গল্পঃ অরিন, মেহেদী দিয়ে দাও

হাতে মেহেদী দেয়ার শখ হলো হঠাৎ। অরিনকে বললাম সেই কথা। ও গর্জে উঠলো।
'ছেলেদের হাতে আবার কীসের মেহেদী! কোনো মেহেদী দেয়া হবে না।'
বলে রিকশা ডাকলো। আমি বললাম, 'কই যাও!'
'কোথায় আবার! মেহেদী কিনতে হবে না?'
'দিতে তো মানা করলা!'
'করেছি বলে দিবা না, না কি? দিতে হবে, আমি দিয়ে দেবো। ছেলেদের হাতে মানাবে এমন করেই দিয়ে দেবো।'
আমরা রিকশায় উঠলাম বাজারে গিয়ে মেহেদী কেনার জন্য। একগাদা কাজ ফেলে অরিন ছুটলো আমার শখ পূরণে।
'এটা কবে দিয়ে দিবা?' কেনার পর আমার হাতে মেহেদীর প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে অরিন গায়েব প্রায়। ওকে আর পাওয়া যায় না। ভীষণ ব্যস্ত সে। আমি ফোন দেই, ম্যসেজ দেই। ফেসবুকে পোক করি, ওয়ালে পোস্ট দেই। একই কথা বারবার বলি আর পিসির টেবিলের উপর রাখা মেহেদীর প্যাকেটের দিকে উদাস চোখে তাকাই। অরিনও একই কথা বলে, 'দিয়ে দেবো। তুমি চিন্তা করো না।'

আমার চিন্তা হয়। একটা কাজ ফেলে রেখেছি ভেবেই কেমন যেন লাগে! আবার ফোন দেই একটু পর।
'আচ্ছা এটা দিয়ে দিতে কতক্ষণ লাগে?'
'বড়জোর তিরিশ মিনিট লাগবে।'
'তারপর হাতে ধরে থাকতে হবে কতক্ষণ?'
'পাঁচ মিনিট।'
'মাত্র! তাতেই হয়ে যাবে?'
'হ্যাঁ, প্যাকেটের মেহেদী এমনই। পাঁচ মিনিটেই রঙ, পাঁচ দিনেই রঙ হালকা।'
'তাহলে আমরা গাছ থেকে মেহেদী পাতা তুলতাম!'
'অত সময় নাই। তুমি টেনশন করিও না। ঈদের আগেই আমি দিয়ে দেবো, ঠিক আছে?'
'ঠিক আছে!'

একটা একটা করে রোজা যায়। ঈদের বাকি দিন গুনি। সংখ্যা যত কমে আমার উত্তেজনা তত বাড়ে! মেহেদী দেবো হাতে। কিন্তু অরিনের সময় হয় না। এই পর্যন্ত তিনবার সময় দিয়ে ক্যানসেল করেছে। প্রবল উত্তেজনায় প্যাকেট থেকে টিউব বের করে বসে আছি, হঠাৎ ম্যাসেজ আসে, 'আজ সরি!!'
অবশেষে ঈদের দুই দিন আগে ওনার সময় হলো। বিকালে আমাকে ডাকলো। আমার যেতে যেতে সন্ধ্যা।
'হাত ধুয়ে আসো সাবান দিয়ে।'
'তাতে কী হবে?'
'ময়লা দূর হবে বুদ্ধু। রঙ বসবে ভালো।'
সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে এসে সামনে বসলাম। পকেটে মেহেদীর প্যাকেট। দিলাম, অর্ধেক ফাঁকা। হাত বাড়ালাম।
'এ মা!! হাতের এ কী অবস্থা! কী করেছো এগুলা!'
'নিজে নিজে একটু এক্সপেরিমেন্ট করলাম!'
'তাই বলে এভাবে!'
'হুম!'
'এখন আমি দিয়ে দেবো কোথায়!'
'জানি না!'
'তা আমি এখন কী করবো?'
'আমার হাতটা ধরে বসে থাকো।'

অরিন না পারছে রাগ করতে, না পারছে খুশী হতে। বেচারি আয়োজন করে বসেছে মেহেদী দেবার জন্য। কিন্তু আমার হাত ভর্তি আনাড়ি হাতের কাজ। পুরো হাতে শুধু ওর নাম লেখা। অরিন অরিন অরিন...
অরিন সেই মেহেদী ভরা হাত কোলে নিয়ে বসে আছে। হাতে মেহেদীর টিউব, স্থির। তাকিয়ে আছে হাতের দিকে। নিজের নাম কেউ এ্যাতবার পড়ে?

অরিনের চোখ থেকে দুই ফোঁটা পানি পরলো হাতে, ওরই নামের উপরে।

সাবস্ক্রাইব করুন:

লিখেছেন - নিশাত আরেফিন

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url