গল্পঃ শেষ বিকেলের এক চিলতে আলো

ধূর...কিছুইতো পছন্দ হচ্ছেনা,কো্নটা যে কিনি! মুচকি হেসে মেয়েটা বললো,মা-মনি তুমি এখন আর কিছুই পছন্দ করতে পারবেনা।অনেকতো কিনেছ,এবার তুমি একটু রেষ্ট না নিলে নতুন করে আর কিছুই পছন্দ হবেনা তোমার।আমি বললাম, হ্যাঁ চল,কোথাও বসে কিছু খেয়ে,রেষ্ট নিয়ে নতুন উদ্যমে কেনাকাটা শুরু করি।মনে মনে ভাবলাম,এতটুকুন একটা মেয়ে,আমাকে কতইনা বুঝে!!
একটা খাবারের দোকানে ঢুকে,খাবারের অর্ডার দিল নীরুপমা।অধরাকে জিজ্ঞেস করল, আর কিছু লাগবে কিনা? অধরা বলল,এখন আপাতত আর কিছু লাগবেনা।

খাবার এল।খেতে খেতে ওদের সামনের টেবিলে চোখ গেল নীরুপমার।একটি লোক তাকিয়ে আছে তার দিকে।গুরুত্ব না দিয়ে,চোখের পলক পড়তেই তাকালো লো্কটির দিকে।নীরুপমা মনে মনে বলছে, আমি কি ঠিক দেখছি! হ্যাঁ,নীরুপমা ঠি্কই দেখছে।সামনের টেবিলে বসা লোকটি 'অমিত'
এতক্ষণ নীরুপমাকে দেখছিল অমিত।এখন চোখ নামিয়ে,ওর সাথে যারা আছে,তাদের সাথে কথা বলছে।

-অধরা বললো, কি হয়েছে মা-মনি?
-কই, কিছুনা মা।মাথাটা কেমন যেন লাগছে!
-অস্থির হয়ে অধরা বললো,খুব কি বেশি খারাপ লাগছে? চলো বাসায় চলে যাই।
-আরে না না ঠিক হয়ে যাবে।আমারতো যখন তখন মাথা ঘুরানোর বদঅভ্যাস সেই ছোট থেকেই।
-মা-মনি বলোনা, বেশি কি খারাপ লাগছে?
-আরে ধুর,পাকামো করিসনা। খা ...

নীরুপমার চোখ গেলো আবার অমিতের দিকে।অমিত ওদের সাথে কথা বলছে।নীরুপমা ভাবছে, ওরা কে!!? অমিতের বউ,ছেলে! হতেই পারে।তবে অমিত,তুমি কিন্তু বেশ হয়েছ দেখতে।ফেলে আসা এলোমেলো জীবনের কোন ছাপ নেই আজ তোমার মাঝে।তোমাকে দেখে বোঝাই যায়,খুব দায়িত্ববান হয়েছ তুমি।বেশ পরিপাটি।ভাল আছ নিশ্চই!

-কি হলো মা-মনি,তুমি আর খাবেনা?
-না মা, পেট ভরে গেছে।

কিছুক্ষন পর অধরা বললো, মা চলো উঠি।নীরুপমা বললো, আর কিছুক্ষন বসি মা।
অনেক বছর পর দেখছে অমিতকে নীরুপমা।তাই ওর যেতে ইচ্ছে করছেনা।
কিছুতেই ঘুম আসছেনা, অমিত,নীরুপমার ...

অমিত ভাবছে

নীরুটা আগের থেকে অনেক সুন্দর হয়েছে।অবশ্য ওতো সবসময়ই সুন্দরি ছিল,খুব পরিপাটি ছিল।আমাদের ভার্সিটিতে সবাই ওকে বেশ গোছানো মেয়ে হিসেবেই জানত।আচ্ছা,ওটা কি নীরুর মেয়ে! ধুর কি ভাবছি! ওর মেয়েইতো,কেমন মা-মনি করে ডাকল।মেয়েটা দেখতে ওর মতই হয়েছে।আজ এত বছর পর চাপা কষ্টগুলো মাথাচারা দিয়ে উঠছে যেন! নীরুকে ফিরিয়ে দিয়ে জীবনে খুব বিশাল একটা ভূল করেছি আমি।খুব কেঁদেছিল মেয়েটা,যখন ওকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। জানো নীরু,আজও তোমাকে ভুলতে পারিনি একটি দিনের জন্যও।তাইত আজও কাউকে পাশে নিতে পারিনি।তখন আমি শূন্য ছিলাম বলে তোমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।ভয় পেয়েছিলাম তোমার দায়িত্ব নিতে।কতটা কাপুরুষ আমি!!! পথে ঘুরতে ঘুরতে যখন একটা সময় আমার জীবনের মোড় ঘুরে গেল,যখন তোমার দায়িত্ব নেয়ার মত অবস্থা হল।তখন যে অনেক বেলা হয়ে গেছে নীরু ...

ভাবলাম তোমার সামনে গিয়ে দাড়াই,পরে নিজেই হেসে ফেললাম।তোমাকে ফিরিয়ে দিয়েছি আজ প্রায় ১৫-১৮ বছর হবে।এতদিনে তোমার একা থাকাটা অসম্ভব।তোমার বাচ্চারা হয়ত বড় হয়ে গেছে।নিজের ভূ্লটাকে এখনো বয়ে বেড়াচ্ছি নীরু ...
আচ্ছা,তবে ওকে একটা কল করি,খুব ইচ্ছে করছে ওর সাথে কথা বলতে ...

নিজের মনেই হেসে ফে্ললো অমিত
এ আমি কি ভাবছি!এত বছর পর ওর সুখের সংসার নষ্ট করবো নাকি আমি!!!
ঘুম আসছেনা নীরুপমারও।মনে পরে যাচ্ছে ফেলে আসা দিন গুলো...

তুমি কেন আমাকে ফিরিয়ে দিলে অমি? তুমি কি জানো আজও আমি তোমাকে নিয়েই আছি।জীবনে চলার পথে, অনেক বাঁধার মাঝে মুখ থুবড়ে পরেছি,কিন্তু তোমার জায়গায় অন্য কাউকে বসাতে পারিনি আজও।কষ্ট সহ্য করতে না পেরে, পরিবারের অসহায়ত্ব দেখে,সমাজের ঘৃনাভরা কূটুক্তি,দৃষ্টি,শুনে,দেখে অনেকটা নিরুপায় হয়েই চেষ্টা করেছিলাম তোমার পাশে অন্য কাউকে একটুখানি জায়গা দিতে,পারিনি,আমি পারিনি... আমি যে আজও তোমাকে নিয়েই আছি অমি ...
এখন আমার দিন কাটে,বাসা থেকে অফিস আর আফিস থেকে বাসা।আর ছোট বোনের মেয়ে অধরাকে নিয়ে।অধরা ছোট থেকেই আমার কাছে থাকে, খুব ভালবাসে আমাকে,দেখতেও হয়েছে আমার মতো।সারা দিনের, সারা জীবনের একাকিত্বের মাঝে ও আমাকে নতুন প্রানের ঢেউয়ে ভাসিয়ে দেয়।ছোট থেকেই ওর মা কে 'মা' আর আমাকে 'মা-মনি' বলে ডাকে।ও আছে বলেই হয়তবা এখনো বেঁচে আছি।

অমিত নীরুপমাকে ফিরিয়ে দেয়ার পর আর কোন বন্ধু-বান্ধুবের সাথে যোগাযোগ রাখেনেই।এত বছর পর অমিতকে দেখে,ওকে নিয়ে ভেবে,খুব চাইছিল ওর সাথে কথা বলতে।এরপর অমিতের পর নীরুপমাও ভা্বলো,কি দরকার এত বছর পর অমিতের সুখের সংসারে ফাটোল ধরাবার!কিন্তু অমিতের মত নীরুপমাও ভূল বুঝলো।অমিতের সাথে যারা ছিল,তারা অমিতের চাচাত বোন আর তার ছেলে...

সাবস্ক্রাইব করুন:

লিখেছেন - নিপা জামান।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url