রহস্য গল্পঃ অপেক্ষা
ঘটনাটা 9 - 10 বছর আগে আমার সাথে ঘটেছিলো ।
আমার বাড়ি সিরাজগঞ্জে । সঙ্গত কারনে আমি আমার গ্রামের নামটা উল্লেখ করছিনা । বর্তমানে আমার পরিবারের সবাই ঢাকাতে থাকি । আমার বাবা একটা কোম্পানিতে চাকরি করে ।। গ্রামের বাড়িতে খুব কম যাওয়া হতো । গত চার বছর হলো আমি গ্রামের বাড়িতে যাইনা । যদিও আমার বাবা এর মাঝে একবার গ্রামে গিয়েছিলো । আমার বাবারা তিন ভাই ছিলেন । আমার বাবাই তাদের মধ্যে বড় ছিলেন । আমার কোনো ফুফি ছিলোনা । হঠাৎ একদিন গ্রাম থেকে আমার ছোট কাকুর ফোন এলো । তিনি বললেন,
সামনে শুক্রবার তার মেয়ে রুনার বিয়ে । আমাদেরকে খুব তাড়াতাড়ি গ্রামে আসতে হবে । কাকু যেদিন ফোন করেছিলো সেদিন ছিলো শনিবার । আমরা ঠিক করলাম সোমবারে গ্রামের বাড়িতে যাবো । যথারিতি সবকিছু গুছিয়ে আমরা সকাল 8টায় গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিলাম । 12:30টার দিকে আমরা সেখানে পৌঁছালাম । গিয়ে দেখলাম দাদু এবং কাকুরা মিলে গল্প করছে । আমার দাদি পাঁচ বছর আগেই মারা গিয়েছে । আমাদের দেখে তারা খুব খুশি হলো । আমাদের রুমে গিয়ে সবাই ফ্রেশ হলাম । গ্রামের পরিবেশটা আমার খুব ভালোলাগে । তাই ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুমানোর চিন্তা করলাম । এবং ভাবলাম যে ঘুম থেকে উঠে আমার ছোট বেলার বান্ধবী মিরার বাড়িতে যাবো তার সাথে দেখা করতে । যখন গ্রামে থাকতাম তখন প্রায় সময়টা ওর সাথেই কাটাতাম । এক কথায় আমরা খুব ভালো বন্ধু ছিলাম । ঘুম থেকে উঠে দেখি মাগরিবের আযান দিতে আর মাত্র 25-30 মিনিট সময় বাকি আছে । তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে মিরাদের বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলাম । আমাদের বাড়ি থেকে ওদের বাড়িতে যেতে 15 মিনিটের মত সময় লাগে । হাঁটতে হাঁটতে ভাবলাম আসার সময় মিরাকে সাথে নিয়ে আসবো এবং আমরা আজ একসাথে ঘুমাবো ও খুব মজা করবো । বলে রাখা ভালো মিরাদের বাড়িতে যেতে রাস্তার মাঝখানেএকটা মস্তবড় তালগাছ আছে । যা অনেক পুরানো ।
সেই তালগাছের কাছে একটা পুকুর আছে যেখানে আমি ও মিরা প্রায়ই বসে থাকতাম । হাঁটতে হাঁটতে সেই তালগাছের কাছে আসতেই দেখলাম যে একটা মেয়ে তালগাছের নিচে মাথাটা হাটুর মধে দিয়ে বসে আছে । আমি কিছুটা অবাক হলাম । ভাবলাম এই সন্ধার সময় তালগাছের নিচে এই মেয়েটা কি করছে?,? আমি ভাবলাম এটা মিরা নয়তো?? তাই আমি তাকে ডাক দিলাম ,,, কে ওখানে ????
তখন মেয়েটা মাথা তুললো এবং আমি দেখলাম সে আর কেউ না ,,
ও আমার বান্ধবী মিরা। বল্লাম কিরে,, এখনও এখানে বসে থাকার অভাসটা যায়নি??
ও মুচকি হেসে বলল,, আমিতো তোর জন্য দুই বছর ধরে এখানে বসে আছি । আমি একটু অবাক হলাম । ভাবলাম হয়তো আমার সাথে মজা করছে । বল্লাম চল তোদের বাড়িতেই যাচ্ছি তোকে নিয়ে আসার জন্য । আর আংকেল আন্টিকেও দেখে আসি । ও বলল, এখন বাড়িতে যাবোনা । তার চেয়ে এখানে বস দুজনে মিলে একটু গল্প করি । মিরার কথা বলার ধরনটা
একটু পাল্টে গেছে । তা ওর কথা বলার ভঙ্গিতেই বুঝতে পারলাম । কথা বলতে বলতে যে কখন মাগরিবের আজান
দিয়ে ফেলেছে তা ঠিক মনে ছিলোনা । একসময় আমি ওকে বল্লাম চল, আজ আমরা আমাদের বাড়িতে একসাথে ঘুমাবো । আংকেল আন্টির সাথে তাড়াতাড়ি দেখা করে আসি ।। মিরা বলল, চারিদিকে অন্ধকার হয়ে আসছে আমাদের বাড়িতে আজ আর যেতে হবেনা । তার চেয়ে চল তোকে তোর বাড়ি গিয়ে দিয়ে আসি । ওর কথাটা আমার কেমন যেন লাগলো । যে মিরা আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝতোনা সে কেন আজ এতদিন পর দেখা হলো তবুও আমার সাথে এমন করছে কেন??
এই কথাটা নিয়ে বেশি মাথা ঘামালামনা । তারপর দুজনে আমাদের বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলাম । বাড়ির পাশে এসে মিরা আমাকে বললো তুই যা আমি কাল আসবো।
আমার খুব খারাপ লাগলো । বল্লাম আমিনা আজ একসাথে ঘুমাতে চাইলাম?
মিরা বলল কাল থাকবো ।
কি আর করার? বল্লাম ঠিকাছে । তবে তুই এখন বাড়িতে যাবি কিভাবে?? তোর ভয় করবে না?? ও একটু জোড়ে হেসে হেসে বলল, আমিতো এখন বাড়িতে যাবোনা ।
আমি মিরার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলাম । বল্লাম যে তাহলে কোথায় যাবি? ও বলল ওই তালগাছ তলায় । এবার আমার মনের মধে কেমন যেন মোচর দিয়ে উঠল । বল্লাম বাড়ি ছেড়ে ওখানে কেন? মিরা বলল দুই বছর হলো আমি ওখানেই থাকি । তারপর হাসতে হাসতে ও চলে গেল ।
আমি আর কিছু বলার সুযোগ পেলামনা । তারপর রুমে গিয়ে দেখি সবাই মিলে গল্প করছে । আমার আম্মু আমাকে এত দেরি করে ফেরার জন্য বকা দিলো । আমি বল্লাম অনেকদিন পর গ্রামে আসলাম, ভাবলাম আমার বান্ধবী মিরার বাসায় একটু যাই । তাই গিয়েছিলাম ওকে দেখতে । কিন্তু ওদের বাড়িতে আর যাওয়া হলোনা । দেখলাম ও রাস্তার পাশের তালগাছের নিচে বসে আছে । তাই ওর সাথে গল্প করতে করতে দেরি হয়ে গেল । আমার কথা শুনে আমার দাদু এবং ছোট দুই কাকুর চোখ বড় বড় হয়ে গেল । মেঝো কাকু আমাকে বলল কি সব পাগলের মত কথা বলছিস? মিরাতো ওই তালগাছের নিচে একটা সাপের কামড়ে মারা গিয়েছে দুই বছর আগে । কাকুর কথা শুনেই আমার চারিদিকে কেমন যেন ঘোলা দেখতে লাগলাম । আমার শরীর ভয়ে কাঁপতে লাগলো । আমি আমার কানকে
বিশ্বাস করতে পারলামনা । তাহলে কি আমি ভুল দেখেছি ?
না সেটাওতো সম্ভব না । ওর কথা আমার খুব মনে পরতে লাগলো । ও যদি মারা গিয়ে থাকে তাহলে আমি কার সাথে
এতটা সময় গল্প করলাম?? অনেক প্রশ্ন আমার মনে নাড়া দিয়ে ওঠে । কিন্তু তার উত্তর আমি আজো পাইনি । এটা কতটা ভয়ের তা আমি জানিনা । তবে আমার সেই মূহূতের কথাগুলো মনে পরলে এখনো গায়ের লোম দাড়িয়ে যায় । আমার প্রচন্ড জ্বর এসেছিলো সেদিন । চারদিন পর আমি একটু সুস্থ হই ।
এর মাঝে আমার দাদু বাড়িতে একটা হুজুর এনেছিলেন এবং সে আমাকে পানিপড়া ও একটা তাবিজ দিয়েছিলো । এখনও আমার গলায় সেই তাবিজটা আছে । এর পর থেকে আমি আর কখনও মিরাকে দেখিনি...!!
লেখিকা: তিনা সরকার