গল্পঃ মেঘেদের গল্প
অল্প টাকার সংসারে আমার প্রথম ঈদে কপালে সুতোর শাড়িটাও জোটেনি ঠিক,তবে ঈদের খুশি টা কিন্তু একটু মাটি হতে দেয়নি ছেলেটা। পুরান ঢাকার ঈদগুলো এখন জানি কেমন জমে না,এমন ঈদ না আসলে হয় না?মেকি হাসি আর কত!
-কেন আপা?
-না,আমার এখন পুরনো চাঁদ রাতের কথা মনে পড়ে।ননদের সাথে মেহেদি লাগিয়ে আমি আর রাহাত গ্রামের রাস্তায় হাঁটতে বেরিয়ে পড়তাম,মানুষ কি ভাববে এই ব্যাপারটা কেন জানি আমাদের একদম ই ধাতে আসতো না।
শায়লা আপার চোখজুড়ে রাজ্যের নীরবতা।এমনেতেও পুরোন ঢাকার এই অংশটা বেশি নির্জন,তবে এই মুহুর্তে এই মানুষটার চেয়ে বেশি নয়।শায়লা আপা ধরা গলায় পুরনো কথার খাম খুলতে লাগলেন।
-প্রতিবারই ঈদের আগে রাহাতকে টিকেট কেনার জন্য আমার তাড়া বাড়তো,পনের রমজানের পর থেকেই সকাল বিকাল দশবার করে ফোন লাগাতাম,শুধু আজকে যেন না ভুল হয়।ছেলেটাও ভীষন পাজি।একবার টিকেট কিনে ড্রয়ারে লুকিয়ে রাখলো,আর এইদিকে আমারো তাড়া বাড়তে লাগলো।ঈদের ৩ দিন আগে যখন বললো,আজো ভুলে গেছি,আমার কান্না তখন দেখে কে!তারপর মানুষটা রীতিমতো ঘাবড়ে গিয়ে টিকেট দুটো বের করলো।তখন ইচ্ছে হচ্ছিল দুই ঘা আচ্ছা মতন বসিয়ে দি।বলেই হাসতে গিয়ে কেমন যেন নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে মেয়েটা।লম্বা একটা দম নিয়ে নিজেকে আবার গুছিয়ে নেয়।
-সেই বছর আমার প্রেগনেন্সির রিপোর্ট আসার পর ছেলেটা যা খুশি হোল।এইদিকে আমার শরীর খুব দ্রুত দুর্বল হচ্ছিল।সারাদিনের অফিস শেষে, মানুষটা এক হাতে আমায় ধরতো আরেক হাতে আমার বমি পরিষ্কার করতো।আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে বলতাম,"আচ্ছা,আমায় তোমার বিরক্ত লাগে না?" ছেলেটা হাসহাসতে বলতো,"হ্যাঁ লাগে তো,খুব বিরক্ত লাগে।"
-সেই বছর আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ী কি যেন দরকারে আগেই বাড়ি চলে গেলেন।যাওয়ার আগে মা বললেন,আমি যেন এইবার কষ্ট না করে বাড়ি না যাই।পুরান ঢাকায় ভাইয়ের বাসায় ঈদ আমার আর কতটুকুন বা জমবে তাই নিয়ে আমি ভেবে কুল পেলাম না।যাওয়ার আগে রাহাত বললো,আমি জলদি ফিরবো।
তিন সপ্তাহ বাদে আমি যখন পৃথিবীর আলো আবার দেখলাম তখনো আমি হাসপাতালের সাদা বিছানায় আর মানুষটা আমার থেকে দুরে অনেক দুরে।
কাঁপা হাতে চোখ মুছতে মুছতে শায়লা আপা কেমন যেন নিজেকে গুটিয়ে নেন,খানিক বাদে কি ভেবে বলেন,আমার শুধু আমার ননদের কথাটাই এখন মনে পড়ে,"ভাবি তুমি শক্ত হও।"তারপর তো পুরো পৃথিবীটাই যেন পায়ের নিচ থেকে সরে গেল।কোমায় যাওয়ার পর ইমার্জেন্সি অপারেশনে আমার আয়ানের জন্ম।বলেই হাউমাউ করে ছেলেকে জড়িয়ে ধরেন।বছর পাঁচেকের ছেলেটা কিছু না বুঝে কেমন যেন অস্থির চোখে আমার দিকে তাকায়।
আজ রাতে এই পুরোন শহরতলীতে অনেক জোৎস্না।চাঁদের আলোয় পুরান ঢাকাকে আমার পানাম নগর মনে হয়।কেন যেন মনে হচ্ছে ইঁসা খাঁ এর শেষ ঘাঁটিটা বাঁচাতে নেয়ামতবিবি তার সবটুকু দিয়ে চাঁদের আলোয় আত্তহুতি দিচ্ছেন।আর আমি বসে বসে শায়লা মেয়েটার কান্নায় পুরনো দিনের ভালোবাসা দেখছি,পুরনো মানুষের জন্য জমে পড়া মেঘ দেখছি।মানুষটা নেই তাতে কি মেঘেরা তাদের বাঁচিয়ে রেখেছে মায়া ভরা পূর্ণিমার রাতে,কান্নার নোনাজলে।
সাবস্ক্রাইব করুন:
-Abrar Bin Rofique
-কেন আপা?
-না,আমার এখন পুরনো চাঁদ রাতের কথা মনে পড়ে।ননদের সাথে মেহেদি লাগিয়ে আমি আর রাহাত গ্রামের রাস্তায় হাঁটতে বেরিয়ে পড়তাম,মানুষ কি ভাববে এই ব্যাপারটা কেন জানি আমাদের একদম ই ধাতে আসতো না।
শায়লা আপার চোখজুড়ে রাজ্যের নীরবতা।এমনেতেও পুরোন ঢাকার এই অংশটা বেশি নির্জন,তবে এই মুহুর্তে এই মানুষটার চেয়ে বেশি নয়।শায়লা আপা ধরা গলায় পুরনো কথার খাম খুলতে লাগলেন।
-প্রতিবারই ঈদের আগে রাহাতকে টিকেট কেনার জন্য আমার তাড়া বাড়তো,পনের রমজানের পর থেকেই সকাল বিকাল দশবার করে ফোন লাগাতাম,শুধু আজকে যেন না ভুল হয়।ছেলেটাও ভীষন পাজি।একবার টিকেট কিনে ড্রয়ারে লুকিয়ে রাখলো,আর এইদিকে আমারো তাড়া বাড়তে লাগলো।ঈদের ৩ দিন আগে যখন বললো,আজো ভুলে গেছি,আমার কান্না তখন দেখে কে!তারপর মানুষটা রীতিমতো ঘাবড়ে গিয়ে টিকেট দুটো বের করলো।তখন ইচ্ছে হচ্ছিল দুই ঘা আচ্ছা মতন বসিয়ে দি।বলেই হাসতে গিয়ে কেমন যেন নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে মেয়েটা।লম্বা একটা দম নিয়ে নিজেকে আবার গুছিয়ে নেয়।
-সেই বছর আমার প্রেগনেন্সির রিপোর্ট আসার পর ছেলেটা যা খুশি হোল।এইদিকে আমার শরীর খুব দ্রুত দুর্বল হচ্ছিল।সারাদিনের অফিস শেষে, মানুষটা এক হাতে আমায় ধরতো আরেক হাতে আমার বমি পরিষ্কার করতো।আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে বলতাম,"আচ্ছা,আমায় তোমার বিরক্ত লাগে না?" ছেলেটা হাসহাসতে বলতো,"হ্যাঁ লাগে তো,খুব বিরক্ত লাগে।"
-সেই বছর আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ী কি যেন দরকারে আগেই বাড়ি চলে গেলেন।যাওয়ার আগে মা বললেন,আমি যেন এইবার কষ্ট না করে বাড়ি না যাই।পুরান ঢাকায় ভাইয়ের বাসায় ঈদ আমার আর কতটুকুন বা জমবে তাই নিয়ে আমি ভেবে কুল পেলাম না।যাওয়ার আগে রাহাত বললো,আমি জলদি ফিরবো।
তিন সপ্তাহ বাদে আমি যখন পৃথিবীর আলো আবার দেখলাম তখনো আমি হাসপাতালের সাদা বিছানায় আর মানুষটা আমার থেকে দুরে অনেক দুরে।
কাঁপা হাতে চোখ মুছতে মুছতে শায়লা আপা কেমন যেন নিজেকে গুটিয়ে নেন,খানিক বাদে কি ভেবে বলেন,আমার শুধু আমার ননদের কথাটাই এখন মনে পড়ে,"ভাবি তুমি শক্ত হও।"তারপর তো পুরো পৃথিবীটাই যেন পায়ের নিচ থেকে সরে গেল।কোমায় যাওয়ার পর ইমার্জেন্সি অপারেশনে আমার আয়ানের জন্ম।বলেই হাউমাউ করে ছেলেকে জড়িয়ে ধরেন।বছর পাঁচেকের ছেলেটা কিছু না বুঝে কেমন যেন অস্থির চোখে আমার দিকে তাকায়।
আজ রাতে এই পুরোন শহরতলীতে অনেক জোৎস্না।চাঁদের আলোয় পুরান ঢাকাকে আমার পানাম নগর মনে হয়।কেন যেন মনে হচ্ছে ইঁসা খাঁ এর শেষ ঘাঁটিটা বাঁচাতে নেয়ামতবিবি তার সবটুকু দিয়ে চাঁদের আলোয় আত্তহুতি দিচ্ছেন।আর আমি বসে বসে শায়লা মেয়েটার কান্নায় পুরনো দিনের ভালোবাসা দেখছি,পুরনো মানুষের জন্য জমে পড়া মেঘ দেখছি।মানুষটা নেই তাতে কি মেঘেরা তাদের বাঁচিয়ে রেখেছে মায়া ভরা পূর্ণিমার রাতে,কান্নার নোনাজলে।
সাবস্ক্রাইব করুন: