সাজেক ভ্যালি রাঙ্গামাটি ভ্রমণ গাইডঃ কখন-কীভাবে যাবেন জেনে নিন

সাজেক শব্দটা শুনলেই ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের চোখে ভেসে ওঠে মেঘময় এক পৃথিবীর ছবি। যেখানে প্রকৃতি তার রূপ ক্ষণে ক্ষণে বদলায়। কখনো তীব্র শীত আবার মুহূর্তেই নামে বৃষ্টি। সাজেক গেলে মনে হবে এটি মেঘেদের রাজ্য। চোখের পলকেই চারপাশ সাদাকালো মেঘে ঘোমটা টানে। এটা যেন মেঘের উপত্যকা। বর্তমান সময়ে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য এটি। বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত সাজেক ইউনিয়নের একটি বিখ্যাত পর্যটন আকর্ষণ।

 



সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাজেকের উচ্চতা ১৮০০ ফুট উচু। এটি রাঙামাটি জেলার সর্বউত্তরের মিজোরাম সীমান্তে অবস্থিত। আয়তন ৭০২ বর্গমাইল। সাজেক ভ্যালির অবস্থান রাঙামাটি জেলায় তবে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে সাজেক অনেক সহজে যাওয়া যায় এবং যাতায়াত সুবিধা অনেক। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার আর দীঘিনালা থেকে ৪০ কিলোমিটার। কখনো সময় পেলে ঘুরে দেখে আসতে পারেন এই নৈসর্গিক উপত্যকায়। তবে সাজেক ভ্যালির আসল রূপ দেখার জন্য সেরা সময় হচ্ছে বর্ষার শেষে এবং শীতে। আগে সচরাচর শুক্র ও শনিবার সাজেকে পর্যটকদের ভিড় বেশি থাকতো। কিন্তু বর্তমানে সারা সপ্তাহজুড়েই থাকে পর্যটকদের ভিড়।


ঢাকা থেকে সাজেক যেভাবে যাবেনঃ

ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি বাসে যেতে পারেন। শ্যামলী, হানিফ, এস আলম, সৌদিয়া ও শান্তি ইত্যাদিসহ বিভিন্ন পরিবহনের বাস ঢাকা থেকে চলাচল করে। গাবতলী, কলাবাগানসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গাতে রয়েছে এসব বাসেগুলোর কাউন্টার। খাগড়াছড়ি যেতে সময় লাগে প্রায় ৮ ঘণ্টার মতো।

খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকে যেতে হবে চান্দের গাড়িতে করে, যা একধরণের খোলা জিপ। এই গাড়িতে আসন সংখ্যা প্রায় ১২টি। সাজেক যেতে চাইলে প্রথমে আপনাকে যেতে হবে দীঘিনালায়। তারপর দীঘিনালায় নেমে আপনি চাইলে আধা ঘণ্টার জন্য ঘুরে আসতে পারেন পাশের হাজাছড়া ঝর্ণা থেকে। সঙ্গে সেখানে সেরে নিতে পারেন আপনার গোসলটাও। পর্যটকেরা রাস্তা থেকে সামান্য ট্রেকিং করে গিয়ে ঝর্ণাটির সৌন্দর্য উপভোগ করে থাকে।


দীঘিনালা থেকে আপনাকে যেতে হবে বাগাইহাট। তারপর সেখান থেকে মাচালং হাট দিয়ে আপনি সরাসরি পৌঁছে যাবেন সাজেকে। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যেতে সময় লাগে প্রায় আড়াই ঘণ্টার মতো। আর আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তাধরে চলা জার্নিটিও সাজেক ট্যুরের অন্যতম আকর্ষণ যা আপনাকে ভুলিয়ে দেবে পথের ক্লান্তি।


সাজেক বিলাস করবেন আর ঘুরবেন যেভাবে:

দীর্ঘ যাত্রার শেষে সাজেক পৌঁছে খাওয়া-দাওয়া করার পর আপনাকে একটু বিশ্রাম নিবেন। আর সাজেকের কাঠফাঁটা দুপুরের রোদে ঘোরাঘুরি না করে রোদ পড়ার জন্য অপেক্ষা করতে পারেন। বিকেলে জিপে করে আপনি ঘুরে আসতে পারেন সাজেক ভ্যালির আরও ভেতর থেকে। সেখানে গেলে আপনি একটু উঁচু টিলায় উঠে উপভোগ করতে পারবেন সূর্যাস্ত। এখানের সন্ধ্যা নামে অপরূপ এক সৌন্দর্য নিয়ে।এখানে সর্বত্র মেঘ, পাহাড় আর সবুজের দারুণ মিতালী চোখে পড়ে।

ভোরে সূর্যোদয় দেখতে চাইলে খুব ভোরে উঠে অবশ্যই হ্যালিপ্যাডে চলে যাবেন। এখানে সূর্যোদয়ের সময় সোনালি আভা সাদা মেঘের ওপর যখন ঠিকরে পড়ে; তখন অসাধারণ এক দৃশ্যের অবতারণা হয়।


কংলাক পাহাড় হচ্ছে সাজেক ভ্রমণে আসা পর্যটকদের কাছে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। আর সাজেকের শেষ গ্রামটি কংলক পাড়া লুসাই জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকা। কংলাক পাড়া থেকেই কর্ণফুলী নদী উৎপত্তিস্থল ভারতের লুসাই পাহাড় দেখতে পারবেন। চাইলে রুইলুই পাড়া থেকে দুই ঘন্টা ট্রেকিং করে আপনি কমলক ঝর্ণাও দেখে আসতে পারেন। এই সুন্দর ঝর্ণাটি অনেকের কাছে সিকাম তৈসা ঝর্ণা বা পিদাম তৈসা ঝর্ণা নামেও পরিচিত।

মেঘের এই উপত্যকাকে ঘিরে এখানে দিন দিন বাড়ছে পর্যটকদের আগ্রহ। তাই সুযোগ পেলে এখানে ছুটতে চাইছে সবাই।


সাজেকে খাওয়া দাওয়াঃ

এখানের প্রায় সব রিসোর্টে খাবার ব্যবস্থা আছে তাই আগেই রিসোর্টগুলোতে বলে রাখলে তারা আপনার পছন্দের রান্না করে দিবে। আপনি চাইলে রাতে বার বি কিউও পার্টিও করতে পারেন। এছাড়া চাইলে আদিবাসীদের ঘরেও খাওয়া যায়, তখন আগে থেকেই বলে রাখতে হবে আপনি কি খাবেন, তাহলে তারা তা রান্না করে দিবে। আর সাজেকে খুব সস্তায় পেঁপে, আনারস, কলা ইত্যাদি ফল পেতে পারেন।


অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে:

  • এখানে শুধু রবি, এয়ারটেল ও টেলিটক এর নেটওয়ার্ক ভালো পাওয়া যায়।
  • যাওয়ার রাস্তা অনেক আঁকাবাঁকা ও উঁচু নিচু, তাই এই পথটা বিপদজনক।
  • জীপের ছাঁদে ভ্রমনের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন।
  • সাজেক যেতে কোন গাইডের দরকার নেই।
  • আদিবাসীদের ছবি তোলার ক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের অনুমতি নিয়ে নিবেন। অনুমতি ছাড়া কারো ছবি তুলবেন না।
  • আদিবাসী মানুষগুলি খুব সহজ সরল তাই তাদের সাথে সর্বদা ভদ্র ব্যবহার করুন ও তাদের কালচারের প্রতি সম্মান দেখান।
  • ছুটির দিনে সাজেক গেলে ঝামেলা এড়াতে আগে থেকেই (মাস খানেক) রুম বুকিং দিয়ে রাখবেন।
  • যাওয়ার পথে কয়েক জায়গায় নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প আছে। সেখানে ভ্রমণকারীদের কিছু তথ্য জমা দিতে হয়।
  • নিরাপত্তার সার্থে তাদেরকে সহযোগিতা করুন। সাথে করে নিজের জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি রাখবেন।
  • দুই তিন দিনের জন্যে সাজেক গেলে গাড়ি বসিয়ে না রেখে, শুধু যাওয়ার জন্যে গাড়ি ঠিক করুন, ফিরে আসার সময় অন্য কোন গাড়িতে ফিরতে পারবেন কিংবা দিঘীনালা থেকে ফোন করেও আপনি গাড়ি পাঠিয়ে ফেরত চলে আসতে পারবেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url