প্রেম ও সিম কোম্পানির কলের গল্প

 রাত তিনটায় ঘুম ঘুম চোখে বিছানায় শুয়ে আছি। ঘুম আসি আসি করছে এমন সময় ফোনে ম্যাসেজের শব্দ বেজে উঠলো। ফোন টেবিলের উপরে রাখা ছিল, বিছানা থেকে উঠতে ইচ্ছা করছিল না। আমি চুপচাপ শুয়েই রইলাম।

মিনিট দশেক পর চোখ দুটো লেগে এসেছে এমন সময় আবারও ম্যাসেজের শব্দে ফোন বেজে উঠলো। এবারও আমি না উঠে বিছানাতেই শুয়ে রইলাম। কিছুক্ষণ পর আবারও ফোন বেজে উঠলো, এইবার প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে বিছানা থেকে উঠলাম। ফোন নিয়ে দেখলাম, প্রেমিকা ম্যাসেজ পাঠিয়েছে। ম্যাসেজ পড়ে মেজাজটা তিরিক্ষি রকমের খারাপ হয়ে গেল। এতরাতে ভদ্র কেউ কাউকে ম্যাসেজ পাঠায়? আমি ফোন অফ করে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালবেলা এর একটা বিহিত করবো বলে ঠিক করলাম। রোজ এই রাত বিরাতে ম্যাসেজের শব্দ আর সহ্য হয় না।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই জিপি সীম পরিবর্তন করে বাংলালিংক সীম অন করলাম। দীর্ঘদিন থেকে জিপি সীম ব্যবহার করছিলাম, আমার প্রেমিকা কেবল আমার জিপি নম্বরটাই জানে—তাই তো বাংলালিংকে আর কখনো বিরক্ত করতে পারবে না।

দুপুরে নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছি। জামাতে দাঁড়িয়েছি এমন সময় ম্যাসেজের শব্দে ফোন বাজতে শুরু করলো। একের পর এক ম্যাসেজ আসছে তো আসছেই, শেষপর্যন্ত আমি জামাত ছেড়ে মসজিদের পেছনে গিয়ে ফোন বের করে দেখলাম, প্রাক্তন একের পর এক ম্যাসেজ পাঠিয়েই যাচ্ছে। দীর্ঘ ছয়মাস পর বাংলালিংক সীম অন করেছি, এরই মধ্যে সে খবর পেয়ে গেছে। একের পর এক ম্যাসেজে সে আমাকে নানারকম প্রলোভন দেখিয়ে যাচ্ছে যেন আমি তাকে আর ছেড়ে না যাই—কিন্তু সে আমাকে ভীষণ কষ্ট দিয়েছে, আজও সেসব দিনের কথা মনে পড়লে আমার কান্না চলে আসে। তাই তো আর দেরি করলাম না, দ্রুত বাড়ি ফিরে গেলাম। বাংলালিংক সীম ভেঙে রবি সীম অন করলাম। প্রাক্তন আমার রবি সীমের নম্বর জানে না, তাই তো আর ম্যাসেজ পাঠাতে পারবে না।

ইউনিভার্সিটির মঞ্জুর স্যার কিছুদিন থেকে ক্লাসে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে লেকচার দিচ্ছেন। তিনি তাঁর ক্লাসে ফোন ব্যবহারের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। সেজন্যে মঞ্জুর স্যারের ক্লাসে সবাই ফোন সাইলেন্ট করে রাখে। আমার ফোন সাইলেন্ট করবার প্রয়োজন পড়ে না কারণ আমার রবি নম্বর কেউ জানে না।

আজ দুপুরের ক্লাসে মঞ্জুর স্যার মার্কেটিং বিষয়ের উপর লেকচার দিচ্ছেন এমন সময় হঠাৎ আমার ফোন বেজে উঠলো। আমি দ্রুত ফোন বের করে দেখলাম, আমার আরেক প্রাক্তন ম্যাসেজ দিয়েছে। আমার মনেই ছিল না, আর কেউ না জানলেও একজন অন্তত আমার রবি নম্বরটা জানে, সে আমার প্রথম প্রেম। অনেকগুলো দিন তার সাথে আমার কেটেছে, তার অতি যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত আমি সীম বদলেছিলাম তাও একবছর আগে। বছরখানেক পর রবি সীম অন করেছি, সীম অন করার দুই তিনদিনের মাথায়ই যে সে খবর পেয়ে যাবে এই কথা কল্পনাতেও ভাবিনি। সে একের পর এক ম্যাসেজ পাঠিয়েই যাচ্ছে। ম্যাসেজে নানারকম লোভনীয় ইন্টারনেট প্যাক, মিনিট প্যাকের প্রলোভন।

আমি দ্রুত ফোন সাইলেন্ট করবার চেষ্টা করলাম কিন্তু এর আগেই ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো, মঞ্জুর স্যার ভীষণ রেগে গিয়ে দ্রুত আমার দিকে তেড়ে এসে ফোন কেঁড়ে নিয়ে রিসিভ করে লাউড স্পিকার দিলেন, এবং মঞ্জুর স্যারের মতো গম্ভীর একজন স্যারের ক্লাসেও সবাই হোহো করে হেসে দিলো। মঞ্জুর স্যার নিজেও হাসছেন। হাসবেন নাই বা কেন, ফোনে বাজছে, 

"তুমি যে আমার শুধু, তুমি যে আমার।"

কিছুক্ষণের মধ্যেই গান থেমে গেল এবং পরক্ষণেই অতি মিষ্টি কন্ঠের এক তরুনী বলে উঠলো,

"এই গানটি কলার টিউন হিসেবে সেট করতে এক চাপুন।"


~ নাহিদ হাসান নিবিড়

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url