সত্তাটায় সুখ দিয়ে দিয়েছে মানুষটা।আর কিচ্ছু চায়না তন্বী জীবনে।শুধু পথচলায় ক্লান্ত হয়ে গেলে চোখ ফিরিয়ে যেনো এই পাগল ছেলেটাকেই পাশে পায়।
--------চারিদিকে চোখ বুলাচ্ছে তন্বী কিন্তু মানুষটা কই??এক কোনায় দাঁড়িয়ে ছিল প্রিয়ন্ত কারণ তন্বীর চোখের পানি সহ্য হয়না ছেলেটার।ও জানত চোখ ঝাপসা হয়ে এলে ওর শার্টটাই ভিজানো হবে আজকে।জড়িয়ে ধরে এর আগেও কেঁদেছে তন্বী কিন্তু না আজকের পানিটা কষ্ট দিচ্ছেনা প্রিয়ন্তকে।এই পাগলী মেয়েটাকে এত খুশি দিতে পেরে নিজেও কয়েক ফোঁটা জল বিসর্জন দেয়।অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফেরার পথে তন্বীও একটা কাগজ ধরিয়ে দেয় প্রিয়ন্তের হাতে।সম্বোধন বিহিন ওই চিঠিটাই লিখা ছিল......
........."আমি তোর পৃথিবীর একচ্ছত্র রানী হতে চাই।দুঃস্বপ্নে ঘুম ভাঙ্গার পর বালিশে না শুয়ে তোর বুকে মাথা রেখে ঘুমোতে চাই।সকল কান্নায় ভিজাবো বলে তোর শার্ট টাই চাই।তোর চোখে চোখ রেখেই বেচে থাকার মানে বুঝতে চাই।চাই তোর না বলা কথা গুলো বুঝতে যাতে অলিখিত ভাবেও সুস্পষ্ট ভালোবাসা বুঝানো থাকে।আমি চাই তোর হাত ধরেই সামনে আগাতে যাতে পড়ে যাওয়ার ভয় না থাকে।পাশে রাখিস?তোর ভালবাসতে না ইচ্ছে হলে বাসিস না,আমাকে সুযোগ দিলেই হবে।এতটা ভালবাসবো যে দুইজনের জন্যে বড্ড বেশিই হয়ে যাবে।আমার পৃথিবীতে আমি আর আমার অস্তিত্ব খুঁজতে চাইনা,চাই পুরো সত্তায় তোর সাবলীল অবস্থান।দিবি তো আমায়??বল,দিবিনা????"
-----------চোখের পানি আটকানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে যায় প্রিয়ন্ত কিন্তু অবাধ্য চোখ দুটো আজ বেসামাল হয়ে পরেছে।একি পাশে বসা পাগলীটাও যে কাঁদছে।বুকে টেনে নেয় পুরো পৃথিবীটাকে,জানালার কাঁচ উঠিয়ে দিতে বলা হয় ড্রাইভারকে।ওরা চায়না ওদের চোখের পানি দেখে কেউ ওদের ভুল করে দুঃখী ভাবুক।ওদের পৃথিবীতে আজ দুঃখের জন্যে কোনো জায়গা বরাদ্দ নেই,দুঃখ আসতে হলে কষ্ট করে আসতে হবে,খুব কষ্ট......!!!
সাবস্ক্রাইব করুন: