রম্যগল্প: বুদ্ধি তুমি কার by Shukkur Ali

 একদিন বিকেল বেলায় আমি আর আমার বন্ধু রবি রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে বসে চা খেতে খেতে গল্প করছিলাম।

রবি - জানিস শুক্কুর,আমি আমার দীর্ঘ ২৫ বছরের জীবনে এখনো পযর্ন্ত কোনো ভুল কাজ করিনি। এবং আমার বিশ্বাস আমি তোর থেকে হাজার গুণ বেশি বুদ্ধিমান..।

আমি ওকে সঙ্গে সঙ্গে থামিয়ে দিয়ে - না বন্ধু! এটা তোর পুরোপুরি ভুল ধারণা।

রবি আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে - মানে?

আমি - মানে হচ্ছে তুই আট,দশটা ছেলের মতো সাধারণ বুদ্ধি নিয়েই এই পৃথিবীতে এসেছিস।

রবি - তার মানে তুই কী বলতে চাচ্ছিস,আমি তোর মতো একটা গরু?

আমি - হুম,তা ব্যাপারটা অনেকটা সেরকমই বলতে পারিস। কারণ বাংলায় একটা কথা রয়েছে - রতনকে রতন চিনে। আমার মতো রতনকে না চিনলে তুই কী আমার মতো একটা গরুর সঙ্গে মিশতি?

রবি কিছুক্ষণ চুপ থেকে - বেশ,তুই তাহলে প্রমাণ কর আমার বুদ্ধি তোর থেকে কম। যদি প্রমাণ করতে পারিস তাহলে আমি তোকে আমার গুরু মানবো। এবং সারাজীবন তোর বুদ্ধিতে চলবো।

আমি - আচ্ছা,ঠিক আছে। তাহলে আমি শৈশব থেকেই শুরু করি।

রবি - শৈশব থেকে কেন? 

আমি - কারণ শৈশবে তুই আমার শনি ছিলি, এখন রবি হয়েছিস! তাই ছোটবেলা থেকেই শুরু করছি।

রবি - ধ্যাৎ! বাজে না বকে মূল বিষয়ে আয়।

আমি - রবি,তোর কী মনে আছে ছোটবেলায় তুই আর আমি একসঙ্গে অনেক রকমের খেলা খেলেছি?

রবি - হুম, মনে আছে তো। কিন্তু শৈশবের খেলার সঙ্গে আমার বুদ্ধির কী সম্পর্ক?

আমি - সম্পর্ক আছে , আমরা ছোটবেলায় একজন আরেকজনকে দেখে অনুকরণ করতাম। তুই অন্যদেরকে যা যা করতে দেখতি সেগুলো আবার নিজে অনুকরণ করে পাড়ায় হিরো সাজার চেষ্টা করতি। 

আর বন্ধুত্বের চক্করে পড়ে আমাকেও বেশ কয়েকবার তোর সঙ্গে তাল মেলাতে হয়েছে। 

এই যেমন তোকে শৈশবে কোনো এক গাধা বলেছিলো টয়লেটের কমোডে টাকা ফেললে সেই টাকা নাকি দিগুণ হয়! তোর খপ্পড়ে পড়ে আমাকেও এটা করতে হয়েছে। তবে আমি মাত্র দুই টাকা ফেলেছিলাম।

ব্যাপারটা এই পযর্ন্ত হলে ঠিক ছিলো। কিন্তু এরপর তুই যা করলি,সত্যি সেটা মনে পড়লে এখনো আমার হাসি পায়। টাকা দিগুণ হয়েছে কিনা সেটা দেখার জন্য তুই সরাসরি কমোডের ভিতরেই হাত ঢুকিয়ে দিয়েছিলি।

রবি মাথা চুলকাতে চুলকাতে - ইয়ে মানে,তখন আমি বাচ্চা ছিলাম। তাই না বুঝেই,,,।

আমি - আপনি এতটাও বাচ্চা ছিলেন না! তখন আপনার বয়স ছিলো দশ বছর।

রবি - আচ্ছা এ বিষয়টা বাদ দে, অন্য আরেকটা বল।

আমি - আচ্ছ রবি বলতো,বাচ্চাকালে আমরা কোন জিনিসটা সবচেয়ে বেশি মুখ দিয়ে ফুলিয়েছি?

রবি - মুখ দিয়ে সবচেয়ে বেশি কী ফুলিয়েছি? অবশ্যই বেলুন।

আমি - হ্যাঁ, আর সেই সময় কিন্তু তিন প্রকারের বেলুন ছিলো। এর মধ্যে দুটো ছিলো বাচ্চাদের জন্য। আর আরেকটি ছিলো বড়দের জন্য। আর আমরা এই তিন শ্রেণির বেলুনই মহা আনন্দে মুখ দিয়ে হাওয়া ভরে ফুলিয়েছি আর নিজেদের দম ফুরিয়েছি।

রবি কী যেন একটা বলতে যেয়ে চুপ করে যায়। কারণ আমি বড়দের বেলুন বলতে ঠিক কোন বেলুন বুঝিয়েছি সেটা ও বুঝতে পেরেছে।

রবি তার গোলগাল মুখটা আমার কানের কাছে এনে - বড়দের বেলুন বলতে তুই কী ক*ডমের কথা বলছিস ?

আমি আর রবি আস্তেই কথা বলেছিলাম। কিন্তু তারপরও কীভাবে যেন চায়ের দোকানে বসা ছেলেটা আমাদের সব কথা শুনে ফেলেছে। সে আমাদের সব কথা শুনে সে তার ৩২টা দাঁত বের করে একটা উজ্জ্বল হাসি দিলো।

চায়ের দোকানদার - ভাইজান, মুইও ছোডোকালে আপনাগো লাহান বেলুন ভাইবা ওইটা অনেক ফুলাইছি।আবার কহনো কহনো ঔসধের দোকান থাইকা এক টিহা দিয়া দুইডা করে কিইন্না ফুলাইতাম। 

তহন পোলাপান ছিলাম তাই জানতাম না এইডা কোন কামে লাগায়,তয় এহন আমি সব জানি। আর এহন আমি এইডা নিজে বেবহার করি। এহন আমার এক বছরের একটা পোলা আছে,ওর নাম কদু।

আমি আর রবি একজন আরেকজনের মুখের দিকে  ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি। কারণ আমাদের সামনে যে ছেলেটা বসে রয়েছে তার বয়স বিশ বা একুশের বেশি হবে না ।

বয়সের দিক দিয়ে চিন্তা করলে ছেলেটা আমাদের থেকে চার বছরের ছোট। অথচ সে আমাদের আগে বিয়ে করে এক বাচ্চার বাবাও হয়ে গেছে। আর আমরা এখনো পযর্ন্ত কোনো মেয়েকে বউ তো দূরে থাক, গার্লফ্রেন্ডও বানাতে পারলাম না ।

এই দুঃখে আমি মনেমনে একটা কবিতা আওরাই - পাচ্ছি না চাকরি,হচ্ছে না খাপ, বাড়িতে ফিরলেই মা বলে এবার অন্তত একটা বিয়ে কর বাপ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url