গল্পঃ সত্যের আড়ালে ( ভালবাসার গল্প )


কিছুক্ষণ আগেও আমি খুব সুন্দর এক লাল টুকটুকে বউ সেজে ছিলাম ঠিক এই মুহূর্তে আমাকে সব চাইতে কুৎসিত লাগছে।ছেড়া ব্লাউজ লেপ্টে যাওয়া কাজল চুল গুলো এলোমেলো হয়ে গিয়েছে।আর লাল বেনারসিটি পরে আছে খাটের পাশে। আমার পাশে শুয়ে আছে নিরব আমার ফ্রেন্ড আরও একটা পরিচয় আছে তার। সে আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের ফিয়ন্সে।বাহির থেকে খুব জোড়ে জোড়ে দরজা ধাক্কাচ্ছে। শাড়িটা কোনো রকমে গায়ে জড়িয়ে এগোতে লাগলাম দরজার দিকে।দরজা খুলে দেখলাম আমার হবু বর হবু শশুর বাড়ির লোক আমার বাবা মা সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ গালে সজোড়ে আওয়াজ হলো। হ্যা বাবা আমাকে চড় মেরেছে।অনেক অপমানিত হতে হলো। আমার বিয়ে ভেংগে গেলো।পারিবারিকভাবেই আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিলো।
নিরব তখনো বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। বাবা ভাইয়া মিলে নিরবকে তুলে অনেক মারলো।কিন্তু তারপর যা বললো তা শুনার পর আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। আমাকে নাকি নিরবকে বিয়ে করতে হবে।

নিরব অসহায় দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে রইলো। এখনো যেনো সে কিছু বুঝতে পারছেনা।সে হয়তোবা ভাবছে আমি কিছু করব। কিন্তু সবাই যে আমার কথা শুনতে নারাজ।

প্লিজ কিছু বল তিরু ।সিহাব ভাই তুমি তো বলো কিছু। তুমিতো আমাকে চিনো। আমি জানিনা এখানে আমি কিভাবে এলাম আমি কিছু জানিনা। প্লিজ কিছু করো। আমার তো বিয়ে ঠিক হয়ে আছে আমি তো তাকে বড্ড ভালোবাসি।আমি অন্য কাউকে বিয়ে কিভাবে করবো? নিরব অনেক আকুতি করে বললো।

কেউ আমার আর নিরবের কোনো কথা শুনলো না। ৩ বার কবুল পড়ে আমাদের বিয়ে হয়ে গেলো।নিরব পুরো পাথর হয়ে গিয়েছিলো।ঠিক তখনি ওখানে উপস্থিত হলো আমার বেস্টফ্রেন্ড রিয়ানা।রিয়ানাকে দেখে আমি ছুটে চলে গেলাম তার কাছে।

রিয়ানা বিশ্বাস কর আমি কিছু করিনি।কে যেনো আমার মাথায় আঘাত দিয়ে আমাকে অজ্ঞান করে ফেলে তারপর আমার কিছু মনে নেই। দরজার ধাক্কানোর আওয়াজে আমি উঠি আর যা দেখি।
তিরু সব খুলে বললো রিয়ানাকে কিভাবে তার আর নিরবের বিয়ে হয়।কিন্তু কোনো লাভ হলো না।রিয়ানা সজোড়ে তিরুকে থাপ্পর বসিয়ে দিলো।নিরবের কাছে যেয়ে তাকে এলোপাথারি মারতে লাগলো।অঝোরে কাঁদতে লাগলো। সিহাব এসে রিয়ানাকে আটকাতে চেষ্টা করলো।

নিরব ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। তার সাথে কি হয়ে গেলো সে বুঝতে পারছে না।এইতো কিছুক্ষণ আগে দিব্যি সব ঠিক ছিলো।তার রিয়ানার সাথে ফোনে কথা হচ্ছিলো। রিয়ানার আসতে দেরি কেন হচ্ছে তা নিয়ে কথা বলছিলো হঠাৎ কে যেনো এসে পিছন থেকে ইঞ্জেকশন পুশ করলো তারপর আর কিছু মনে নেই তার। জ্ঞান ফেরার পর যা হলো তার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।

সিহাব ও নিলা মিলে রিয়ানাকে বাড়ি পৌঁছে দিলো।

রিয়ানা নিরব তিরু তারা ৩ ফ্রেন্ড। তারা একই ভারছিটিতে পড়ে।তিরু আর রিয়ানা বেস্ট ফ্রেন্ড।নিরব রিয়ানার বাবার ফ্রেন্ডের ছেলে।সেই সুবাদে তাদের বিয়েও ঠিক হয়ে ছিলো।।সিহাব রিয়ানার কাজিন হওয়ার সুবাদে সিহাব নিরব আর তিরুর সাথেও খুব ভালো সম্পর্ক। সিহাব তাদের থেকে দু বছরের বড়।

রিয়ানা তিরু বেস্ট ফ্রেন্ড হলেও তাদের স্বভাবে কোনো মিল নেই।রিয়ানা হচ্ছে উড়ন চন্ডিকা টাইপের মেয়ে।বাবা মায়ের এক মেয়ে স্বভাবতই বেশি আল্লাদি।সারাক্ষন হাসি মজা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কোথাও তার মন স্থির থাকে না।আজকে একে ভালো লাগছে তো কালকে ওকে।উঠতে বসতে ক্রাশ খাওয়ার বাতিক আছে তার। বিয়ে শাদি থেকে বহু দূরে থাকতে চায় সে।হার্টলেস টাইপ মেয়ে সে।কিন্তু বাবা মায়ের যেহেতু ইচ্ছে বিয়ে তো করতেই হবে।

আর তিরু পুরোটাই তার বিপরীত। শান্তশিষ্ট মেয়ে। কেউ ১০ টা কথা বললে একটার উত্তর দেয়। অনেক চুপচাপ থাকে। রিয়ানা আর নিরব বাদে তার ভালো ফ্রেন্ড ও নাই।

কেটে যায় বেশ কিছুদিন। নিরব ও তিরু এখনো স্বাভাবিক হতে পারেনি। তাদের মধ্যে হাজারো জরতা কাজ করে।কেউই যেনো বিয়েটা মেনে নিতে পারেনি।নিরব আর তিরুর বিয়ের কারণে নিরবের পরিবারের সাথে রিয়ানাদের পরিবারবে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়।রিয়ানা নিরব তিরুর সাথে আর যোগাযোগ করে নি।সিহাব মাঝে মাঝে কল দিয়ে খোঁজ খবর নেয়।

দেখতে দেখতে ৬ মাস কেটে যায়। নিরব তিরুর সম্পর্কে কোনো উন্নতি হয়নি।তারা এক রুমেও থাকেনা।তাদের মদ্ধে যে ফ্রেন্ডশিপ টা ছিলো তাও আর নেই।নিরব যথা সম্ভব এড়িয়ে চলে তিরুকে।তিরুর বড্ড কষ্ট হয় নিরবের এমন আচরণে।

একদিন তিরু নামাজের মোনাজাতে কাঁদতে কাঁদতে বলে কেনো এমন করলে আল্লাহ কেনো? তুমি তো জানতে আমি নিরবকে কতটা ভালোবাসি।কবে যে আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি নিজেও বুঝিনি।কিন্তু ও যে রিয়ানাকে ভালোবাসত।ওদের বিয়েও ঠিক হয়ে ছিলো।আমি তো ওদের থেকে দূরেই চলে যেতে চেয়েছিলাম।তাহলে কেনো আমার সাথে এমন করলে? এভাবে তো আমি ওকে পেতে চাইনি।বন্ধু হয়ে পাশে থাকতে চেয়েছিলাম তুমি তো ওটাও আমার থেকে কেড়ে নিলে। ওর এই অবহেলা নিয়ে বেঁচে থাকা যে খুব কষ্টকর।

নিরব তিরুর রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়।তখন ই তিরুর সব কথা শুনতে পায়। শুনার পর নিরবের খুব মায়া হয় তিরুর জন্য।

তিরুর নামাজ শেষ হলে সে নিরবকে দেখার পর চমকে যায়।নিরব তিরুকে যেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে।তিরু নিরবকে ধরে অঝরে কাঁদতে থাকে।এই যেনো খুশির কান্না।ধীরে ধীরে তিরু নিরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে থাকে।। কিন্তু তাদের সাথে এমনটা কেনো হলো এটার উত্তর ওরা জানেনা।

সাবস্ক্রাইব করুন:

একদিন নিরবের বাসায় একটি কার্ড আসে।যেটা ছিলো রিয়ানা আর সিহাবের বিয়ের কার্ড। নিরবের হাত থেকে কার্ড টা পরে যায়। চোখের কোনা দিয়ে জল গড়িয়ে পরে। কারণ এই কার্ডে যে তার আর রিয়ানার নাম হওয়ার কথা ছিলো।কার্ডটাও নিরবের পছন্দের যেটা নিরব নিজের বিয়ের জন্য পছন্দ করেছিলো।
নিরব তিরু রিয়ানা সিহাবের বিয়েতে গেলো।রিয়ানা তাদেরকে দেখে মলিন একটা হাসি দিলো।তিরু নিরবকে একসাথে বড্ড মানিয়েছে এটা দেখে রিয়ানার অজান্তেই তার চোখ ঝাপসা হয়ে এলো।

বিয়ের পর পর রিয়ানা সিহাব কানাডা যাওয়ার জন্য এপ্লাই করে।সিহাব দেশে থাকতে চাইলেও রিয়ানা কোনো ভাবেই দেশে থাকবে না।রিয়ানার জোরাজোরিতে সিহাবকেও কানাডায় যেতে হয়।

৫বছর পর..
সিহাব রিয়ানাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে
মনে আছে রিয়ানা আজকের দিনেই ঠিক ৫ বছর আগে কি হয়ছিলো।তোমার প্ল্যান টা কিন্তু একদম সাকসেসফুল হয়েছিলো।আমি বুঝতেও পারিনি এতো কাজ করবে তোমার প্ল্যান। তুমহে মান্নাপারেগা বস.......
রিয়ানা মলিন একটা হাসি দিলো।মনে থাকবেনা আবার।নিজের ভুলে নিজেকেই জ্যান্ত লাশ বানিয়ে ফেলেছি (মনে মনে বললো).
তোমার আসতে এত দেরি কেন হচ্ছিলো ওইদিন। আমার আর নিলার কাজ টা করতে কি কষ্টই না হয়েছিলো।প্রথমে নিলা তিরুকে অজ্ঞান করলো।পরে আমি নিরবকে অজ্ঞান করে যেয়ে তিরুর বিছানায় রেখে এলাম। আমি বের হয়ে গেলাম আমার কাজ সেড়ে আর নিলা ওর বাকি কাজটা সাড়লো।তিরুর শাড়ি খুলে ব্যাপার টা এমন ভাবে সাজালো যেনো তিরু আর নিরবের শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে বাকিটা যা হবার তাই হলো।পুরো প্ল্যান টা কিন্তু দারুণ করেছিলে।
রিয়ানা মুচকি একটা হাসি দিলো।

সবথেকে বেশি অবাক ঐদিন হয়েছিলাম যেদিন তুমি আমাকে বিয়ের জন্য রাজি হলে। আমি ভাবতেই পারিনি।কত ভয়ে ভয়েই না তোমাকে প্রপোজাল দিয়েছিলাম।তুমি যে মেয়ে রে বাবা এই বিয়ে ভালোবাসা থেকে ১০০ হাত দূরে থাকো আর আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলে। এমনও তো না যে তুমি আমাকে ভালোবাসতে। আল্লাহর দেওয়া তুমি আমার লাইফের সেরা উপহার।লাভ ইউ রিয়ানা।

(৫ বছর আগের রিয়ানা আর এখনকার রিয়ানার মধ্যে আকাশপাতাল তফাত।সেই উড়নচণ্ডী দুরন্ত মেয়েটি আজ আর চঞ্চল নেই।একদম ঠান্ডা শীতল হয়ে গিয়েছে।মন দিয়ে সংসার করছে।)

আচ্ছা রিয়ানা শুনো আমার একটু বাহিরে যেতে হবে আসতে একটু লেইট হবে। তোমার কিছু লাগবে?
না কিছু লাগবে না তুমি তাড়াতাড়ি চলে আসবে।আমি তোমার পছন্দের গাজরের হালুয়া বানাবো। সিহাব রিয়ানার কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে বেরিয়ে গেলো।

রিয়ানা তার ১ বছরের ছেলেকে ঘুম পারাতে নিয়ে গেলো। ডুব দিলো সেই ২ বছর আগের স্মৃতিতে। মনে করেই তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।মনে করতে চায়না সে সেই ভয়ংকর স্মৃতিগুলো। সে তো সুখে আছে কমতি নেই তার কোনোকিছুতেই।সিহাব তাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে। কিন্তু কথায় আছে না সবার কপালে সুখ সয় না।
রিয়ানার ফোনে একটা কল আসে।
রিয়ানা -হ্যালো
ওপাশথেকে আপনি যেই বলছেন মি সিহাব আহমেদ খুব বাজে ভাবে এক্সিডেন্ট করেছে।আপনি প্লিজ হাসপাতালে চলে আসেন। আমি এড্রেস টেক্সট করছি আপনাকে।
এটা শুনার পর যেনো রিয়ানার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো।তার হাত থেকে ফোনটা পরে যায়। সে কোনো রকমে রাইয়ায কে নিয়ে হাসপাতালে যায়।কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।সিহাবের খুব বাজেভাবে এক্সিডেন্ট হওয়ার কারণে তাকে আর বাঁচানো যায় নি।

রিয়ানা স্তব্ধ হয়ে যায়। সে কোনোভাবেই সিহাবের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেনা।সিহাবের লাশ নিয়ে সে দেশে ফিরে আসে।
রিয়ানা এখন তার বাবার বাড়িতে থাকে রাইয়ায কে নিয়ে।সিহাবের মৃত্যু হয়েছে আজ নিয়ে ১ মাস হয়ে গেলো।
রিয়ানা রাইয়াযের জন্য খাবার আনতে গিয়ে খুব পরিচিত কারো কন্ঠস্বর শুনতে পেলো।এত বছর পর শুনেও তার চিনতে কষ্ট হলো না।

তিরু রিয়ানার কাছে ছুটে এলো। রিয়ানাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো।এত পর হয়ে গেলাম আমি তোর কাছে।আমাকে কি মাফ করা যায় না। বিশ্বাস কর আমি কিছু করিনি।মাফ করে দে না রে আমায়।রিয়ানা তিরুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। কিন্তু সে কাঁদতে পারছে না।কেনো যেনো তার চোখ দিয়ে পানি পরছেনা। তিরু রিয়ানাকে ছেড়ে একটু স্বাভাবিক হলো।তখন কলিংবেল বাজলো। রিয়ানার মা দরজা খুলতে গেলো।

রিয়ানা নিরবকে দেখে পাথর হয়ে গেলো।নিরব ধীরে ধীরে রিয়ানার দিকে এগোচ্ছে। এসে রিয়ানাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।এবার রিয়ানা নিজের কান্না থামাতে পারলো না।অঝোরে কাঁদতে লাগলো।কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারালো ।যখন জ্ঞান ফিরলো দেখলো তার পাশে দুটো টুইন বেবি বসা।একজন মেয়ে একজন ছেলে।
তিরু হাসিমাখা মুখ নিয়ে বললো ওরা আমার ছেলেমেয়ে প্রনয় পূন্যতা।নাম গুলো রিয়ানার খুব চেনা। যখন নিরবের সাথে তার সম্পর্ক ছিলো তখন নিরব প্রায় ই বলতো ছেলে হলে নাম রাখবে প্রনয় আর মেয়ে হলে পূণ্যতা।তখন রিয়ানার এগুলো ন্যাকামো ছাড়া আর কিছুই লাগতো না।কিন্তু আজ কেন যেনো বুকে চিনচিন ব্যাথা অনুভব হচ্ছে তার। ঐদিন নিরব তিরু রিয়ানাদের বাসায় থেকে গেলো।

রাতে..
রিয়ানা একটু ছাদে যাবে তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।রিয়ানা তিরুর দিকে তাকালো।

তিরু মুচকি একটা হাসি দিয়ে
আমি যাই বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে আসি তোমারা বরং ছাদে যাও।
রিয়ানা নিরবের পিছু পিছু ছাদে চলে গেলো।দুজন ছাদে রাখা দোলনাটায় বসলো।

কেমন আছো রিয়ানা?
দেখতেই তো পাচ্ছ আবার জিজ্ঞেস কেনো করছো।আর এত রাতে ছাদে কেন নিয়ে এলে।ভুলে যেও না তোমার বউ বাচ্চা আছে।
নিরব শব্দ করে হাসতে লাগলো। এমন ভাব যেনো রিয়ানা কোনো মজার জোক বলেছে।
রিয়ানা এই হাসির মানে বুঝলো না।ও আকাশের পানে চেয়ে রইলো
চারিদিকে নিস্তব্ধতা। কেউ কোনো কথা বলছে না।হঠাৎ নিরব জিজ্ঞেস করলো
আমার ভালোবাসায় কি কোনো কমতি ছিলো?
রিয়ানা এবার অবাক হলো সে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। চুপ করে আছে।তার চোখ দিয়ে পানি পরছে।
নিরব আবার বলতে শুরু করলো
আমাকে তোমার পছন্দ না আগে বলোনি কেনো? নিজেই চলে যেতাম তোমার লাইফ থেকে।কি দরকার ছিলো এত বড় নাটক করার।? কি দরকার ছিলো সবার সামনে আমাকে আর তিরুকে এইভাবে অপমান করার কি দরকার ছিলো? আমাকে একটা বার বলেই দেখতে।পাগল ছিলাম আমি তোমার জন্য। জান টা দিতে বললে তাও হাসতে হাসতে দিয়ে দিতাম তাহলে কেনো এমন করলে আমার সাথে?
রিয়ানা এখনো চুপ। কোনো কথা বলছে না।মাথা নিচু করে আছে।
এবার নিরব চিৎকার করতে লাগলো।ছাদের দেয়ালে সজোড়ে ঘুসি দিলো।হাত ফেটে রক্ত বেড় হচ্ছে। রিয়ানা ছুটে গেলো নিরবের কাছে এতে নিরবের জিদ আরো বেড়ে গেলো। এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে
নাটক করছো নাটক।কেন রে ৫ বছর আগে যে নাটক করেছিলি তোর মন ভরেনি আবার আসছিস নাটক করতে? আমি কিসে কমতি রেখেছিলাম তোর? তুই কেন করলি আমার সাথে এমন? বুক কঁাপে নি তোর? তখন মনে হয় নি আমি কষ্ট পাবো? এখন কিসের দরদ দেখাস রে তুই? ৫ বছর আগে কোথায় ছিলো তোর এই দরদ? বেইমান সেলফিস কোথাকার।

রিয়ানা আর টলারেট করতে পারলোনা। চিৎকার করে বলতে থাকে হ্যা আমি সেলফিস বেইমান।আমি তোমাকে ভালোবাসিনি।আমার এতো আগে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে ছিলো না। আমি চাইনি তোমাকে বিয়ে করতে। তাই এমন করেছি।সব আমিই করেছি।সিহাবকে দিয়ে সব আমি করিয়েছি।আমি জনাতাম তিরু তোমাকে ভালোবাসে। আর ও খুব ভালো মেয়ে। খুব সুখেই তো আছো বউ বাচ্চা নিয়ে তাহলে কেন এত বছর পর আবার সেই পুরনো কথা টানছো? আর তুমি তো বুঝতেই আমি তোমাকে ভালোবাসি না।আমি কেমন মেয়ে তুমি জানতে না?বাবা মায়ের কথায় তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলাম।তাহলে এত কষ্ট কেন পাচ্ছো।তোমার তোখুশি হওয়া উচিৎ যে তোমাকে কোনোদিন ভালোইবাসেনি তার কাছ থেকে তুমি মুক্ত হয়েছো।বলে চলে যেতে লাগলো।

কিসের এত ভয় তোর সত্যি বলতে।অর্ধেক সত্যি বললি বাকিটুকু কে বলবে? নিরব আবার হাসতে শুরু করলো জোরে জোরে।তুই যা বল্লি তা তো আংশিক সত্য।এটাই যদি পুরো সত্যি হতো বিশ্বাস কর আমি অনেক ভালো থাকতাম।

রিয়ানা এবার ভয় পেয়ে গেলো সে ঘামতে শুরু করলো। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।এত বছরেও যে সত্যিটা সে কাউকে জানতে দেয়নি। নিরব কিভাবে জানলো?
রিয়ানাকে চুপ থাকতে দেখে
নিরবের রাগ এবার সপ্তম আসমানে উঠে গেলো। সে রিয়ানাকে হ্যাচকা টান দিয়ে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে তার মানে আমি এতদিন যা জানতাম সব ভুল? আমাকে যদি ভালোইনাবাসিস তাহলে সিহাবের সাথে তোর বিয়ের দিন তোর চোখে আমি আমার জন্য ভালোবাসা কোনো দেখেছিলাম? কেনো সেদিন তুই আমাকে আর তিরুকে একসাথে দেখে চোখের জল ফালাচ্ছিলি ?
এবার রিয়ানা আর থাকতে পারলো না। চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।এত বছরের এই বোঝা আর ও বয়ে বেড়াতে পারছে না।
"হ্যাঁ আমি তোমাকে ভালোবাসি।তখোন বাসতাম এখনো বাসি।অনেক চেষ্টা করেও আমি তোমাকে ভুলতে পারিনি। নিজের ফিলিংস বুঝতে অনেকটা দেরি করে ফেলেছিলাম।আমি ভাবতাম তুমি হয়তোবা আমার ভালোলাগা।শুধু ফ্যান্টাসি আর কিছুইনা। তিরুও যে তোমাকে বড্ড ভালোবাসতো। ভেবেছিলাম আমার এই ২ দিনের ভালোলাগার জন্য ওর ভালোবাসা কেড়ে নেওয়ার কোনো মানেই হয় না। আমি তো কাউকে ভালোবাসতে পারিনা।কিন্তু আমি ভুল ছিলাম।যখন আমি বুঝতে পারলাম তোমাকে ছাড়া আমার দ্বারা সম্ভব না আমি সিহাবকে বার বার কল দিয়েছিলাম যাতে ও তিরুর বিয়েটা না ভাংগে আমার যে তখন তোমাকেই চাই।কিন্তু সিহাব আমার ফোন রিসিভ করছিলো না।আমিও কাজে আটকে গিয়েছিলামা। আমার গাড়ির টায়ার পাঞ্চার ছিলো।বৃষ্টি থাকার জন্য রাস্তায় গাড়িও পাচ্ছিলামনা।আমি পাগলের মতো রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম আর দুয়া করছিলাম যাতে ঠিক সময় পৌঁছোতে পারি।কিন্তু পারিনি আমি।এসে দেখি তোমাদের বিয়ে হয়ে গেছে।আমার তখন কিছু করার ছিলোনা।
নিরব আর কোনো কথা বললোনা।সে চুপ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।

রিয়ানা আবার বলতে শুরু করলো
এই বোঝা নিয়ে বয়ে বেড়ানো আমার পক্ষে আর সম্ভব না।প্রতি মূহুর্তে আমার মনে হয় সিহাবকে আমি ঠকাচ্ছি।তোমাকে ভুলতেই আমি সিহাবকে বিয়ে করেছিলাম। দূরে চলে গিয়েছিলাম তোমাদের সবার থেকে অনেক দূরে।সব স্মৃতি ভুলতে। আমার এতো শখের ডায়েরি ওটাও রেখে গিয়েছিলাম। পুরোনো কোনো স্মৃতি জাতে না থাকে। কিন্তু লাভ হয়নি।এই স্মৃতি গুলো প্রতি মুহূর্তে আমাকে তাড়া করে বেড়িয়েছে।ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আবার আমাকে তোমার সামনে এনে দাড় করালো।

নিরব তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো
জানো আজ আমার তোমার জন্য বড্ড করুণা হচ্ছে।যেই আমিকে তুমি ৫ বছর আগে নিজের খেলনা মনে করেছিলে।তোমার চাইনা বলে তোমার বেস্টফ্রেন্ড কে গিফট করেছিলে।আজ সেই আমির জন্যই তুমি কঁাদছো।একদিন এই আমিকেই তুমি ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলে।

রিয়ানার কান্না আরও বেরে গেলো। এবার সে নিরবকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পরলো।নিরব কিছু বলছে না।চুপ করে আছে।

রিয়ানা একটু স্বাভাবিক হয়ে বললো তুমি এগুলো কিভাবে জানলে? আমি কোনোদিন চাইনি এটা কেউ জানুক।

নিলার কথা মনে আছে তোমার সিহাবের ফ্রেন্ড। যে তোমাদের এই নোংরা প্ল্যানে সাহায্য করেছিলো।নিলাও যে সিহাব কে ভালোবাসত।ও তোমার আর সিহাবের বিয়ে টা মানতে পারেনি।প্রতিশোধ নিতে আমাকে সব এসে বলে দেয়।প্রুভ হিসেবে তোমার ডায়েরিটাও দেয় আমাকে যেটাতে তুমি সব লিখেছিলে। তুমি তোমার ভুলের জন্য কতগুলো জীবন নষ্ট করেছো।নিলা ভালোবাসায় এতটাই অন্ধ হয়ে গিয়েছিলো সিহাব যা বলেছে ও তাই করেছে।নিলা আমাকে বলেছিলো আমি যাতে সবাইকে সবটা বলে দেই। কিন্তু আমি চাইনি কাউকে কিছু জানাতে। এতে নিলা আরও হিংস্র হয়ে উঠে।আমাকে বলে যায় প্রতিশোধ ও নিবেই।সেদিনের পর থেকে ওর খোঁজ পাইনি আর। কোথায় যেনো চলে গেলো।

জানো তিরু না আমাকে বড্ড ভালোবাসে।আমাকে ভালো রাখতে কি না করেছে মেয়েটা।কিন্তু আজও কেনো জানি আমি ওকে পুরোপুরি ভালোবাসতে পারিনি।বেহায়া মনটাকে যে অনেক আগেই অন্য কাউকে দিয়ে দিয়েছিলাম।কিন্তু সে ওই মনটাকে টুকরো টুকরো করে ভেঙে ফেলেছে।

সাবস্ক্রাইব করুন:

নিরব রিয়ানা আর কিছু বললো না।দুজন চুপ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো।এই নিস্তব্ধতাই যেনো বলে দিচ্ছে অনেক কিছু।

সেদিনের পর থেকে রিয়ানা আর কোনো যোগাযোগ রাখেনি নিরবের সাথে।তিরুর সাথে মাঝে মাঝে কথা হয় তার।তিরু আজ ও জানেনা নিরব আর তার বিয়ের পেছনের ভয়ংকর সেই সত্যিটা।নিরব জানতে দেয়নি তাকে। কি দরকার একটা নিস্পাপ মনকে কষ্ট দেওয়ার।

নিরব তিরুও নিজের জীবনে সুখে আছে।তবুও কিছু একটার কমতি রয়েই গেছে। হ্যাঁ ঐটা নিরবের দিক থেকেই।এখোনো তার মনে কোথাওনা কোথাও রিয়ানার বসবাস আছে। প্রথম ভালোবাসা তার।

কেটে যায় অনেকগুলো বছর..
রিয়ানা ইজি চেয়ারে বসা।চুলে পাক ধরেছে চোখেও এখন আগের মতো বেশি দেখেনা।হাতে ডায়েরি। যার উপরে বড় বড় করে লেখা আমার দিলবার রিয়ানা।
ডায়েরিতে আছে সিহাবের হাজারো না বলা কথা। রিয়ানাকে নিয়ে তার লাখ লাখ অনুভূতি।

"ভালোবাসার প্রথম অনুভূতি আমার তুমি। বুঝ হওয়ার পর থেকে আমি শুধু তোমাকেই ভালোবেসেছি।কিন্তু তোমার মন পাওয়া কি এত সোজা? যেদিন তোমার বাসায় তোমার আর নিরবের বিয়ে ঠিক করেছিলো অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম এই বুঝি তোমাকে হারিয়ে ফেললাম।কিন্তু তুমি যেদিন এসে আমাকে বললে তুমি চাওনা এই বিয়ে করতে আর তিরু যেহেতু নিরবকে ভালোবাসে ওদের বিয়েটা যাতে কোনোভাবে দিয়ে দেওয়া যায়।আমি ওইদিন যে কি খুশিটাই না হয়েছিলাম।কিন্তু এর পর থেকে তোমার মধ্যে কিছু পরির্তন লক্ষ্য করি।বুঝতে পারছিলাম তুমি নিরবকে পছন্দ করা শুরু করেছো।আমার মনে তখন ভয় ঢুকে গেলো।যেভাবেই হোক নিরব আর তিরুর বিয়ে দিতেই হবে।তাইতো বিয়েরদিন তোমার গাড়ির চাকা পাঞ্চার করে দিয়েছিলাম।যাতে তুমি বিয়েতে না পৌঁছাতে পারো।তুমি আমাকে যে কল দিয়েছিলে আমি ইচ্ছা করে ধরিনি।কিন্তু ওইটা আমার বিশাল বড় ভুল ছিলো। তারপর থেকে তুমি চুপ হয়ে গেলে।বুঝতে পেরেছিলাম আমার সাথে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছো।তোমাকে আমি তোমার থেকেক ভালো বুঝতাম আমার দিলবার যে তুমি। ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার জন্য একটু স্বার্থপর ই তো হয়েছিলাম।"

আজ রিয়ানার নিজেকে বড্ড অভাগী আবার ভাগ্যবতীও মনে হচ্ছে।মানুষ তো একজনের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য মরে আর সে তো ২ জনের ভালোবাসা পেয়েও ধরে রাখতে পারলোনা।

ডায়েরিতে আরও কিছু লিখা ছিলো।কিন্তু রিয়ানা তা পড়তে পারলো না।তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসলো।মাথা ঝিম ঝিম করছে।মনে হচ্ছে সে অন্য কোনো জগতে আছে যেখানে কোনো কষ্ট নেই। না আছে কোনো না পাওয়া।তার বড্ড ঘুম পাচ্ছে। শান্তির ঘুম।সিহাব তাকে নিতে এসেছে। রিয়ানা সিহাবের বুকে মাথা রেখে এক শান্তির ঘুম দিলো।

(ডায়েরিতে লেখা বাকি অংশ
নিলা মনে হয় আমাদের খুব বড় ক্ষতি করে ফেলবে।ও আমাকে ভালোবাসত আমি জানতাম।ও আমাদের বিয়েটা মেনে নিতে পারেনি। ও তোমাকে আমার জীবন থেকে সরানোর অনেক চেষ্টা করেছে।আমি পুলিশের কাছেও গিয়েছি কিন্তু আমার কাছে কোনো প্রুভ ছিলো না। ও পাগল হয়ে গিয়েছে আমাকে পাওয়ার জন্য।আমাকে বলেছে আমি যাতে ওকে বিয়ে করি নাহলে ও আমাদের অনেক বড় ক্ষতি করে দিবে। ও আমাকে মেরে ফেলার ও ট্রাই করেছে এতটাই হিংস্র হয়ে গিয়েছে ও।আমি যদি ওর না হই তাহলে ও সব শেষ করে দিবে। আমার বড্ড ভয় লাগছে।তোমাকে হাড়ানোর ভয় তোমার থেকে দূরে যাওয়ার ভয়")

by tani tass ritt
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url