এক বাবু ও দুই শালিকের গল্প

রাত ২টা,ফোন বাজছে......
অসময়ে ফোনে কথা বাবুর একদম পছন্দ হয় না।কি সব উজবুক লোক ফোন করে এত রাতে!!মানুষের কি কোন কাজকর্ম নেই,নাকি!!
-হ্যালো
-কে ভাই আপনি?(পুরুষের কণ্ঠ)
-এতো রাতে আমার নাম্বারে ফোন দিয়ে আমি কে জানতে চান??
-এইটা আপনার নাম্বার হয় কিভাবে??
-তাইলে কার??
-সিঁথি কোথায়?
-এই খানে সিঁথি নামে কেউ নাই
-মিথ্যা কথা বলেন কেন! আমি জানি ও আপনার বোন।ডেকে দিন না ওকে!
-ধুর মিয়া,আমার কোন বোন-টোন নাই।।
-প্লীজ ভাইয়া,ডেকে দেন ওকে
-আচ্ছা, অপেক্ষা করেন।
(ফোনটা বালিশের পাশে রেখে ঘুমের জগতে পারি জমালো বাবু)

ঘুম থেকে উঠতেই দেখা মিলল দুই শালিকের।জানালার ওপর বসে আসে ওরা।দুই শালিকে দিন ভালো যায়, এমন কুসংস্কারটা জানা থাকলে হয়ত খুশি হাওয়া উচিত ছিল ওর। দুর্ভাগ্য। ব্যাপারটা জানা নেই ওর।জোড়া জিনিস একদম সহ্য হয় না।ওরা একসাথে থাকুক,এটা ওর পছন্দ হচ্ছে না।কি দরকার জোড়া বেধে থাকার!! একাই কি ভালো নেই বাবু!কারো জন্য অপেক্ষা করতে হয় না,রাত জেগে কথা বলার বিরক্তিও নেই ওর জীবনে।স্বাধীন জীবন।তবুও মানুষ কেন যে প্রেমিকা-প্রেমিকা করে, বুঝে পায়না ও।।
আচ্ছা,গত রাতের লোকটার কি অবস্থা!নাহ,ওনাকে ওভাবে বোকা বানানো একদম উচিত হয়নি। কি ই বা করার ছিল!সিঁথি নামটাই যে জীবনে প্রথম শুনল গতরাতে।তাকে খুঁজে বের করার জো তো বাবুর নেই।। যা করেছে,ভালই করেছে।মানুষ এতো বোকা হয় কিভাবে!সাহসটাই বা কি!বাবুর বোন নেই,সত্যি।থাকলেই বা কেন দিত!বাবুর বোন হয়ে প্রেম-পিরিত একদম সাজবে না। হাড়গোড় ভেঙে দিতো!এসব চিন্তা করে কি লাভ!! বোন নেই,ভাল আছে ও।।

কেটে গেলো কয়েক মাস।স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজের পাঠ শুরু করেছে সে।বাচ্চা সুলভ মানসিকতা পুরপুরি না গেলেও বয়সটা নিতান্ত কম হয়নি যে।তাই আবেগ-টাবেগ ইদানিং একটু বেশিই ভাবায় ওকে।
সৌদি থেকে বাংলার দূরত্ব কম হলেও তিন হাজার মাইলের মতই।দূরত্ব যাই হোক না কেন,ওটা কখনো কখনো মুখ্য বিষয় হয়ে ওঠে না।বাবুর খেত্রেও এমনটাই ঘটেছে।মরুভুমির দেশের ।অচেনা,অজানা আলিশার জন্যে স্বপ্ন বুনেছে সে। আজ তার জীবনে আর কোন আক্ষেপ নেই।আক্ষেপ একটাই, কখনো দেখা হয় নি আলিশাকে।তা না হোক।।ও আলিশার রুপকে ভালোবাসেনি।হোক সে অসুন্দরি!!কিবা যায়-আশে তাতে??
আজকাল সে ভালবাসা খুঁজে পায় মোবাইল নামক অবলা যন্ত্রটা ঘিরে।রাত ছাড়া কথা হয় না ওর সাথে।তাই এখন আর রাতে ঘুমানো হয়ে ওঠে না।রাত কিভাবে শেষ হয়ে যায়,হিসেবটা যেন মিলতে চায়না আজকাল। লোকে বলে ভার্চুয়াল জগত নাকি অন্ধকার। এগুলো মিথ্যা কথা। নতুবা এতটা দূরত্বে থেকেও ওদের ভালবাসাটা যেন আজও প্রখর।মেয়েটির ভালবাসায় সিক্ত হয়েছে বাবু...

দিন এভাবে চলে গেলেও পারত।মোবাইলের ৫ ইঞ্চির ছোট্ট পর্দায় দৃষ্টি রেখে অনন্তকাল বেঁচে থাকতেও আপত্তি ছিল না ওর।তা আর হয়ে ওঠেনি।দূরত্ব কমেছে দু জনের মাঝে।তারা এখন একই দেশের বাসিন্দা।তবে বেড়েছে মনের দূরত্ব।বেড়েছে না বাড়ানো হয়েছে তা জানা নেই বাবুর।এখন আর দেখা হয়না দুজনের।মেয়ের পরিবার থেকে সম্পর্কটা মেনে নেয়নি।আলিশাও নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে।দেখাও হচ্ছে না আর।বাবুর ধারনা মেয়ের বড় ভাইর কারনেই হয়ত ভেঙে গেছে সম্পর্কটা...

দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাবু।আজ খুব মনে পড়ছে সেই লোকটার কথা, যে কিনা ওকে সিঁথির ভাই ভেবেই বসে আছে।হয়ত সেও ভাবছে বাবুর কারনেই তাঁর সম্পর্কটাও ভেঙে গেছে।।হতে পারে,নাও হতে পারে।শালিক জোড়াও খুব দেখতে ইচ্ছে করছে আজ।জানালা থেকে উকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করে সে।।নেই,একটাও নেই।ওদের বাসাটা এখানে আর নেই হয়ত।।হয়ত নিঃসঙ্গ বাবুকে আজ ওদেরও আর ভালো লাগছে না!!!!

সাবস্ক্রাইব করুন:
by- রিয়াদ আল আশেকিন জামি
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url