গল্পঃ শেষ খবর পাওয়া যায় নি

প্রতিদিন এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে ভীষণ ভয় করে আবিরের ।আসলে ঠিক ভয় না ,ভয়ের সাথে লজ্জার মিশ্রনও সমানুপাতিক ।ঠিক ৪টা ৩মিনিটে মহুয়া তার বান্ধবীকে নিয়ে রিক্সায় যাবে এখান থেকে ।তাই আবির মসজিদের কোনে প্রতি শনি সোম ও বুধবার দাঁড়িয়ে থাকে ।অপেক্ষায় থাকে কোচিং শেষে কখন মহুয়া এ পথ দিয়ে যাবে আর কখন ঐ মায়াবী মিষ্টি মুখটা একটু দেখবে ।

মহুয়া ইদানিং লক্ষ্য করছে একটা ভ্যাবলামার্কা ছেলে প্রায় প্রতিদিনই একটা নির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে আর দূর থেকে একপলকে চেয়ে থাকে ওর দিকে ।কিন্তু কাছে এলেই চোখ অন্যদিকে সরিয়ে নেয় ।এরকম চশমা পড়া আর তেল দেয়া চুলের আঁতেলমার্কা ছেলেদের একটুও দেখতে পারে না মহুয়া ।পছন্দ করলে সামনাসামনি এসে বললেই তো পারে ।এদিক থেকে জিসানকে ভাল লাগে মহুয়ার ।প্রায়ই ওদের কোচিংএর সামনে বাইকে সজোরে যেতে দেখা যায় জিসানকে ।জিসানকে চুলে স্পাইক ,চোখে কালো সানগ্লাস আর কালো টিশার্টে অনেক স্মার্ট লাগে সদ্য দশম শ্রেনীতে পড়ুয়া মহুয়ার কাছে ।একদিন মহুয়াকে রিক্সাও ঠিক করে দিয়েছিল জিসান ।লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া মহুয়া সেদিন ধন্যবাদ জানাতে পারে নি ।কিন্তু পরের দিন ঠিকই তাদের কথা বলতে দেখা গিয়েছিল ।

এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে কোন লাভ নেই ।অনেক দেরী হয়ে গেছে ।চল ওকে তোর ভালবাসার কথা বলবি ।-কথাটি বলে আবিরকে তাড়া লাগায় রাতুল ।
-এভাবে হয় নাকি ?
-শোন আবির কোন স্থান শুন্য থাকে না । মানুষ ক্ষিধের সময় খাবার না পেলে অখাদ্য কুখাদ্য খায় ।যেমন মহুয়া এখন জিসানের মত অখাদ্য চাবাচ্ছে ।
-দেখছি ।
-দেখতে থাক ।সময় গেলে সাধন হবে না কথাটা মনে রাখিস ।

মহুয়ার সামনে দাঁড়ানো আবির ।
-দেখ মহুয়া তোমাকে একটা কথা বলার ছিল ।
-বলো...
-জিসান ছেলেটা ভাল না ।ওর আগেও অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল ।
-তুমি কি জেলাস ?এতদিন তো দেখিনি একবারও সামনে আসতে ।এখন আমার রিলেশন হয়েছে শুনে সহ্য করতে পারছো না এইতো ?হাবলা একটা...বলে গটগট করে চলে গেল মহুয়া ।পিছনে ফিরলে চোখের জলে ঘোলাটে হওয়া চশমাটি মুছতে দেখতো আবিরকে ।

সময়গুলো ভাল যাচ্ছে না আবিরের ।গতকাল জিসান তার বন্ধুবান্ধব নিয়ে আবিরকে একপ্রকার থ্রেট দিয়ে গেছে ।তার গার্লফ্রেন্ড মহুয়ার সামনে যেন আবিরকে আর না দেখা যায় এমনটাই বলেছে জিসান ।কিন্তু মহুয়াকে না দেখে থাকাটা আবিরের পক্ষে প্রায় অসম্ভব ।ইদানিং স্বপ্নেও দেখছে মহুয়াকে ।

সাবস্ক্রাইব করুন:

মহুয়ার কাছে প্রতিটা মুহুর্তই এখন উত্তেজনায় ঠাসা ।এইতো দুদিন আগে জিসানের সাথে প্রথম ডেটিং সেরে আসলো মহুয়া ।সেদিন ওর বাইকে চড়ে ওকে জড়িয়ে ধরতে একটু ইতস্তত লাগলেও পরে ঠিকই জড়িয়ে ধরেছিল ।তারপর পার্কের ঠিক পিছন দিকে ঝোপের আড়ালে বসেছিল ওরা ।জিসান যা দুষ্টু না !প্রথম দিনই বলে কিনা ,ঝাল লাগছে মুখটা খুব একটু মিষ্টি করে দিবে প্লিজ ?এরপরের ঘটনা ভাবতেই মহুয়ার গোলাপী গাল দুটো লাল হয়ে যাচ্ছিল ।আজকেও জিসান ওকে নিয়ে বের হবে ।খুব সেজেছে মহুয়া ।লাল সালোয়ার কামিজের সাথে ঠোঁটে লাল লিপিস্টিক ,কপালে বড় টিপও আছে ।

পাঁচটা বেজে পনেরো ।এতক্ষন তো দেরী করে আসে না মহুয়া ।আবিরের পেট ব্যাথা করছে ।টেনশনে পড়লে পেট ব্যাথা করে আবিরের ।হঠাত্‍ আবিরের চোখ জিসানের বাইকের দিকে চলে গেল ।জিসানের সাথে মহুয়া বিশ্রী ভাবে জড়িয়ে বসে আছে ।আশেপাশের লোকজন কি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে মহুয়ার দিকে আবিরের বুঝতে কষ্ট হচ্ছিল না ।কি বিশ্রী দেখাচ্ছে ! আর দেখতে পারছে না আবির ।অবশ্য দেখার সময়টুকু পেতোও না আবির ।সোওও করে চলে গিয়েছিল বাইকটি ।মহুয়াকে খুব বলতে ইচ্ছা করছিল ,হালকা লিপস্টিক আর ছোট্ট একটি টিপেই খুব সুন্দর লাগে তোমাকে ।বলা হলো না আবিরের ।
একটা ছেলে যতই ভাল হোক না কেন ,সে যখন কোন মেয়েকে ভালবেসে তার সান্নিধ্যে আসার চেষ্টা করে তখন ঐ মেয়েটির কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি ঐ ছেলেটি ।কারণ বেশির ভাগ মেয়েদের প্রথম ভালবাসা থাকে প্লেবয়টাইপ ছেলেদের ঘিরে ।
কথাটি খুব মনে পড়ছে আবিরের ।কিন্তু কোথায় ঠিক পড়েছে মনে করতে পারছে না আবির ।

-কোথায় যাচ্ছি আমরা ?
-ক্যানো আমার সাথে যেতে ভয় লাগছে ?
-তা কেনো হবে !তোমার সাথে জাহান্নামে যেতেও আমি রাজি আছি ।
-হেহেহে ...জিসান একটি বাসার সামনে এসে বাইক থামালো ।
-এখানে এসেছো ক্যানো ?
-এটা আমার এক খালার বাসা ।খালারা কেউ নেই এখানে ।এখানে আমাদের কেউ ডিস্টার্ব করবে না ।

একটা রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল জিসান ।
-এই একটু কাছে আসো না ,দূরে কেন দাড়িয়ে আছো ।
-আমার লজ্জা লাগছে ।বললো মহুয়া ।
-দাঁড়াও লজ্জা ভেঙে দিচ্ছি ।বলে মহুয়াকে জড়িয়ে ধরলো জিসান ।ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মুহুর্তগুলো ভীষণ সুখের লাগছে মহুয়ার কাছে ।আরও গভীরে যাওয়ার চেষ্টায় তখনও ব্যস্ত জিসান ।
প্লিজ জিসান আমাকে আর জোর করো না ।ওসব বিয়ের পরে হবে ।কিন্তু ওদিকে মন নেই জিসানের ।সে আদিম মাদকতার স্বাদ পেতে শুরু করেছে সবে ।
তারপর ....কেটে যায় কিছু সময় ...মহুয়ার শীত্‍কারও যেমে যায় ।জিসান তার ঘর্মাক্ত শরীর মহুয়ার ওড়না দিয়ে মুছে নেয় ।এটুকু হয়তোবা মহুয়ার জন্য যথেষ্ট হতে পারতো ।কিন্তু দরজার ওপাশে অপেক্ষমান ছিল জিসানের পাঁচ বন্ধু ।আর জিসান কোন কাজই তার বন্ধুদের ছাড়া করে নি ।
...এবার আর আনন্দের শীত্‍কার ভেসে আসে না ।বেদনার চিত্‍কারে আচ্ছাদিত হয়ে যায় বদ্ধকক্ষটি ।মহুয়ার নিথর দেহটি পড়ে থাকে বিছানায় ।চোখের কোণে জল চিকচিক করছে ।এই জল কি সেই হাবলা ছেলেটির জন্য নাকি তার কৃতকর্মের জন্য ঠিক বোঝা গেল না...

পরদিন সকালে মহুয়াদের বাড়িতে কান্নার রোল পড়েছিল ।অনেক মানুষ গিয়েছিল খবর নিতে ।কিন্তু কেউ সেই আবিরের খোঁজ নিতে গিয়েছিল কিনা ঠিক জানা যায় নি ।শরীর ভাঙার খবর পৃথিবী রাখে ,কিন্তু মন ভাঙার খবর পৃথিবী রাখে না ।

সাবস্ক্রাইব করুন:

সমাপ্ত ।।

by- নওশাদুল ইসলাম নবীন
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url