করোনা ও আমাদের শ্বশুরবাড়ি ( কাল্পনিক )
রুপন্তীর আম্মুরে সকাল সকাল কোথাও দেখছি না।
এদিকে জরিনা খালা ঈদের দিনে মন খারাপ করে বসে আছে।
জিজ্ঞেস করাতে বললো,
আর জামাইর করোনা ধরা পড়ছে। হাসপাতালে আইসোলেশনে আছে হেতে।
আহা বেচেরা! আচ্ছা টেনশন নিওনা ঠিক অয় যাবে।
ভাইজান আরে আর জামাইর কাছে হাসপাতালে লই চলেন।
রাস্তায় আর্মির কড়া পাহারা তবুও লুকিয়ে লুকিয়ে জরিনা খালারে হাসপাতালে নিয়া গেলাম। গিয়ে দেখি আইসোলেশন ওয়ার্ডে সব আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজনে ভর্তি। সাথে রুপন্তীর আম্মুও। জরিনা খালাসহ সবাই চিল্লাইয়া বলে উঠলো সারপ্রাইজ!
আমি বললাম, কি হচ্ছে এসব?
রুপন্তীর পাপ্পা আমি রাতেই চুপিচুপি এখানে চলে এসেছে। আম্মা পুরা আইসোলেশন ওয়ার্ড কিনে নিয়েছে ঈদ করার জন্য। রোগী সবাইরে অন্য একটা ওয়ার্ডে শিফট করে দেয়া হয়েছে।
সো কোন ভয় নাই!
রুপন্তীর আম্মুর কথা শুনে আমি রেগে যাবো অমন সময় শাশুড়ি আম্মা পেয়ে বসলো।
শাশুড়ি আমার এক্কান চীজ যখন আমি তার সামনে পড়ি বেহুদা কথা শুনাইয়া মান সম্মান একবারে টাইন্না লেভেলে নিয়ে আসে। এবারও তার ব্যতিক্রম হলনা।
মুখের কোণায় ঘন করে জর্দা দিয়ে পান চিবুতে চিবুতে বলল,
কি বাবাজী! গোসল করোনা কয় দিন হয়ছে? গাঁয়ে তোমার পাটার গন্ধ। আর চুলগুলো এতো আওলা জাওলা ক্যা? আর কদিন হইল দাঁত ব্রাশ করো না? মনে হচ্ছে তোমার দাঁতে জন্ডিস হয়ছে হলুদ কালার ধারণ করছে। করোনা রোগীর মতো লাগে। আমার মেয়ের জীবনডারে তো খাইলা। এখন তো আমার নাতনির সামনে একটু স্মার্ড হইয়া চল।
জ্বে আম্মাজান।
জ্বে আম্মাজান কি আবার। মুরুব্বীদের পায়ে ধরে সালাম করতে হয় জানোনা? বুদ্ধির সাথে আদব কায়দা ও গেল নাকি?
পা ধরে সালাম করার সময় ইচ্ছে করে পা দু খান ধরে মুরগির মতন হেচকায় টান দিয়ে ফালায় দেয়। যাক নিজেরে কনট্রোল করলাম।
পাশে আমার শ্বশুর আব্বা ,
ব্যাটার অনেক ট্যাহা কিন্তু কৃপটা। হাত থেকে পানিও বের হয়না। কিন্তু আমিও ঢের সিয়ানা এক হাজার টাকা ঠিক ই বের করে নিয়েছি। খটকা তো তখনি লাগল শ্বশুরআব্বা চলে যাওয়ার পর টাকাটা উল্টিয়ে দেখি পেছনে আটা দিয়ে ছেড়া নোটকে কোনভাবে জোড়া লাগিয়ে রাখছে।
শালিরা আশপাশে ঘুরঘুর করছে কৌশল অবলম্বন করে কেটে পরতে হবে তা না হলে বড় অংকের মারা খাবো। পর্দা ঘেঁষে মুখে মাস্ক লাগিয়ে পালাচ্ছিলাম তখন এক শালি পেছন থেকে ধরে বসল।
কি দুলাভাই, পালাচ্ছেন কোথায়?
না মানে, আইসোলেশন ওয়ার্ড টা ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম।
হুম, জানি জানি। এ তোরা কে কোথায় আছিস এদিক আস, দোলাভাইরে সাইজ করতে হবে।
এভাবে, সব শালীরা একটা একটা করে কচকচে পাঁচশো টাকার নোট নিয়ে গেল।
পরে আমার শালা আইছে। পেছন থেকে দুলাভাই বলে চিৎকার দিয়ে রীতিমতো আমাকে ভয় লাগিয়ে দিয়েছে। দেখতেও কুচকুচে কালো।
রুপন্তীর আম্মু ফর্সা, শালীগুলো ফর্সা ফর্সা কিন্তু এই কাইল্লা কালা কেমনে হয়ছে সেটা এখনো রহস্য রয়ে গেল। রুপন্তীর আম্মু একবার অবশ্য বলেছিল সে জন্মের সময় শাশুড়ি আম্মা কোক মনে করে কলমের কালি খাইয়া ফেলছিলো!
দুলাভাই সালামি দেন?
এই নে ধর একহাজার টাকা।
ফাটা নোট আমি শালারে দিয়া দিছি!
সাবস্ক্রাইব করুন:
হঠাৎ জরিনা খালা দৌড়াইয়া আসলো।
ভাইজান আমার জামাই ঘুমাইতেছিল কেডা জানি হাত ঠ্যাং বাইন্ধা তারে উঠাইয়া হাসপাতালে নিয়া গেছে।
জরিনা খালা আমি এমার্জেন্সি করোনা হেলথ কেয়ার সার্ভিসে তোমার জামাইর ছবি তুলে পাঠিয়ে দিয়েছে। ওরা ওদের কাজ করতেছে।
আইসোলেশন ওয়ার্ডে হঠাৎ এক লোক কে দেখলাম ঘোরাঘুরি করছে। কৌতূহল নিয়ে তার কাছে গেলাম। সে আমাকে বললো,
ভাই, এরা কারা?
বইলেন আর ভাই। আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এই লকডাউন পরিস্থিতিতেও তাদের একসাথে ঈদ করা লাগবে। বড্ড প্যারায় আছি।
ভাই আমিও বেশ জামেলা আছি আমার বউটারে নিয়ে। বা মা ছাড়া কিছুই বুঝে না। তার জ্বালায় আমি নিজে বাসা থেকে মিছে মিছে করোনা রোগী হয়ে বের হয় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে আছি।
ও আচ্ছা। আসেন ভাই কোলাকুলি করি।
কোলাকুলি করে লোকটারে নিয়ে অনেক্ষণ গল্প করলাম। সবার সাথে পরিচয়ও করিয়ে দিলাম।
কিছুক্ষণ পর মাস্ক পরিহিতা একজন ডাক্তার এসে লোকটাকে বললেন,
আপনার জন্য একটা ব্যাড নিউজ, এতদিন রোগীদের সাথে থাকতে থাকতে আপনিও করোনায় পজিটিভ!
লেখা : Md. Naim Uddin
এদিকে জরিনা খালা ঈদের দিনে মন খারাপ করে বসে আছে।
জিজ্ঞেস করাতে বললো,
আর জামাইর করোনা ধরা পড়ছে। হাসপাতালে আইসোলেশনে আছে হেতে।
আহা বেচেরা! আচ্ছা টেনশন নিওনা ঠিক অয় যাবে।
ভাইজান আরে আর জামাইর কাছে হাসপাতালে লই চলেন।
রাস্তায় আর্মির কড়া পাহারা তবুও লুকিয়ে লুকিয়ে জরিনা খালারে হাসপাতালে নিয়া গেলাম। গিয়ে দেখি আইসোলেশন ওয়ার্ডে সব আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজনে ভর্তি। সাথে রুপন্তীর আম্মুও। জরিনা খালাসহ সবাই চিল্লাইয়া বলে উঠলো সারপ্রাইজ!
আমি বললাম, কি হচ্ছে এসব?
রুপন্তীর পাপ্পা আমি রাতেই চুপিচুপি এখানে চলে এসেছে। আম্মা পুরা আইসোলেশন ওয়ার্ড কিনে নিয়েছে ঈদ করার জন্য। রোগী সবাইরে অন্য একটা ওয়ার্ডে শিফট করে দেয়া হয়েছে।
সো কোন ভয় নাই!
রুপন্তীর আম্মুর কথা শুনে আমি রেগে যাবো অমন সময় শাশুড়ি আম্মা পেয়ে বসলো।
শাশুড়ি আমার এক্কান চীজ যখন আমি তার সামনে পড়ি বেহুদা কথা শুনাইয়া মান সম্মান একবারে টাইন্না লেভেলে নিয়ে আসে। এবারও তার ব্যতিক্রম হলনা।
মুখের কোণায় ঘন করে জর্দা দিয়ে পান চিবুতে চিবুতে বলল,
কি বাবাজী! গোসল করোনা কয় দিন হয়ছে? গাঁয়ে তোমার পাটার গন্ধ। আর চুলগুলো এতো আওলা জাওলা ক্যা? আর কদিন হইল দাঁত ব্রাশ করো না? মনে হচ্ছে তোমার দাঁতে জন্ডিস হয়ছে হলুদ কালার ধারণ করছে। করোনা রোগীর মতো লাগে। আমার মেয়ের জীবনডারে তো খাইলা। এখন তো আমার নাতনির সামনে একটু স্মার্ড হইয়া চল।
জ্বে আম্মাজান।
জ্বে আম্মাজান কি আবার। মুরুব্বীদের পায়ে ধরে সালাম করতে হয় জানোনা? বুদ্ধির সাথে আদব কায়দা ও গেল নাকি?
পা ধরে সালাম করার সময় ইচ্ছে করে পা দু খান ধরে মুরগির মতন হেচকায় টান দিয়ে ফালায় দেয়। যাক নিজেরে কনট্রোল করলাম।
পাশে আমার শ্বশুর আব্বা ,
ব্যাটার অনেক ট্যাহা কিন্তু কৃপটা। হাত থেকে পানিও বের হয়না। কিন্তু আমিও ঢের সিয়ানা এক হাজার টাকা ঠিক ই বের করে নিয়েছি। খটকা তো তখনি লাগল শ্বশুরআব্বা চলে যাওয়ার পর টাকাটা উল্টিয়ে দেখি পেছনে আটা দিয়ে ছেড়া নোটকে কোনভাবে জোড়া লাগিয়ে রাখছে।
শালিরা আশপাশে ঘুরঘুর করছে কৌশল অবলম্বন করে কেটে পরতে হবে তা না হলে বড় অংকের মারা খাবো। পর্দা ঘেঁষে মুখে মাস্ক লাগিয়ে পালাচ্ছিলাম তখন এক শালি পেছন থেকে ধরে বসল।
কি দুলাভাই, পালাচ্ছেন কোথায়?
না মানে, আইসোলেশন ওয়ার্ড টা ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম।
হুম, জানি জানি। এ তোরা কে কোথায় আছিস এদিক আস, দোলাভাইরে সাইজ করতে হবে।
এভাবে, সব শালীরা একটা একটা করে কচকচে পাঁচশো টাকার নোট নিয়ে গেল।
পরে আমার শালা আইছে। পেছন থেকে দুলাভাই বলে চিৎকার দিয়ে রীতিমতো আমাকে ভয় লাগিয়ে দিয়েছে। দেখতেও কুচকুচে কালো।
রুপন্তীর আম্মু ফর্সা, শালীগুলো ফর্সা ফর্সা কিন্তু এই কাইল্লা কালা কেমনে হয়ছে সেটা এখনো রহস্য রয়ে গেল। রুপন্তীর আম্মু একবার অবশ্য বলেছিল সে জন্মের সময় শাশুড়ি আম্মা কোক মনে করে কলমের কালি খাইয়া ফেলছিলো!
দুলাভাই সালামি দেন?
এই নে ধর একহাজার টাকা।
ফাটা নোট আমি শালারে দিয়া দিছি!
সাবস্ক্রাইব করুন:
হঠাৎ জরিনা খালা দৌড়াইয়া আসলো।
ভাইজান আমার জামাই ঘুমাইতেছিল কেডা জানি হাত ঠ্যাং বাইন্ধা তারে উঠাইয়া হাসপাতালে নিয়া গেছে।
জরিনা খালা আমি এমার্জেন্সি করোনা হেলথ কেয়ার সার্ভিসে তোমার জামাইর ছবি তুলে পাঠিয়ে দিয়েছে। ওরা ওদের কাজ করতেছে।
আইসোলেশন ওয়ার্ডে হঠাৎ এক লোক কে দেখলাম ঘোরাঘুরি করছে। কৌতূহল নিয়ে তার কাছে গেলাম। সে আমাকে বললো,
ভাই, এরা কারা?
বইলেন আর ভাই। আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এই লকডাউন পরিস্থিতিতেও তাদের একসাথে ঈদ করা লাগবে। বড্ড প্যারায় আছি।
ভাই আমিও বেশ জামেলা আছি আমার বউটারে নিয়ে। বা মা ছাড়া কিছুই বুঝে না। তার জ্বালায় আমি নিজে বাসা থেকে মিছে মিছে করোনা রোগী হয়ে বের হয় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে আছি।
ও আচ্ছা। আসেন ভাই কোলাকুলি করি।
কোলাকুলি করে লোকটারে নিয়ে অনেক্ষণ গল্প করলাম। সবার সাথে পরিচয়ও করিয়ে দিলাম।
কিছুক্ষণ পর মাস্ক পরিহিতা একজন ডাক্তার এসে লোকটাকে বললেন,
আপনার জন্য একটা ব্যাড নিউজ, এতদিন রোগীদের সাথে থাকতে থাকতে আপনিও করোনায় পজিটিভ!
লেখা : Md. Naim Uddin