গল্পঃ দুষ্টুমিষ্টি মেয়েটা

কখন যে কারেন্ট চলে গেছে তারদিকে কোন খেয়াল নেই রাকিব এর।ও শুধু ভেবে চলছে আগামীকালের কথা, ও কি সত্যি মিথিলাকে ওর মনের কথা জানাতে পারবে? বলতে পারবে ওর ভালবাসার কথা? কে জানে হয়তো বা মিথিলাও ওকে ভালবাসে। মিথিলাকে ওর ভাল লাগা শুরু হয় একটু অন্যরকমভাবে। প্রথম দিকে রাকিব মোটেও মিথিলাকে সহ্য করতে পারত না । সহ্য না করার অবশ্য একটা কারন ছিল। যেমনঃ
যেদিন রাকিব প্রথম ভাসিটি ভর্তি হয় সেদিন মিথিলা ওর কাছে এসেছিল, কাছে এসে বলল-

-এই ছেলে তোমার নাম কি?
( রাকিব হটাৎ চমকে গিয়েছিল কারন ক্লাস এর প্রথম দিনেই একজন মেয়ে কোনরকম ভদ্রতা ছাড়াই সরাসরি তার নাম জিজ্ঞেস করলো, তাছাড়া এইরকম পরিস্থিতির মুখে রাকিব কখনো পড়েনি। )
-আমার নাম রাকিব ।
( মিথিলা খিলখিল করে হাসতে লাগলো। ওর হাসির শব্দ শুনে ক্লাস এর সবার নজর ওদের দিকে গেল। )
-আরে এটা তো তোমার ডাক নাম, ভাল নাম কি?
(রাকিব ওর ডাক নাম ছিল, ওর ভাল নাম হচ্ছে- খবির উদ্দিন)
-খবির উদ্দিন
-খবির উদ্দিন আবার কারো নাম হয় নাকি?
( রাকিব একটু রাগ হয়ে বলল )
-কেন হয় না?
-না এরকম অদ্ভুদ নাম কখনো শুনিনি তো তাই। তো যাই হোক তোমার যেমন অদ্ভুদ নাম তোমার ছেলেমেয়েদের নামও বুঝি তোমার মত রাখবে।
মিথিলার কথা শুনে ক্লাস এর সবাই হো হো করে হাসতে লাগলো। সেদিন রাকিব যে লজ্জায় পরেছিল তারপর থেকে ও কয়েকদিন লজ্জায় ক্লাস এর কারো সামনে দাঁড়াতে পারল না।

তারপর আরেকদিনের কথা একদিন চায়ের দোকানে রাকিব চা খেতে গেল সেখানেও মিথিলা ওর দুষ্টু বুদ্ধি কাজে লাগাল। রাকিব যখন চায়ের অর্ডার করে দোকানের পাশের একটা বেঞ্চে বসতে গেল, তখন ফটাস করে একটা বিকাট শব্দ হল। কিছুক্ষণ এর জন্য সবাই চুপ হলে গেলেও মিথিলা আড়চোখে রাকিব এর দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো। তখন রাকিব এর বুঝতে বাকি থাকল না এটা কার কাজ। মিথিলা নিশ্চয়ই চায়ের দোকান থেকে একটা পলিথিন নিয়ে এ কাজটা করেছে। ও কোন কথা না বলে সেখান থেকে চলে গেল।

তবে রাকিব মিথিলার আসল রূপটা বুঝতে পারত না যদি সেদিন ঐ দুর্ঘটনাটা না ঘটতো। সেদিন কেবল ক্লাস শেষ হয়েছে। সবাই সবার নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে লাগলো হটাৎ ওদের ভাসিটির সামনের রাস্তায় একটা রিক্সা টেম্পু সাথে ধাক্কা খেয়ে উলটে পড়ল। সেখানে সবার আগে ছুটে গেল মিথিলা, সেখানে গিয়ে রিক্সা থেকে রিকশাচালক ও প্যাসেঞ্জারকে বের করে এনে তাদের হাঁসপাতাল এ ভর্তি করে তারপর ফিরল। সেদিন থেকে রাকিব মিথিলাকে ভালবেসে ফেলল, ভালবেসে ফেলল ওর মিষ্টি দুষ্টুমিকে।
তারপর থেকে রাকিব অনেকবার ওর ভালবাসার কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু বলতে পারেনি। কিন্তু আগামীকাল ও ওর ভালবাসার কথা মিথিলাকে জানাবে।

সকালবেলা রাকিব ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে একটু পারফিউম লাগিয়ে ক্লাস এ যাওয়ার জন্য রওনা দেয়। খুব টেনশন হচ্ছে রাকিব এর, কিন্তু আজ ও চুপ থাকবে না। আজকে মিথিলাকে সব কথা বলবেই। ক্লাস এ ঢুকে রাকিব এদিক ওদিক মিথিলাকে খুঁজতে লাগলো। ওর খোঁজা দেখে জিসান ওকে জিজ্ঞাস করল,
-কিরে কাকে খুঁজিস?
-না মানে মিথিলা কোথায় কিছু জানিস?
-কি ব্যাপার আজ তুই হটাৎ মিথিলাকে খুঁজছিস কেন? ওকে তো তুই মোটেও দেখতে পারিস না।
-আরে এত কথা বাড়াস কেন? বলনা ও কোথায় গেছে?
-কোথায় যেন ব্লাড লাগবে সেখানে ও ব্লাড ডোনেট করতে এ গেছে। কখন আসবে জানি না।
ইস এত ভাল না মেয়েটা, মাঝেমাঝে মিথিলার প্রতি রাকিব এর অনেক হিংসা হয়। এ জন্যই রাকিব হয়তো ভালবাসে এই দুষ্টুমিষ্টি মেয়েটাকে।

সাবস্ক্রাইব করুন:

By- নাসিফ আল নূর
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url