গল্পঃ একটু আশ্রয়

"রহিম সাহেব কি ব্যাপার এত মুড অফফ কেন ? "
" আরে সামিম ভাই যে , কাল একটা সাক্ষাৎকারের পর নিজেকে ছোট মনে হচ্ছে অনেক । এই সমাজকে ছোট মনে হচ্ছে । "
"কিসের সাক্ষাৎকার ?? "
"একজন ঠেলাগাড়ির চালকের , এক বৃদ্ধের । "
"কি সাক্ষাৎকার , শুনিতো ভাই , যে এক ঠেলাওয়ালার কাছে আপনার নিজেকে ছোট লাগছে । "
"তাহলে শুনেন । "
"রাস্তা ঘাটে অনেক বৃদ্ধ দেখা যায় কাজ করতে । এদের বেশির ভাগ ই সন্তান কর্তৃক ত্যাগ করা অসহায় বাবা মা । এদের উপর রিপোর্ট করাই আমার সাবজেক্ট ছিল কাল । তো এক বৃদ্ধকে দেখলাম ঠেলা ঠেলতে । তখন তাকে জিজ্ঞাসা করলাম কেন আপনি এই বৃদ্ধ বয়সে ঠেলা ঠেলছেন ?? আপনার ছেলে মেয়ে নাই ?? তখন উনি বলতে থাকেন ওনার ঘটনা । "
ঠিক মত আর দাড়াতে পারিনা এখন । বয়সের ভারে নুয়ে গেছি । অল্পতেই হাপিয়ে যাই এখন । আগের মত আর ঠেলা ঠেলতে পারিনা । ঘরে আছে আমার বউ ।

বড় সাধ করে বিয়ে করছিলাম ওরে ।
তখন মাত্র যৌবনে পা দিছি । বাপ মা মাইনা নিতে চায়নাই ওরে । বাপে বাসা থেইকা বাইর কইরা দিছিল । অপয়া মেয়েরে রাখবেনা ঘরে । রাগ কইরা বাইর হইয়া গেছিলাম বাড়ি থেইকা । ভাল যখন বাইসাই ফালাইসি ওরেত আর দূরে সরান যায় না । শুরু করি সংসার । ছোট্ট একটা বস্তিতে থাকতাম তখন । আস্তে আস্তে সংসার দাড় করাই । তখন রিকশা চালাইতাম । গত মৌসুমে এক বড় লোকের ছাও গাড়ি চাপা দিয়া আমার রিকশাটা ভাইঙ্গা দিসে । আমি রাস্তায় দারায় চা খাইতে ছিলাম । বাইচা গেছি উপরওয়ালার দয়ায় ।

আমি জানতাম আমার জীবন সুখের হইবনা । আমি হয়তবা ভালভাবে থাকতে পারমুনা । হয়তবা অন্য সবার মত সুন্দর জীবন হইবনা আমার । কিন্তু নিজের বিবেগের কাছে বলি হইতে পারিনাই আমি । অন্য সবার কাছে আমি অসুখি । কিন্তু নিজের বিবেগের কাছে আমি অনেক বেশি সুখি । আমার বাপের পছন্দে বিয়া করলে হয়ত আমারে বাসা থেইকা বাইর কইরা দিতনা । আমার তিন চারটা ছাও থাকত । গোলা ভরা ধান থাকত । গোয়াল ভরা গরু থাকত । কিন্তু আমিত ভালো থাকতে পারতামনা । এখন আমার বয়স কত হইব ৬০ ৭০ হইব । এই বয়সেও হয়ত আমার কাজ করা লাগে । বাসায় গেলে আমার বউ হয়ত আমারে গেলাসে কইরা পানি দিতে পারবেনা । আমার কাপড় ধুইয়া দিতে পারবেনা । আমার সাথে মিস্টি কইরা কথা কইতে পারবেনা । আমার কিন্তু বিন্দু মাত্র আফসস নাই । আগে কান্দা কাটি করতাম অনেক । এখন আর কান্দিনা । এখন একটা দোয়াই করি । আমরা যেন এক লগে মরতে পারি । ও প্রতিবন্ধী বইলা সমাজের মানুষ যে ওরে দুরে সরায় দিছিল সেই সমাজরে ধিক্কার দিয়া যেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এক লগে থাকতে পারি সেই দোয়া করি ।

রহিম সাহেবের মুখ থেকে এই ঘটনা শুনার পর সামিম সাহেব কেমন স্তব্ধ হয়ে গেলেন । ওনার একটা প্রতিবন্ধী মেয়ে ছিল । বাবা মার কথায় মেয়ে আর মেয়ের মা ওনার ঘাড়ে বোঝা হবে ভেবে উনি আরেকটা বিয়ে করেছেন । এখন এই ঘরে ওনার কোন সন্তান নেই ।

উনি ভাবতে লাগলেন উনি কি পারতেন না তাদের একটু আশ্রয় দিতে ?

সাবস্ক্রাইব করুন:

By- আসিফ আহমেদ
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url