গল্পঃ অপূর্ণ ভালবাসা

রোহান আর রিমি কুয়েট ক্যাম্পাসের মানিক জোড়।ক্যাম্পাসের সর্বত্র-চটপটির দোকান, ক্যাফেটেরিয়া ঢু মারলেই এদের খুনসুটি চোখে পড়ে।ক্যাম্পাসে তাদের নিয়ে কানা-ঘুষাও কম করেনা নিন্দুকের দল। কিন্তু তারা এগুলা পাত্তাই দেয় না,হাসিমুখে এড়িয়ে যায়।এইসব ত নৈমিত্তিক ঘটনা "এই রোহান, আজকের চটপটির বিল টা দে না " রোহানের সহাস্য উত্তর, আজ ম্যানিব্যাগটা ছেড়ে এসেছি। রিমি একগাল হেসে বলে, ফাজিল কোথাকার বিল দিবি না সেটাই বল । রোহান হাসিটা কোন রকমে চেপে রেখে ক্যাফে থেকে বের হয়।ক্যাম্পাসের জনাশূন্য ছায়াঘেরা পথে হাঁটতে হাঁটতে গল্পের ফোয়ারা ছোটায় দুজনে এটা সেটা আর কত ।।রিমির কবিতা শোনার ভূতটা ছিল বরাবরের মতই।হ্যাঁ, ভূতই ত ইংরেজি নভেলপ্রেমী রোহানের কাছে এটাই মনে হয়।কবিতা ধুর, এগুলা কেউ শোনে নাকি ।রিমির ঘোর আপত্তি, কবিতার মাঝে সুখ খোঁজে তারাই যারা হৃদয়বান, কাব্যের প্রেমে তাদের প্রেম হয় মোহিত।এরই মাঝে সেই আগের মত রিমি আবদার করে বসে-
রোহান, তুই একটা কবিতা বল।রোহান ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছে, ঐ দেখা যায় তাল গাছ ঐ আমাদের গাঁ...রিমি ত রেগে খুন রোহানকে থামিয়ে দিয়ে বলে, গাধা নিজের লেখা একটা কবিতা বল।রোহানের সহাস্য উত্তর, ওসব কবিতা-টবিতা আমার দ্বারা হবে না।ইতিমধ্যেই আধাঁর ঘনিয়ে সন্ধ্যা নেমে এসেছে,পাখিদের কিচির মিচির শব্দে মুখরিত ক্যাম্পাস আর জ্বলে উঠেছে লাইটগুলো।রিমি গজগজ করতে করতে আজকের মত বাই বলে হলের রাস্তার দিকে এগুতে থাকে।সেই পথের দিকে নিঃশব্দে তাকিয়ে আছে রোহান,যেন প্রতিটি পায়ের ধাপ সে নিরীক্ষণ করছে।মেয়েটাকে সে ঠিকমত বুঝে উঠতে পারে না কখনো লাস্যময়ী ত কখনো রহস্যময়ী,.হয়তো এই কারণেই রিমির প্রতি তার অজানা এক আকর্ষণ কাজ করে।যে আকর্ষণের মোহজাল থেকে বেরুতে পারেনি সে হয়তো চেষ্টা করার কথাও ভাবেনি কোনদিন।

রিমির সাথে প্রথম দেখা সেই ওরিয়েন্টেশানের দিনে।একপ্রান্তে বসে ছিল চুপচাপ আর শান্ত স্বভাবের একটি মেয়ে।প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে যায় তার।কাহিনীটা 'লাভ এট ফার্স্ট সাইট' এর মত।ওরিয়েন্টেশান আর ক্লাস শুরুর মাঝে কয়েকদিন ব্রেক ছিল।এই কয়েকদিন ক্যাম্পাসে মনের অ্যালবামে রাখা সেই শান্ত মেয়েটাকে অনেক খুজেঁও না পেয়ে রোহান চরম মাত্রায় যখন হতাশ ঠিক তখনই ক্লাসের প্রথম দিনে কাকতালীয় ভাবে তার ক্লান্তিত চক্ষু আবিষ্কার করলো সেই মেয়েটাকে ক্লাসের এক ফাঁকে।এরপর লুকোচুরি করে ক্লাসের সবাইকে ফাঁকি দিয়ে চলতো অবিরাম তাকে দেখা।বন্ধুত্বের হাতটা বাড়িয়েছিল রোহানই আর সেই হাত ধরে বন্ধুত্বের পথে এগিয়ে এক ধাপ বাড়িয়েছিল রিমিও।এরপর ক্লাস আর ল্যাবের চিড়েচেপ্টা অবস্থা থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে ক্যাম্পাসের নিরিবিলি আবহাওয়ার একটু খানি স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতো তারা।চলতে থাকলো তাদের পথচলা আর বন্ধুত্বটা, সেই বন্ধুত্বটা সীমা পেরিয়ে ভালবাসার দিকে গেলেও প্রকাশ করেনি কেউই।দুজন দুজনকে ভালবাসলে অব্যক্ত রেখেছিলো মনের মাঝে।হয়তো রোহান একটু এগিয়ে গেছে তাকে থামিয়েছে রিমি, আবার রিমি হয়তো এগিয়েছে নিশ্চুপ ছিল রোহান।ততদিনে রোহানের মনের ভালবাসার আকাশে চিড় ধরেছে, বেরুতে পারেনি সে বন্ধুত্বের খোলস ছেড়ে ভালবাসার নীল দিগন্তে।কারণ, রোহান রিমিকে হারাতে চায় নি যেকোন মূল্যে তাই বন্ধুত্ব ভেস্তে যাওয়ার আশংকায় বলতে পারেনি ভালবাসার কথা।সুখের মুহুর্ত হয়তো অতিদ্রুতই চলে যায়।র্যাগ এর দিন ক্যাম্পাস থেকে বিদায়ের ক্ষণে দুজন একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদেছিলো যাওয়ার আগে অস্থিরতায় ভোগা রোহান তাকে উপহার দিয়েছিলো একটি ইংরেজি নভেল আর তাতে গুজে দিয়েছিলো একটি চিঠি যাতে লিখা ছিল তার অব্যক্ত ভালবাসার কথা।কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস..

বরাবরের মত কবিতা প্রেমী রিমি হয়তো কিছুটা ইচ্ছা আর কিছুটা অনিচ্ছার বঁশে খুলে দেখে নি সেই ইংরেজি নভেলটা।এদিকে রোহান ভাবে রিমি হয়তো তাকে ভালবাসে না তাই চিঠির কোন উত্তর দিচ্ছে না।তাই সে মনঃকষ্টে আর দুঃখে রিমির সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

বছর চারেক পর.....

হঠাত্‍ করে অনেকটা কাকতালীয় ভাবে একটা শপিংমলে রোহানের সাথে রিমির দেখা হয় ।ততদিনে রিমি একজনের ঘরের বউ। অনেক সৌজন্য কথার শেষে অনেকটা অভিমান আর অবিশ্বাসে ভরা চক্ষু নিয়ে রিমিকে রোহান সেদিন বলেছিলো, তুমি কি ইংরেজি নভেলটা পড়েছিলো ? জবাবে রিমির না বোধক উত্তর।রোহান আজও রিমিকে ভালবাসে, বিয়ে করেনি সে।করার ইচ্ছেও নেই।শুধু জবাবে রিমিকে রোহান একটা কথাই বলেছিলো, তুমি যদি নভেলটা খুলতে তাহলে আজ আমাদের এই অবস্থা হত না।
বাইরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরছে ক্ষণেক বাদেই ডেকে উঠছে আকাশটা।অশ্রুজল চোখে চটজলদি রুমে ফিরে আসে রিমি।অনেক খুঁজে বের করে ময়লা জমা মোড়কে বাধাঁ সেই নভেলটি আর তাতে পায় একটি চিঠি....
নাহ, আজ তার অতটুকু সাহস নেই চিঠিটি খোলার।সেই কাংখিত ভালবাসা পেয়েও আজ তার মাঝে হারানোর অনুভূতি।রিমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়, তার চোখের ঝরা বৃষ্টিই যেন আকাশ থেকে পড়ছে.....

সাবস্ক্রাইব করুন:

লিখাঃ RAIHAN HOSSAIN SHOHAG
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url