গল্পঃ এবং মেয়েটি অথবা ভালবাসা

মেয়েটার সাথে এত দিন পর এই ব্যস্ত পথের ভীরে এভাবে দেখা হয়ে যাবে কে জানতো !!
মেয়েটাকে দেখা মাত্রই বুকের ভিতর কিছু টা ধাক্কা মত খেলাম। অপ্রস্তুত হলাম ক্ষণিকের জন্য। কিছু কিছু অবর্ণনীয় মুখ থাকে যে মুখের ছবি টা সারা জীবনেও ভোলা যায় না। যে মুখ এর মানুষ টিকে একবার ভাবাতেই মনের গহীনে মুখের ছবি টি ভেসে আসে। তেমন ই একটা মুখ এই মেয়েটার।
কিন্ত এ কি! মেয়েটার চোখে দুটোর নিচে কালো আবছা দাগ পরেছে ?? অবশ্য কালো দাগ
টা মেয়েটার চোখের মায়া বাড়িয়ে দিয়েছে হাজার গুন। কিন্ত তবুও মেয়েদের চোখের
নিচে কালো দাগ অনেক টা দু:খের বহিঃপ্রকাশ করে। কিন্ত মেয়েটার তো দু:খে থাকার কথা না !!

মুহুর্তেই নিজেকে লুকিয়ে নিলাম। মেয়েটা আমাকে দেখে ফেললো না তো !! আর দেখলেই কি চিনতে পারবে ?? হয়তো চিনে ফেলবে হয়তো বা না। অপরিচিতের ভীরে অপরিচিত কেউ একজন ভেবে নিবে।

শ্যামলী বাস কাউন্টারে ৩০ মিনিট হল বসে আছি। বাস আসতে আরোও ৪০ মিনিটের মত লাগবে। তাই বাইরে ঘোরা ফেরা না করে অগত্যা কাউন্টারেই বসে আছি।

.
মেয়েটা মিনিট দশেক হল কাউন্টারের ভিতরে ঢুকে বসে পরলো। আমার কিছুটা দুরেই। রুম ভর্তি মানুষ। একবার ভাবলাম মেয়েটি আমাকে দেখার আগেই ফুস করে বের হয়ে যাই। কিন্ত পারলাম না। নিজের ইচ্ছা শক্তির কাছে পরাজিত হলাম।

সাবস্ক্রাইব করুন:

.
মেয়েটার নাম মৌমিতা। মেয়েটা তার নাম নিয়ে মারাত্তক টাইপের সিরিয়াস। আমার স্পষ্ট মনে আছে যেদিন আমরা বাসার সবাই মিলে মৌমিতা দের বাসায় যাই ওকে দেখতে,, তখন আমাকে আর ওকে অন্য একটা রুমে কিছুক্ষন কথা বলার সুযোগ করে দেয়া হয়। মেয়েটার চোখের দিকে তাকিয়েই কেমন যেনো বাক শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম। কেনো যেনো মনে হয়েছিলো একটা মেয়ের চোখ এত বেশী মায়াময় হওয়ার
কোনো দরকার নেই। এটা একটা অপরাধ। এমন চোখের চাহনী যে প্রেমে পড়াতে বাধ্য
করে। মেয়েটা রুমে ঢুকে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কেমন অনর্গল কথা বলতে শুরু করে দিলো।

.
- এই যে মিষ্টার এমন হুল্লকের মত তাকিয়ে থাকবেন না। আমি কিন্ত এখনো আপনার বিয়ে করা বউ না। জানেন তো অচেনা অজানা বেগানা নারীর দিকে তাকানো পাপ।মেয়েটার এমন হুংকারে কিছুপরিমাণ লজ্জিত হয়ে বাধ্য ছেলের মত চোখ নামিয়ে নিলাম। একটা মেয়ের এত কড়া কথা ও যে এত মিস্টি হয় আজ প্রথম বুঝলাম।

- একি আপনি ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে কেনো। সোজা হয়ে দাঁড়ান। ওকে মাঝে মাঝে একটু আধটু দেখলে কোনো সমস্যা নেই। অনুমতি দিয়ে দিলাম।

মেয়েটার চঞ্চলতা বেড়েই চলেছে। যেটা আমি মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করছি। কথা বলার সময় মেয়েদের চাঞ্চল্যতাই একটা ছেলেকে বেশী মুগ্ধ করে।

-কি ব্যাপার ধমক শুনে ভয় পেয়েছেন নাকি। থাক ভয় পাবার দরকার নেই। নরমাল হোন। আমি মৌমিতা। শুধু মিতা বললে কিন্তু খবর আছে আপনার। একদম মৌমিতা ই
বলতে হবে,,মৌ-মি-তা ঠিকাছে ??
আমি শুকনো একটা হাসি দিয়ে আরেকবার মৌমিতার চোখে ভাসতে লাগলাম। আর মনে মনে আমার লক্ষী মা কে অনেক অনেক ধন্যবাদ দিতে থাকলাম। যে ই কি না তার ঘরে একটা বউ আনার জন্যে অনেকদিন হলো উঠেপড়ে লেগেছিলো। যদি এবার ও মা কে না করে দিতাম। তাইলে হয়তো কখনোই মৌমিতার দেখা পেতাম না।
.
- কি ব্যাপার আপনি দেখি কিছুই বলছেন না। আমার বকবকানি ই শুধু শুনেই যাচ্ছেন হা করে। নাম কি আপনার ??
.
- জ্বী আমি রনজু। একটা প্রাইভেট ব্যাংকে জব করছি। স্যালারী মোটামাটি ভাল। ১৯ হাজার। আমাদের দুজনের একরম চলবে। আপনি নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।
.
- এই যে ওয়েট ওয়েট !!! এত কিছু শুনতে চেয়েছে কে আজব। আমি শুনতে চেয়েছি শুধু আপনার নাম। আপনারা ছেলেরা এমন কেনো বলুন তো। একটু সুযোগ দিলেই মাথায় চড়ে বসেন !!
.আবার ও কিছুটা মিস্টি বিড়াম্বনার সম্মুখীন হলাম। আসলেই তো এত কথা বলতে গেলাম কেনো। শুধু নাম টা বললেই তো পারতাম। ধুর,,,
.আসলে ওকে নিয়ে অজান্তেই কেনো যেনো স্বপ্ন সাজানো শুরু করে দিয়েছিলাম। তাই হয়তো আমার এই মাথায় চড়ে বসা।
.
- এই আপনি চুলে তেল দিয়েছেন কেনো ?? এত সুন্দর চুল আপনার। তেল টা দিয়েই সব শেষ করে দিয়েছেন। জানেন না চুলে তেল দিলে ছেলেদের ক্ষ্যাত ক্ষ্যাত লাগে ?? এখন থেকে আর চুলে তেল দিবেন না বুঝেছেন ??
.আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে মৌমিতার কথার গভীরে ডুবে আছি। একটা মেয়ের শাসন যে এত বেশী মিষ্টি হতে পারে এই মেয়ের শাসন না পেলে বুঝতাম না।
.
- আজ এই অবস্থায় একটা অনুরোধ রাখবেন আমার ?? আপনাকে আমি সারাজীবন মনে রাখবো। প্লিজ বলুন রাখবেন।
.হঠাত কথা টি বলেই মেয়েটি ছল ছল চোখে আমার দিকে তাকালো। যেনো একটু পরেই মেয়েটার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পরবে। মেয়েটার ঠোট দুটো কাঁপছে কেনো !!
.আমি একটা ছেলেকে প্রচন্ড ভালবাসি। ছেলেটিও আমাকে প্রচন্ড ভালবাসে। কিন্তু বাবা মা সম্পর্ক টি মেনে নিচ্ছে না। জোর করে বিয়ে দিতে চাচ্ছে আমাকে।
.
আমি জানি আমাকে আপনার ভালো লেগেছে। আপনি চাইলেই আমাকে আপনার বউ বানাতে পারবেন। কিন্ত আমি যে সুখী হতে পারবো না।
.
আমার সবটুকু জুড়ে যে শুধু ও ই আছে। ওকে পেলেই আমি সুখি হবো।পারবেন আমাকে এই সুখ টুকু দিতে? ? আমি আপনার কাছে হাত জোর করে ভিক্ষা চাইছি।
.
যে গভীর অসহায় চোখে মৌমিতা আমার দিকে তাকালো সেই চোখ কে উপেক্ষা করার
ক্ষমতা বিধাতা মানুষ কে দেন নি। যাকে একবার একটু হলেও ভালবেসে ফেলা যায়,,নিজে কষ্ট পেলেও তাকে সুখী করা টা জরুরি হয়ে পরে। নিজের সুখ কে খুজে পেতে হয় তার সুখেতেই।
.
কি জবাব দেবো ভাষা খুজে পাচ্ছিলাম না। মনে হল যেনো আমার বাকিশক্তি চিরতরে হারিয়ে ফেলেছি। তবুও ফিরে আসার সময় একটা কথা বলতে পেরেছিলাম,
'ভালো থেকো'

আজ এতগুলা বছর পর এইভাবে দেখতে পারবো তাকে কল্পনাতেও আসেনি কোনো দিন। খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো ওর সামনে গিয়ে সেই মায়াময় গভীর চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে বলি,
.'চিনতে পেরেছেন আমায় ? আমি সেই চুলে তেল দেওয়া খ্যাত ছেলেটি !
.
কিন্তু না কোনো এক অজানা কারনে তা হলোনা !
.

মৌমিতা ভীড়ে ঠাসা এই কাউন্টারের কোণার সিট টা তে বসে ব্যাগ গুছাচ্ছে । আর অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই শ্যামলী বাস টি কাউন্টারে এসে পৌছবে। আমি বাসের জন্য আর
অপেক্ষা না করে কাউন্টার থেকে বেড়িয়ে হাটা শুরু করলাম। গন্তব্যহীন ভাবে।
.
চার পাশের বাতাস গুলো ভারী হয়ে আসছে আমার। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে কেনো জানি।
রাস্তায় হাটছি আর ভাবছি,,ভাগ্যিস মৌমিতা চিনতে পারেনি আমায় ! আর চিনবেই বা কি করে গাল ভর্তি খোঁচা খোঁচা দাড়ি তে ভড়ে গেছে আমার গাল মাথায় তেল না দিয়ে দিয়ে যে চুলেও জট পাকিয়ে ফেলেছি আমি…

সাবস্ক্রাইব করুন:

by-অভ্রনীল কায়েস
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url