রম্য গল্পঃ পকেটমার
কাপড়ের দোকানে ঢুকতেই থাপ্পরের শব্দ কানে ভেসে আসলো ৷ স্তম্ভিত হয়ে নজর দিয়ে দেখি আমার বউ ইপশি একজনকে কষে থাপ্পর মেরেছে ৷ সে অপরিচিত একজনকে এভাবে থাপ্পর মারলো কেন? আমার প্রশ্নের জবাব পেয়ে গেলাম ৷ আমার বউ চেঁচিয়ে অচেনা লোকটাকে বললো,
-লুচ্চা কোথাকার, অন্যের সুন্দরী বউয়ের দিকে তোর এতো নজর কেন, হুহ? সুন্দরী মেয়ে দেখলেই হাত ইশপিশ করে তাইনা? এতই যদি আমাকে পছন্দ তোর, তাহলে আমার বিয়ে হবার আগে প্রস্তাব পাঠাতে পারলি না? তখন তোর গালে জুতা দিয়ে পিটিয়ে পরীক্ষা নিতাম তুই টেকসই কিনা ৷ তারপর আমার পাশে দাঁড়ানো একসময়ের এই বোকা বয়ফ্রেন্ডন্ডকে ফেলে তোকে বিয়ে করতাম ৷ কিন্তু সেটা তো হচ্ছেনা আর ৷ তবুও দুঃখ পাবিনা,একদমই না ৷ তোর বাসায় মা, বোন নাই? নিশ্চয় আছে ৷ তাদেরকে সুন্দর কাপড় চোপর পরিয়ে মডেলদের মত দাঁড় করিয়ে রেখে, বিরামহীন ও পলকহীন চোখে তাকিয়ে দেখবি ৷ তাহলে অন্যসব মেয়েদেরকে দেখার আর ইচ্ছা জাগবেনা ৷ খবরদার! জীবনে আর কখনই কোনো নারীর পেটে হাত রাখার দুঃসাহস দেখাবিনা, এই বলে দিলাম ৷ যা ভাগ আমার সামনে থেকে!
.
আমার বউয়ের হিংস্র বাঘিনীর রূপ, ক্ষিপ্ত মানবীর ন্যায় জোরালো হংকারের কারণে দোকানের মধ্যকার সবাই নিস্তব্ধ হয়ে রইলো ৷ প্রত্যেকে অদ্ভুত চোখে আমার বউকে দেখছিল ৷ বখাটে লোকটা চলে যাবার পর আমার বউ দোকানের মধ্যে রাখা একটি চেয়ারে বসে পরলো ৷ দোকানদার এখনো থম মেরে আছে ৷ হা করে আমার বউকে দেখছে, তবে তার চোখে একরাশ ভয় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি ৷ বউ যখন উঁচু গলায় বললো, “দোকানদার, অমার জন্য শাড়ি বের করেন!"
তখন দোকানদার সম্ভিত ফিরে পেয়ে স্বাভাবিক হয়ে বউকে জবাব দিলো,
-ভাবী, আপনি কেমন ধরণের শাড়ি চাচ্ছেন?
আমার বউ জবাব দিলো,
-আমাকে ভাবী ডাকবেন না ৷ বড় আপু বলে ডাকবেন ৷ আর হ্যাঁ, প্রিন্টের শাড়ি বের করেন ৷ জলপাই কালার যেন শাড়ির কালার হয়!
-জলপাই কালারের শাড়ি তো নাই বড় আপু ৷
-মিষ্টি আলুর যে কালার, সেই কালারের শাড়ি নাই?
সাবস্ক্রাইব করুন:
.
দোকানদার মাথা চুলকাতে লাগলো ৷ আমি নিজেই কনফিউজড! বউ এতোসব কালার কেমনে আবিষ্কার করলো, বুঝলাম না ৷ জীবনে কখনই তো মিষ্টি আলুর কালারের কথা শুনিনি ৷ জলপাই কালার এটাও তো বাপের জন্মে শুনিনি ৷ জলপাই কাঁচা থাকলে সবুজ কালার, পাকার সময় গাঢ় সবুজ হয় ৷ বুঝলাম না, এই রং কে জলপাই কালার বলার যৌক্তিকতা কি? আর দোকানদারই বা কেমন বোকা, সবুজ রংয়ের শাড়ি বের করলেই তো হতো ৷ দোকানদার তার মাথা চুলকানো শেষ করে বললো,
-সরি বড় আপু, আমি মিষ্টি আলুর কালারটা চিনিনা ৷
বউ বিরক্তির চোখে তাকিয়ে বললো,
-কি বলেন এসব? কোনোদিন মিষ্টি আলু খান নি?
-খেয়েছি কিন্তু কালারটা ভুলে গেছি ৷
-যাহোক, ঐ কালার বাদ ৷ আমাকে কালো রংয়ের ভাল দেখে কয়েকটা শাড়ি দেখান!
-এইতো বড় আপু, এভাবে কালারের নাম বললে এতোক্ষণে শাড়ি পেয়ে যেতেন!
.
দোকানদার কালো রংয়ের ৫ প্রকারের শাড়ি বের করলো ৷ বউ একটা পছন্দ করলো ৷ সেটা পরে দেখতে ট্রায়াল রুমের দিকে গেলো ৷ মিনিট ১০ পর বউ নতুন শাড়িটা পরে বের হয়ে এলো ৷ একদম সাক্ষাৎ পরীর মত লাগছিল আমার বউকে ৷ কেন যেন এই শাড়িতে তাকে মোটা লাগছে ৷ আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম ৷ নতুন করে বউয়ের প্রেমে পরলাম মনে হলো ৷ কিন্তু, মাথায় একটা চিন্তা আসলো, বউয়ের গায়ের আগের সেই শাড়িটা কই রাখলো?
বউ দোকানদারের সামনে বসে, মিষ্টি হেসে বললো,
-এই শাড়িটাই কিনবো ৷ সাথে ঐ যে ওটা ৷ এখন আমার হাজবেন্ডের জন্য একটা ভাল দেখে পাঞ্জাবী বের করেন ৷ ছাই কালারের পাঞ্জাবী হলে ভালো হয়!
দোকানদার সত্যি সত্যি ছাই কালারের কয়েকটা পাঞ্জাবী বের করলো ৷ বউ পছন্দ করছিল ৷ একটা পাঞ্জাবী পছন্দও হলো ৷ এবার পাঞ্জাবী ও শাড়িটার দাম মিটানোর পালা ৷ দোকানদার দুটা মিলে দাম বললো ৯ হাজার টাকা ৷ দাম শুনে আমার বউ রেগে আগুন হয়ে গেলো ৷ রাগে তার চোখ মুখের রং উত্তপ্ত কড়াইয়ের ভেতরের তেলের মত হয়ে গেলো ৷ সে রাগান্বিত স্বরে দোকানদারকে বললো,
-কি যা তা বলেন? কাপড়ের দোকান দিয়েছেন বলে মনে করছেন যেই দামে ইচ্ছা সেই দামে বিক্রি করবেন? না না, এমনটা ভাবলে তো ভুল করবেন ৷ শুনে নেন, আমার মামাও কাপড়ের ব্যবসায়ী ৷ এবার তার দোকানে যাইনি, কারণ সেখানে গেলে সবকিছু মাগনা পেয়ে যাবো, এতে মামার কয়েক হাজার টাকা লস হয়ে যাবে ৷ শুনুন, দাম ঠিক করে বলুন; নইলে আমার মামাতো ভাই র্যাব, তাকে ফোন দিবো ৷ সে যদি এসে দেখে অতিরিক্ত দামে পোশাক বিক্রি করছেন, তো আপনার পিঠের একটা চামড়াও থাকবেনা!
.
.
বউয়ের মুখে এরকম চাপাবাজি কথা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম ৷ কেন যেন তার কথা শুনে ভয় পাচ্ছি ৷ ভয়ে থরথর করে কাঁপছি ৷ আমার বউয়ের মামা কবে কাপড়ের ব্যবসা করলো? তার মামাতো ভাইটাই বা কবে র্যাব ছিলো? ইপশি এতবড় মিথ্যাচার করতে পারলো?
আমি ইপশিকে জোরালো কন্ঠে বলতে গেলাম,
-ইপশি, কি বলছো এসব?
ইপশি আমাকে প্রচন্ড জোরে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিলো ৷ এরপর দোকানদারকে বললো,
-শাড়ি ও পাঞ্জাবী মিলে ১৫০০ টাকা দিবো ৷ প্যাক করেন ৷ বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না, ভুলে যাবেন না যে দুদিন পর ঈদ!
.
দোকানদার বোবা হয়ে গেছে ৷ কথা বলতে না পেরে মাথা নাড়িয়ে বুঝালো সে পাঞ্জাবী ও শাড়ি দিয়ে দিবে ৷ পাঞ্জাবী ও শাড়ি প্যাক করতেই আমার বউ গগণবিদারী চিৎকার মেরে উঠলো ৷ চিৎকার মারা শেষ করে আতঙ্কিত কন্ঠস্বরের বললো,
-হায় হায় কি সর্বনাশ! আমার শপিং ব্যাগটা কই? কই গেলো? মরার দোকানে মরার চোর কোথা থেকে এলো? ব্যাগে ২৮ হাজার টাকা দামের শাড়ি ছিল, গতপরশু কিনেছিলাম ৷ ঐ ব্যাগে ডায়মন্ডের নেকলেসও ছিল ৷ সব নিয়ে গেলো কোথাকার চোরের বাচ্চা চোর! কি সর্বনাশ হয়ে গেলো আমার এই মরার দোকানে এসে ৷ আমার শপিংব্যাগ যদি না পাই,তাইলে এই দোকানে আমি র্যাবকে ডাকবো ৷ একটা ফোন দিলেই আমার মামাতো ভাই ১২ সদস্যের র্যাবের দল সহকারে এখানে এসে হাজির হবে!
.
সাবস্ক্রাইব করুন:
আমার মাথা চক্কর মেরে উঠলো ৷ কতবড় মিথ্যা কথা বলছে আমার বউ ৷ সে নাকি শপিং ব্যাগে ডায়মন্ডের নেকলেস রেখেছে? তার হাতে ব্যাগই তো ছিলনা ৷ আর সেই শাড়িটা অামি ১ মাস আগে কিনে দিয়েছি মাত্র ১ হাজার টাকা দিয়ে ৷ অথচ বউ কি চাপাবাজিই না করছে ৷ বউয়ের দিকে চোখ মিলে তাকাতেই দেখি দোকানদার আমার বউয়ের পায়ের উপর পরে গিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলছে,
-আপু দয়া করেন, আমার দোকানে র্যাব ডাকবেন না ৷ আপনি দয়া করে ব্যাগটা দোকানের মাঝে খোঁজেন, না পেলে আমি দুটা শাড়ি ও পাঞ্জাবীটা ফ্রি দিয়ে দিবো!
.
বউ চোখ বাকা করে শক্তকন্ঠে বললো,
-ডায়মন্ডের নেকলেস যে হারিয়ে গেলো, সেটার কি হবে?
-যদি ব্যাগটা পান তাহলে তো শাড়ি, নেকলেস দুটোই ফিরে পাবেন ৷ খোঁজেন, যদি না পান তাহলে নেকলেসের ভর্তুকি দিবো ৷ নেকলেসের দাম কত বলুন তো?
-বেশি না, মাত্র ১০ হাজার টাকা!
.
মাথা লাটিমের মত ঘুরতে লাগলো শুনে ৷ বউ এটা কি বললো? ডায়মন্ডের নেকলেসের দাম মাত্র ১০ হাজার টাকা? শুনে আকাশ থেকে ঠাস করে নিজের মাথার উপরই পরলাম যেন!
.
দোকানদার বউয়ের কথা শুনে বললো,
-নেকলেসের পরিবর্তে আপনাকে দশ হাজার টাকা দামের একটা শাড়ি দেওয়া হবে ৷ তবুও পুলিশ ডাকবেন না ৷ আর ব্যাগটা খোঁজেন, আমার বিশ্বাস দোকানেই আছে কিংবা ট্রায়াল রুমে!
.
বোকা দোকানদারকে গালি দিয়ে বললাম আরে শালার দোকানদার আমার বউ ব্যাগই তো আনে নি, ব্যাগ কই পাবে সে! ভাগ্যিস কথাটা মনে মনে বললাম
যে কারণে বোকা দোকানদার শুনতে পেলোনা কিছু ৷
.
আমার বউয়ের সঙ্গে আমিও ব্যাগ খুঁজতে লাগলাম, আসলে খুঁজছিনা খোঁজার নাটক করছি ৷ এর ফাঁকে বউকে কানে কানে ফিসফিস করে বললাম, “তুমি তো ব্যাগ আনোনি, মিথ্যা বলছো কেন? আর শাড়িটা কই রাখছো?"
বউ চোখ গরম করে দাঁতে দাঁত চেপে নিচুস্বরে বললো, “আরে গাধা, এই দোকানদারকে বোকা বানিয়ে শাড়ি, পাঞ্জাবী হাতিয়ে নেবার মিশন শুরু করেছি ৷ জানো এই দোকানদার কি করেছিল গতবার? আমি বলছি শোনো, গতবার ১০০০ টাকা দামের শাড়ি ৫ হাজার টাকা রেখেছিল ৷ ছোট বোন ও আমি মিলে ৪ টা শাড়ি কিনে ১৬ হাজার টাকা গচ্ছা দিয়েছিলাম ৷ এবার ব্যাটাকে শায়েস্তা না করলে হবেনা!
-বাহ! ভালোই তো রিভেঞ্জ গল্প তৈরি করলে ৷ তো, তোমার সেই শাড়িটা কই রাখছো?
-আরে বোকা এই শাড়ির নিচে পরেছি ওটা, তবে পা থেকে কোমড় পর্যন্ত পরে আছি ৷ ওটা তো চিকন শাড়ি ৷ সমস্যা হয়নি ৷ তবে খুব গরম লাগছে ৷ দোকান থেকে বের হতে পারলে বাঁচি!
.
বউয়ের কথা শুনে হো হো করে হাসতে মন চাচ্ছিল কিন্তু হাসা নিষেধ ৷ ১৫ মিনিট ধরে মিছামিছি ব্যাগ খোঁজার পর আমরা দোকানদারের সামনে দাঁড়ালাম ৷ বউ একটু উত্তেজিত হয়ে বললো,
-আপনার দোকানে চুরি হয় জানলে এখানে আসতাম না ৷ আমি ব্যাগ পেলাম না ৷ দয়া করে আমার ভর্তুকি দেন, নইলে আইনী ব্যবস্থা নেবো!
.
দোকানদার ভয় পেয়ে দুটা শাড়ি ও পাঞ্জাবী প্যাক করলো ৷ বউয়ের হাতে সেসব দিয়ে বললো,
-আপা রাগ করবেন না, আবার আসবেন!
.
.
তাড়াতাড়ি করে দোকান থেকে বের হলাম ৷ বউ ঢুকলো অন্য একটি দোকানে ৷ সেই মাপের ভিড় ৷ তবুও আমার বউ ভিড় ঠেলে দোকানদারের সামনে বসলো ৷ আমি দূর থেকে দেখতে লাগলাম ৷ বউ অনেকগুলো থ্রিপিস নাড়াচাড়া করছে ৷ একটা থ্রিপিস পছন্দ হলো ৷ দামাদামি হচ্ছিল ৷ অকস্মাৎ, অন্য একজন কাস্টমার দোকানদারকে শাড়ি বের করতে বললো ৷ দোকানদার শাড়ি বের করলো আর এর ফাঁকে আমার বউকে বলল থ্রিপিসের দাম ৮ হাজার টাকা ৷ আমার বউ ৫ হাজার টাকা দাম বললে দোকাদার থ্রিপিসটা দিতে রাজি হলো ৷ তখন আমার বউ আমাকে ডেকে বললো, ওগো দোকানদারকে প্রাইসটা দিয়ে দাও ৷ এটা বলেই আমার বউ চেয়ার থেকে উঠলো ৷ তখন দোকানদার তোরজোর করে বললো টাকা কে দিবে?
বউ আমাকে দেখিয়ে বললো ঐ যে উনি!
বলেই বউ পিছনের ভিড় ঠেলে দোকান থেকে বের হয়ে গেলো ৷ আর আমি তো বোকা বনে গেলাম ৷ আমার কাছে একটা টাকাও নাই ৷ এখন দোকানদারকে টাকা দিবো কেমনে? এদিকে দোকানদারের সামনে যাবো সেটাও সম্ভব না ৷ সামনে মেয়েদের ভিড় ঠেলে যাওয়া অসম্ভব ৷ আর আমি তো ভুলেও দোকানদারের কাছে যাবোনা, টাকা থাকলে তো যাবো ৷ বাধ্য হয়ে দোকান থেকে বের হয়ে এলাম ৷ বউ আমার হাত ধরে বললো,
- দোকানদারকে কত টাকা দিতে হবে এটা তোমাকে বলতে ভুলে গেছিলাম ৷ বলো কত দিয়েছো তাকে?
আমি মুখ শুকনো বানিয়ে বললাম,
-কেমনে টাকা দিবো বলো? যে ২১ হাজার টাকা এনেছিলাম সবই পকেটমার নিয়ে গেছে ৷ আমার কাছে একটা টাকাও নাই আর ৷ গাড়ি ভাড়ার টাকা থাকলে তাও হতো!
.
এটা বলে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না শুরু করে দিলাম ৷ ওদিকে আমার বউ অজ্ঞান!
লিখাঃ Sifat Arnab Rehan
-লুচ্চা কোথাকার, অন্যের সুন্দরী বউয়ের দিকে তোর এতো নজর কেন, হুহ? সুন্দরী মেয়ে দেখলেই হাত ইশপিশ করে তাইনা? এতই যদি আমাকে পছন্দ তোর, তাহলে আমার বিয়ে হবার আগে প্রস্তাব পাঠাতে পারলি না? তখন তোর গালে জুতা দিয়ে পিটিয়ে পরীক্ষা নিতাম তুই টেকসই কিনা ৷ তারপর আমার পাশে দাঁড়ানো একসময়ের এই বোকা বয়ফ্রেন্ডন্ডকে ফেলে তোকে বিয়ে করতাম ৷ কিন্তু সেটা তো হচ্ছেনা আর ৷ তবুও দুঃখ পাবিনা,একদমই না ৷ তোর বাসায় মা, বোন নাই? নিশ্চয় আছে ৷ তাদেরকে সুন্দর কাপড় চোপর পরিয়ে মডেলদের মত দাঁড় করিয়ে রেখে, বিরামহীন ও পলকহীন চোখে তাকিয়ে দেখবি ৷ তাহলে অন্যসব মেয়েদেরকে দেখার আর ইচ্ছা জাগবেনা ৷ খবরদার! জীবনে আর কখনই কোনো নারীর পেটে হাত রাখার দুঃসাহস দেখাবিনা, এই বলে দিলাম ৷ যা ভাগ আমার সামনে থেকে!
.
আমার বউয়ের হিংস্র বাঘিনীর রূপ, ক্ষিপ্ত মানবীর ন্যায় জোরালো হংকারের কারণে দোকানের মধ্যকার সবাই নিস্তব্ধ হয়ে রইলো ৷ প্রত্যেকে অদ্ভুত চোখে আমার বউকে দেখছিল ৷ বখাটে লোকটা চলে যাবার পর আমার বউ দোকানের মধ্যে রাখা একটি চেয়ারে বসে পরলো ৷ দোকানদার এখনো থম মেরে আছে ৷ হা করে আমার বউকে দেখছে, তবে তার চোখে একরাশ ভয় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি ৷ বউ যখন উঁচু গলায় বললো, “দোকানদার, অমার জন্য শাড়ি বের করেন!"
তখন দোকানদার সম্ভিত ফিরে পেয়ে স্বাভাবিক হয়ে বউকে জবাব দিলো,
-ভাবী, আপনি কেমন ধরণের শাড়ি চাচ্ছেন?
আমার বউ জবাব দিলো,
-আমাকে ভাবী ডাকবেন না ৷ বড় আপু বলে ডাকবেন ৷ আর হ্যাঁ, প্রিন্টের শাড়ি বের করেন ৷ জলপাই কালার যেন শাড়ির কালার হয়!
-জলপাই কালারের শাড়ি তো নাই বড় আপু ৷
-মিষ্টি আলুর যে কালার, সেই কালারের শাড়ি নাই?
সাবস্ক্রাইব করুন:
দোকানদার মাথা চুলকাতে লাগলো ৷ আমি নিজেই কনফিউজড! বউ এতোসব কালার কেমনে আবিষ্কার করলো, বুঝলাম না ৷ জীবনে কখনই তো মিষ্টি আলুর কালারের কথা শুনিনি ৷ জলপাই কালার এটাও তো বাপের জন্মে শুনিনি ৷ জলপাই কাঁচা থাকলে সবুজ কালার, পাকার সময় গাঢ় সবুজ হয় ৷ বুঝলাম না, এই রং কে জলপাই কালার বলার যৌক্তিকতা কি? আর দোকানদারই বা কেমন বোকা, সবুজ রংয়ের শাড়ি বের করলেই তো হতো ৷ দোকানদার তার মাথা চুলকানো শেষ করে বললো,
-সরি বড় আপু, আমি মিষ্টি আলুর কালারটা চিনিনা ৷
বউ বিরক্তির চোখে তাকিয়ে বললো,
-কি বলেন এসব? কোনোদিন মিষ্টি আলু খান নি?
-খেয়েছি কিন্তু কালারটা ভুলে গেছি ৷
-যাহোক, ঐ কালার বাদ ৷ আমাকে কালো রংয়ের ভাল দেখে কয়েকটা শাড়ি দেখান!
-এইতো বড় আপু, এভাবে কালারের নাম বললে এতোক্ষণে শাড়ি পেয়ে যেতেন!
.
দোকানদার কালো রংয়ের ৫ প্রকারের শাড়ি বের করলো ৷ বউ একটা পছন্দ করলো ৷ সেটা পরে দেখতে ট্রায়াল রুমের দিকে গেলো ৷ মিনিট ১০ পর বউ নতুন শাড়িটা পরে বের হয়ে এলো ৷ একদম সাক্ষাৎ পরীর মত লাগছিল আমার বউকে ৷ কেন যেন এই শাড়িতে তাকে মোটা লাগছে ৷ আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম ৷ নতুন করে বউয়ের প্রেমে পরলাম মনে হলো ৷ কিন্তু, মাথায় একটা চিন্তা আসলো, বউয়ের গায়ের আগের সেই শাড়িটা কই রাখলো?
বউ দোকানদারের সামনে বসে, মিষ্টি হেসে বললো,
-এই শাড়িটাই কিনবো ৷ সাথে ঐ যে ওটা ৷ এখন আমার হাজবেন্ডের জন্য একটা ভাল দেখে পাঞ্জাবী বের করেন ৷ ছাই কালারের পাঞ্জাবী হলে ভালো হয়!
দোকানদার সত্যি সত্যি ছাই কালারের কয়েকটা পাঞ্জাবী বের করলো ৷ বউ পছন্দ করছিল ৷ একটা পাঞ্জাবী পছন্দও হলো ৷ এবার পাঞ্জাবী ও শাড়িটার দাম মিটানোর পালা ৷ দোকানদার দুটা মিলে দাম বললো ৯ হাজার টাকা ৷ দাম শুনে আমার বউ রেগে আগুন হয়ে গেলো ৷ রাগে তার চোখ মুখের রং উত্তপ্ত কড়াইয়ের ভেতরের তেলের মত হয়ে গেলো ৷ সে রাগান্বিত স্বরে দোকানদারকে বললো,
-কি যা তা বলেন? কাপড়ের দোকান দিয়েছেন বলে মনে করছেন যেই দামে ইচ্ছা সেই দামে বিক্রি করবেন? না না, এমনটা ভাবলে তো ভুল করবেন ৷ শুনে নেন, আমার মামাও কাপড়ের ব্যবসায়ী ৷ এবার তার দোকানে যাইনি, কারণ সেখানে গেলে সবকিছু মাগনা পেয়ে যাবো, এতে মামার কয়েক হাজার টাকা লস হয়ে যাবে ৷ শুনুন, দাম ঠিক করে বলুন; নইলে আমার মামাতো ভাই র্যাব, তাকে ফোন দিবো ৷ সে যদি এসে দেখে অতিরিক্ত দামে পোশাক বিক্রি করছেন, তো আপনার পিঠের একটা চামড়াও থাকবেনা!
.
.
বউয়ের মুখে এরকম চাপাবাজি কথা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম ৷ কেন যেন তার কথা শুনে ভয় পাচ্ছি ৷ ভয়ে থরথর করে কাঁপছি ৷ আমার বউয়ের মামা কবে কাপড়ের ব্যবসা করলো? তার মামাতো ভাইটাই বা কবে র্যাব ছিলো? ইপশি এতবড় মিথ্যাচার করতে পারলো?
আমি ইপশিকে জোরালো কন্ঠে বলতে গেলাম,
-ইপশি, কি বলছো এসব?
ইপশি আমাকে প্রচন্ড জোরে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিলো ৷ এরপর দোকানদারকে বললো,
-শাড়ি ও পাঞ্জাবী মিলে ১৫০০ টাকা দিবো ৷ প্যাক করেন ৷ বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না, ভুলে যাবেন না যে দুদিন পর ঈদ!
.
দোকানদার বোবা হয়ে গেছে ৷ কথা বলতে না পেরে মাথা নাড়িয়ে বুঝালো সে পাঞ্জাবী ও শাড়ি দিয়ে দিবে ৷ পাঞ্জাবী ও শাড়ি প্যাক করতেই আমার বউ গগণবিদারী চিৎকার মেরে উঠলো ৷ চিৎকার মারা শেষ করে আতঙ্কিত কন্ঠস্বরের বললো,
-হায় হায় কি সর্বনাশ! আমার শপিং ব্যাগটা কই? কই গেলো? মরার দোকানে মরার চোর কোথা থেকে এলো? ব্যাগে ২৮ হাজার টাকা দামের শাড়ি ছিল, গতপরশু কিনেছিলাম ৷ ঐ ব্যাগে ডায়মন্ডের নেকলেসও ছিল ৷ সব নিয়ে গেলো কোথাকার চোরের বাচ্চা চোর! কি সর্বনাশ হয়ে গেলো আমার এই মরার দোকানে এসে ৷ আমার শপিংব্যাগ যদি না পাই,তাইলে এই দোকানে আমি র্যাবকে ডাকবো ৷ একটা ফোন দিলেই আমার মামাতো ভাই ১২ সদস্যের র্যাবের দল সহকারে এখানে এসে হাজির হবে!
.
সাবস্ক্রাইব করুন:
-আপু দয়া করেন, আমার দোকানে র্যাব ডাকবেন না ৷ আপনি দয়া করে ব্যাগটা দোকানের মাঝে খোঁজেন, না পেলে আমি দুটা শাড়ি ও পাঞ্জাবীটা ফ্রি দিয়ে দিবো!
.
বউ চোখ বাকা করে শক্তকন্ঠে বললো,
-ডায়মন্ডের নেকলেস যে হারিয়ে গেলো, সেটার কি হবে?
-যদি ব্যাগটা পান তাহলে তো শাড়ি, নেকলেস দুটোই ফিরে পাবেন ৷ খোঁজেন, যদি না পান তাহলে নেকলেসের ভর্তুকি দিবো ৷ নেকলেসের দাম কত বলুন তো?
-বেশি না, মাত্র ১০ হাজার টাকা!
.
মাথা লাটিমের মত ঘুরতে লাগলো শুনে ৷ বউ এটা কি বললো? ডায়মন্ডের নেকলেসের দাম মাত্র ১০ হাজার টাকা? শুনে আকাশ থেকে ঠাস করে নিজের মাথার উপরই পরলাম যেন!
.
দোকানদার বউয়ের কথা শুনে বললো,
-নেকলেসের পরিবর্তে আপনাকে দশ হাজার টাকা দামের একটা শাড়ি দেওয়া হবে ৷ তবুও পুলিশ ডাকবেন না ৷ আর ব্যাগটা খোঁজেন, আমার বিশ্বাস দোকানেই আছে কিংবা ট্রায়াল রুমে!
.
বোকা দোকানদারকে গালি দিয়ে বললাম আরে শালার দোকানদার আমার বউ ব্যাগই তো আনে নি, ব্যাগ কই পাবে সে! ভাগ্যিস কথাটা মনে মনে বললাম
যে কারণে বোকা দোকানদার শুনতে পেলোনা কিছু ৷
.
আমার বউয়ের সঙ্গে আমিও ব্যাগ খুঁজতে লাগলাম, আসলে খুঁজছিনা খোঁজার নাটক করছি ৷ এর ফাঁকে বউকে কানে কানে ফিসফিস করে বললাম, “তুমি তো ব্যাগ আনোনি, মিথ্যা বলছো কেন? আর শাড়িটা কই রাখছো?"
বউ চোখ গরম করে দাঁতে দাঁত চেপে নিচুস্বরে বললো, “আরে গাধা, এই দোকানদারকে বোকা বানিয়ে শাড়ি, পাঞ্জাবী হাতিয়ে নেবার মিশন শুরু করেছি ৷ জানো এই দোকানদার কি করেছিল গতবার? আমি বলছি শোনো, গতবার ১০০০ টাকা দামের শাড়ি ৫ হাজার টাকা রেখেছিল ৷ ছোট বোন ও আমি মিলে ৪ টা শাড়ি কিনে ১৬ হাজার টাকা গচ্ছা দিয়েছিলাম ৷ এবার ব্যাটাকে শায়েস্তা না করলে হবেনা!
-বাহ! ভালোই তো রিভেঞ্জ গল্প তৈরি করলে ৷ তো, তোমার সেই শাড়িটা কই রাখছো?
-আরে বোকা এই শাড়ির নিচে পরেছি ওটা, তবে পা থেকে কোমড় পর্যন্ত পরে আছি ৷ ওটা তো চিকন শাড়ি ৷ সমস্যা হয়নি ৷ তবে খুব গরম লাগছে ৷ দোকান থেকে বের হতে পারলে বাঁচি!
.
বউয়ের কথা শুনে হো হো করে হাসতে মন চাচ্ছিল কিন্তু হাসা নিষেধ ৷ ১৫ মিনিট ধরে মিছামিছি ব্যাগ খোঁজার পর আমরা দোকানদারের সামনে দাঁড়ালাম ৷ বউ একটু উত্তেজিত হয়ে বললো,
-আপনার দোকানে চুরি হয় জানলে এখানে আসতাম না ৷ আমি ব্যাগ পেলাম না ৷ দয়া করে আমার ভর্তুকি দেন, নইলে আইনী ব্যবস্থা নেবো!
.
দোকানদার ভয় পেয়ে দুটা শাড়ি ও পাঞ্জাবী প্যাক করলো ৷ বউয়ের হাতে সেসব দিয়ে বললো,
-আপা রাগ করবেন না, আবার আসবেন!
.
.
তাড়াতাড়ি করে দোকান থেকে বের হলাম ৷ বউ ঢুকলো অন্য একটি দোকানে ৷ সেই মাপের ভিড় ৷ তবুও আমার বউ ভিড় ঠেলে দোকানদারের সামনে বসলো ৷ আমি দূর থেকে দেখতে লাগলাম ৷ বউ অনেকগুলো থ্রিপিস নাড়াচাড়া করছে ৷ একটা থ্রিপিস পছন্দ হলো ৷ দামাদামি হচ্ছিল ৷ অকস্মাৎ, অন্য একজন কাস্টমার দোকানদারকে শাড়ি বের করতে বললো ৷ দোকানদার শাড়ি বের করলো আর এর ফাঁকে আমার বউকে বলল থ্রিপিসের দাম ৮ হাজার টাকা ৷ আমার বউ ৫ হাজার টাকা দাম বললে দোকাদার থ্রিপিসটা দিতে রাজি হলো ৷ তখন আমার বউ আমাকে ডেকে বললো, ওগো দোকানদারকে প্রাইসটা দিয়ে দাও ৷ এটা বলেই আমার বউ চেয়ার থেকে উঠলো ৷ তখন দোকানদার তোরজোর করে বললো টাকা কে দিবে?
বউ আমাকে দেখিয়ে বললো ঐ যে উনি!
বলেই বউ পিছনের ভিড় ঠেলে দোকান থেকে বের হয়ে গেলো ৷ আর আমি তো বোকা বনে গেলাম ৷ আমার কাছে একটা টাকাও নাই ৷ এখন দোকানদারকে টাকা দিবো কেমনে? এদিকে দোকানদারের সামনে যাবো সেটাও সম্ভব না ৷ সামনে মেয়েদের ভিড় ঠেলে যাওয়া অসম্ভব ৷ আর আমি তো ভুলেও দোকানদারের কাছে যাবোনা, টাকা থাকলে তো যাবো ৷ বাধ্য হয়ে দোকান থেকে বের হয়ে এলাম ৷ বউ আমার হাত ধরে বললো,
- দোকানদারকে কত টাকা দিতে হবে এটা তোমাকে বলতে ভুলে গেছিলাম ৷ বলো কত দিয়েছো তাকে?
আমি মুখ শুকনো বানিয়ে বললাম,
-কেমনে টাকা দিবো বলো? যে ২১ হাজার টাকা এনেছিলাম সবই পকেটমার নিয়ে গেছে ৷ আমার কাছে একটা টাকাও নাই আর ৷ গাড়ি ভাড়ার টাকা থাকলে তাও হতো!
.
এটা বলে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না শুরু করে দিলাম ৷ ওদিকে আমার বউ অজ্ঞান!
লিখাঃ Sifat Arnab Rehan