গল্প - ইদের জামা।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি ছোট বোনটা বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে ঘুমে দেখে হয়তো দাঁড়িয়ে আছে, কখন চোখ মেলে দেখবো তাকে। ছোট হলেও সব কিছু ভালো করেই বুঝতে পারে। ভাইয়া ঘুমালে ডাক দেওয়া যাবে না, কখনো মোবাইল বিছানায় রেখে কোথায় গেলে কল আসলে রিসিভ না করে ডাক দিয়ে বলবে, ভাইয়া কল দিছে কেউ। খাবার খেতে দেরি হলে বসে থাকবে ভাইয়ার সাথে খাবে। ডাক দিতে থাকবে। বয়স আর কত ৮-৯বছর হবে এখন।

চোঁখ মেলেই যখন দেখলাম তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি বুঝতে পারছি কেনো দাঁড়িয়ে আছে।
_কিছু বলবি?
_না, ভাইয়া উঠো আম্মু সেমাই রান্না করছে। খাবে না?
_আমি খাবো না।

তাকিয়ে দেখছি তার চোঁখে পানি টলমল করছে।

_আচ্ছা, যাই।

আসলে এসে দাঁড়িয়ে আছে নতুন জামার জন্য। গতকাল বিকালেই বলছে ইদের জামা কিনে দিবো না ? আমি বাজার যাওয়ার সময়ই রুমে এসে বলছে গতকাল।

আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে ছোট বোনকে ডাক দিয়ে বললাম, ভাইয়া তোর জামা আনছি দেখে যা।
এক দৌড়ে এসে হাজির আমার সামনে। গতকাল রাতে আসার সময় জামা নিয়ে আসছি। আমার হাতে জামাটা দেখে, অনেক খুশীতে হাসতেছে।
জামাটা পরিয়ে দিলাম বোনকে। অনেক আগেই উঠে সে গোসল করে রেডি হয়ে বসে ছিলো। ছোট ভাইকে একটা শার্ট দিলাম।

মা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর বলে, রানা তুই কিছু কিনস নাই?
_না মা। আমার লাগবে না। তোমার জন্য একটা কাপড় আনছি। দেখো পছন্দ হয় কিনা?

মা চোঁখের পানি ছেড়ে বললো, " আমার জন্য আনতে গেলি কেন? তোর একটা ভালো কাপড় নাই। কিনে নিলে পারতি! "

একটা হাসি দিয়ে মাকে বললাম, " মা,আমার কিছুই লাগবে না। তোমরা খুশী হলেই হয় "

তিন ভাই-বোন বোন মিলে বসলাম সেমাই খেতে। আজকে যে একটা ইদের দিন।

গোসল করে যাবো ইদের নামাজ পড়তে। রুমে এসে আলমারি থেকে পুরাতন পাঞ্জাবিটা বের করে হাতে নিতে চোঁখ দিয়ে পানি পড়ছে আমার। এই পাঞ্জাবি'টায় কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে।
বাবার দেওয়া শেষ ইদের জামা ছিলো আমার জন্য। আজকে হয়তো থাকলে অনেক আনন্দ করতাম সবাই।

গত রোজার ইদের আগের রোজার ইদে আমায় কিনে দিয়েছেন এই পাঞ্জাবিটা।
সে ইদে সবাই কত আনন্দ করেছিলাম। বাবার সাথে সেটাই ছিলো শেষ ইদ।
সাবস্ক্রাইব করুন:

বাবা একটা অফিস কেরানী ছিলো। যা বেতন পেতো এতে আমাদের সুন্দরই জীবন চলে যেতো।
২বছর আগে ইদের পর পরই বাবার রক্তে ক্যান্সার ধরা পড়ে।যা জমানো ছিলো টাকা তা দিয়ে ৭-৮মাস চিকিৎসা করার পরই বাবা মারা যায়। আমরা একবারেই অসহায় হয়ে পড়ি। ৪জন মানুষের খাবার জোগাড় করতে আমি হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি।

পড়াশোনা ছেড়ে শুরু করলাম দোকানের কাজ। মাসিক যা পাই তা দিয়ে কোন রকম বেঁচে আছি। ধানের জমি আছে অল্প কিছু তাতে ধান চাষে যা হয় চাউল কোন রকমই চলি।
ইদের আগে কাপড় দোকানে কাজ ভালো চলে। তাই রোজার মাস পুরোটা কাপড় দোকানে কাজ করি। পুরো মাসের হিসাব গতকাল রাতে করে টাকা দিয়েছে । সেখান থেকেই সবার জন্য কাপড় আর সমান্য কিছু বাজার করে আনছি। এ বছরে দোকানীদের৷ বেচাকেনা ভালো হয় নি করোনায় সব কিছু বন্ধ।

নানান কথা ভাবছি বাবার দেওয়া সেই ইদের পাঞ্জাবি হাতে নিয়ে।

তখনই ছোট ভাই আসলো বলে,"ভাইয়া নামাজের সময় হয়ে গেছে চলে যাই। "

চোঁখের পানি মুছে। বাবার দেওয়া ইদের জামা পরেই চললাম ইদের নামাজ পড়তে। ছোট বোনটাও চললো আমাদের সাথে ইদের নামাজ পড়ার মাঠে। হয়তো বাবার মতো পরিবারের সবার মুখে হাসি ফুটাতে পারি না। তবুও চেষ্টা কম করি না। নামাজ শেষে আবার বাবার কবরে দোয়া পড়ে ফিরবো। বাবার দেওয়া সেই ইদের জামা পড়েই।

লেখা -সোলাইমান রানা।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url