গল্পঃ আমি এবং সেই মেয়েটি

সে আমার জীবনে এসেছিল উড়ে এসে জুড়ে বসার মত। ক্লাস রুমে বসে ছিলাম একদিন। তখনো কেউ আসে নি। ক্লাসের ভাল ছাত্রদের খাতায় নাম থাকত বলে সব সময় পড়ার মধ্যে ডুবে থাকতাম। সেদিনও কি যেন পড়ছিলাম। পিছন থেকে সুমধুর গলায় ডাক এলঃ "হ্যালো শুনছেন?"
না তাকিয়েই জবাব দিলামঃ "হেলতে পারব না। তবে শুনতে পারব।"
"আমি এই ডিপার্মেন্টে নতুন। আপনার সাথে বসতে পারি?"
এবার আমি তার দিকে তাকালাম। একমুহূর্তে যেন হারিয়ে গেলাম। "শুনছেন?"
ওর ডাকে হুশ ফিরে এল। বললামঃ "অবশ্যই।" "থ্যাঙ্কস" বলল সে। তারপর নিজে থেকেই বললঃ "ক্লাসমেট হিসেবে আমি আপনাকে তুমি করেই বলি?"
"অবশ্যই"
"তোমার নাম কি?"
"সৌরভ। আপনার?"
"আবার আপনি করে বলছ!"
"স্যরি। তোমার নাম কি?"
"চন্দ্রা"
"বাহ! চেহারার মত সুন্দর নাম। তা দর্শনার্থী নাই?"
"মানে?"
"মানে তোমার নাম তো চন্দ্রা। দর্শনার্থী আসে না?"
"আসলেও পাত্তা দেই নাকি?" হেসে হেসে উত্তর দিল সে।"
-এভাবেই শুরু আমাদের পথচলা।....


নাহ্। ঘুম আসতেছে না। ওর চোখ বারবার আমার ঘুম ভেঙে দিচ্ছে। সুইটির সাথে ওর মনে হয় ভালোই বন্ধুত্ব হইছে। আজকের ক্লাসে ওদের কানাকানি আর হাসাহাসি এটাই ইঙ্গিত দেয়। ক্লাসের মেয়েদের মধ্যে ওই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। ও কি আমারে সাহায্য করবে। পরদিন দেখা হল সুইটির সাথে। বলব না বলব না করেও বলেই ফেললাম। ও শুনে অবাক হল না। উল্টো আমাকে অবাক করে দিয়ে বললঃ ও এই জায়গার ডিসির মেয়ে। আর ওর মামা আমেরিকার কোন এক প্রদেশের গভর্নর ও কাকা ইউরোপীয় ইউনিওনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। এই হাই প্রোফাইল মেয়ে আমাদের ক্লাসে পড়ে!!! সুইটি আমার অবস্থা দেখে ঝটপট কয়েকটা ছবি তুলে নেয়। কিছু বুঝে উঠার আগেই মোবাইলে নিয়ে দৌড় দেয় কিছু দূরেই দাড়ানো চন্দ্রার দিকে। আমার এই দুরবস্থার ছবি দেখেই ও হাসতে শুরু করল আর আমিও ঐ হাসিতে হারিয়ে গেলাম। প্রান্তর ধাক্কাতে যখন হুশ ফিরে আসার সাথেই দেখলাম আমাকে ঘিরে ছোটখাটো জনসমাবেশ তৈরী হয়েছে। সবাই বলতেছে, "শেষ পর্যন্ত তুইও?" বোকার মত বললামঃ
"আমি কি?"
"তুই চন্দ্রার দিকে এভাবে তাকায়া আছস কেন?" প্রান্ত বলল।
"কই? আমি তো মাঠ দেখতেছি। দেখস না কি সুন্দর ঘাস।"
"মাঠে ঘাস থাকবে না তো ঘোড়ার ডিম থাকবে?"
"আমি আসলেই মাঠ দেখতেছিলাম।"
"হইছে হইছে। আর মিথ্যা কথা বলতে হবে না। আমরা সব বুঝি।"
দেখতে দেখতে ১ম সেমিষ্টার পরীক্ষা এসে গেলো। কথায় আছে, ওস্তাদের মাইর শেষ রাতে। তাই সবাই ধুমাইয়া পড়তেছে। ১ম পরীক্ষা শেষে ওর সাথে দেখা হল। একি! ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে কেন?.......

"কি ব্যাপার? কাঁদতেছেন কেন?"
"তুমি আমাকে আপনি বলতেছ কেন?"
"ওহ স্যরি। তুমি কাঁদতেছ কেন?"
"কেন? তোমার কি কষ্ট হয় নাকি?"
"ইয়ে মানে, তোমার মত সুন্দরী মেয়ে কাঁদলে আমারও কান্না আসে।"
"তাই বুঝি?"
"হুম"
"ও। তাহলে শুনো। কালকে সৃজন মারা গেছে।"
"ওহ। স্যরি। কিন্তু সৃজনটা কে?"
"স্টার জলসার অমুক সিরিয়ালের নাটকের নায়ক। আহ, কি কিউট একটা ছেলে।"
এইডা কি হইল? আমি কি না কি ভাবলাম..... বিকালে বন্ধুদের আড্ডায় কথাটা তুললাম। চন্দ্রাও ছিল। সবাই যখন হাসতে হাসতে গড়াগড়ি, তখন ও মাথা নীচু করে। হঠাত্‍ ওর হাতে দু ফোটা জল পড়লো। আকাশে তাকিয়ে দেখি মেঘের ছিটাফোঁটাও নেই। তার মানে? ও কাঁদছে? আমার মনে হয় কথাগুলো বলা উচিত হয় নাই। নিজেকে খুব দোষী মনে হচ্ছে। সবাই চলে গেলে ওর কাছে ক্ষমা চাইলাম। ও আমার দিকে অগ্নীদৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলে গেল। পরদিন ওর মান ভাঙাতে গেলাম।
"আসলে গতকালকের ঘটনার জন্য I am very very sorry"
"মানুষকে হাসির পাত্র বানাতে ভালই শিখছো না? তুমি জানো এখন আমি তোমার কি অবস্থা করতে পারি?"
"ওরে বাপরে। ভয় পাইছি। মাফ করে দেও। এই কানে ধরলাম।"
"কই? ধরো।"
"এতো মানুষের সামনে ধরমু?"
"হু"
কিছুই করার নাই। তাই কানে ধরতে বাধ্য হইলাম।
"হুমম। আর এমন কোনদিন করবা?"
"না।"
এরকম খুনসুটিতেই চলে আমাদের দিন........

একসময় ওর বিয়ের প্রস্তাব আসে। আমি মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। কি যেন হারিয়ে যাচ্ছে আমার। এমন কেন হচ্ছে আমার? এটাই কি ভালবাসা? না। আমি ওকে হারিয়ে দিতে দেবনা। যে করেই হোক, এই বিয়েটা আটকাবোই। সব বন্ধুকে ঘটনাটা বললাম। ওরাও রাজি। অবশেষে সবার সহযোগীতায় বিয়েটা আটকানো গেল। আর দেরী করা ঠিক হবে না। পরদিনই চন্দ্রাকে আলাদা ডেকে বললামঃ
"আমাকে তোমার কেমন লাগে?"
"কেন?"
"বল না।"
"ভাল"
"পাত্র হিসেবে।"
"মানে?"
"আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। আমি তোমাকে খুব ভালবাসি।"
"সত্যি?"
"সত্যি।"
"কখনো কষ্ট দিবে নাতো?"
"কখনোই না।"
"ওকে। তাহলে আমি রাজি।"
"হুররররে....."
না না এটা আমি বলি নাই। পিছন থেকে কোরাস শব্দে এই কথাটা আমার কানে আসল। পিছনে দেখি, সবাই দাঁড়িয়ে। কাহিনী কি? এরা এখানে কি করে? শেষে সাব্বির বলল আসল কথা। বেশীর ভাগ চন্দ্রার প্ল্যান। বিয়ের গুজব তোলাটা ছিল রিজনের প্ল্যান। নাহ্, পোলাপান বড্ড বদ হইয়া গেছে।............

সাবস্ক্রাইব করুন:

By- Ricardo Dibya

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url