গল্পঃ অধরা ভালোবাসা

ফুলে ফুলে সাজানো গাড়ীটা অধরাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। একটু পর এই গাড়িতে চড়েই অধরা পৌঁছে যাবে তার নতুন ঠিকানায়।
শিশির একটা রেল লাইন ধরে হাঁটছে। নির্ঘুম রাত কাটিয়ে ভোরে বেরিয়ে পড়েছে অজানার পথে । অধরার সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত এখন জীবন্ত হয়ে স্মৃতিতে অনুরনন হচ্ছে। সেই প্রথম দেখা, ভালোলাগা, রাগ, অভিমান, ঘৃণা অতঃপর ভালোবাসা। স্বপ্নের মতই ছিল শিশির আর অধরার সেইসব দিনগুলো।
শিশির কে অনেকবার বলেছে অধরা চল আমারা পালিয়ে যাই, কিন্তু শিশির রাজি হয়নি। শিশির খালি বলতো আমরা পালাবোনা, একটা কাজ পেয়ে গেলেই দুই পরিবারের সন্মতি নিয়েই আমরা বিয়ে করবো। কিন্তু সেটা হয়নি । অধরার বাবা কিছুতেই রবিনের মত চালচুলোহীন ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দেবেনা ।
শিশির মনে মনে ভাবছে সে আসলেই বলার মত কিছু করেনা তাই ভয় হয় পাছে যদি অধরার কষ্ট হয়, শিশির জানে সে কি হারাচ্ছে। অধরাকে রবিনের মত করে এই পৃথিবীতে কেউ ভালবাসবেনা। এই অধরার ভালোবাসা পেতে, অধরাকে জয় করতে কত পাগলামিই না করেছে শিশির। লেখাপড়াটা পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছিল একবার, আরও যে কত কি... শিশির জানে অধরাও তাকে অসম্ভব ভালবাসে, অধরার ভালবাসা পাওয়া যার জীবনের একমাত্র লক্ষ ছিল সে অধরা আজ, একটু পর অন্যের হয়ে যাবে চিরদিনের মত ভাবতেই রবিনের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।
রবিনের ফোন বাজছে...অধরার ফোন... শিশির নিজেকে সামলে নিয়ে রিসিভ করতেই-
একটু পর আমার বিয়ে।
-জানি
তুমি আসবেনা ?
-না।
দেখে যাও আমি বঁধু সেজেছি, তুমি না কতদিন আমাকে এই সাজে দেখতে চেয়েছিলে ?
-তুমি তো ফয়সাল এর জন্য সেজেছ, আমার জন্য না।
আমি বাসার ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছি, আসোনা প্লীজ
-একটু পর যার বিয়ে সে বাসার ছাঁদে কি করে?
তোমার অপেক্ষা, তুমি এসে আমাকে নিয়ে যাবে।
-তোমাকে যদি আমি নিয়ে যাই তাহলে তোমার বাবা মা কষ্ট পাবে।
না নিয়ে গেলে আমি যে সারাজীবন কষ্ট পাবো?
-তোমার বাবা মা আমাদের অভিশাপ দেবে। সারাজীবন বাবা মার অভিশাপ নিয়ে থাকতে পারবে? পারবে সারাজীবন তাদের না দেখে থাকতে? পারবে সুখি হতে ?
পারব শিশির, আমি শুধু তোমাকে চাই , আর কিছু না।
-এটা নাটক কিংবা সিনেমা নয় অধরা, সারাজীবন তুমি শুধু আমাকে নিয়ে থাকতে পারবেনা। এভাবে সমাজহীন ভাবে থাকা যায়না। সারাজীবন তুমি বাবা মায়ের কথা ভেবে কাঁদবে, আমি সেটা দেখতে পারব না ।তার চেয়ে বাবা মার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করে সুখি হও। তারা নিশ্চয়ই তোমার খারাপ চান না ।
এটাই তোমার শেষ কথা ?
- অধরা ভালবাসার শেষটা মানেই বিয়ে নয়। ঈশ্বর হয়তো আমাদের ভালবাসার শেষটা এভাবেই লিখেছেন... (লাইন টা কেটে গেলো)
তারপর ৩বছর কেটে গেলো, অধরার সাথে আর কখনো কথা হয়নি, দেখা হয়নি শিশিরের। অধরার দেয়া সব চিঠি আর ছবি শিশিরের ভালোবাসা হয়ে এখনো জীবন্ত। শিশিরের কেবলই মনেহয়, তোমার নাম আমি “অধরা” দিয়েছিলাম বলেই তোমাকে এ জীবনে ধরে রাখতে পারিনি... তুমি আমার জীবনে অধরাই থেকে গেলে... ...
আচ্ছা অধরা, তুমি আমার নাম “শিশির” কেন রেখেছিলে ? ভোরের শিশির হয়ে হারিয়ে যাবো বলে ?


সাবস্ক্রাইব করুন:
by- Deepak Bhattacharjee Ðhrübõ
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url