গল্পঃ সোহার ডায়েরির ইতিকথা
রাত দুটা বাজে,এখনো সোহার ঘরে আলো জ্বলছে।সে ড্রেসিংটেবিলর সামনে বসে একদৃষ্টিতে আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে।আপাতদৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে একটি মুর্তি বসে আছে।যার চোখের পাতা পর্যন্ত নড়ছে না।তার স্থির চোখজোড়ায় নেই কোন ভাষা।ফর্সা মুখটা যেনো স্বাভাবিকের চেয়ে আরও বেশি ফর্সা মনে হচ্ছে। ঠোঁট জোড়া ফ্যাকাশে হয়ে আছে।
আয়নার সামনে সে প্রায় একঘন্টা যাবত বসেই আছে,পাথর হয়ে।
হঠাৎ সে উঠে গিয়ে,ঘরের আলমারি খুলে একটা পুরনো দিনের নীল রং-এর সিল্কের শাড়ি বের করলো।সেটা তার মায়ের শাড়ি।শাড়িটা দেখেই সোহার মনে পড়ে গেলো ঐদিনটার কথা,যেই দিনটায় মঞ্জু বলেছিলো,
-সোহা,তুমি কোনদিনি শাড়ি পড়া শিখবে না,আর কখনো টিপ পড়ে আসবে না।
সোহা কারণ জানতে চাইলে মঞ্জু বলেছিলো,
-কারণ, প্রেমিকাদের শাড়ি পড়তে জানা বারন আছে, আর দরিদ্র প্রেমিকের প্রেমিকার কপাল ছোঁয়ারও তো একটা বাহানা লাগে,তাই না?
টিপ খুব সহজ মূল্যে পাওয়া যায়,যা আমি তোমাকে দেওয়ার সাধ্য রাখি,বিনিময় তোমার শুভ্র ললাট স্পর্শ করে দিতে পারি।
মঞ্জুর এইসব অদ্ভুত কথা শুনে সোহা শুধু হেসেই যেতো।
আজ আবার সেই কথা গুলো মনে করে সোহা মৃদু হাসলো।
সে অনেক ধীরগতিতে শাড়িটা পড়লো।খুব যত্ন নিয়ে নিজেকে সাজিয়ে নিলো।গাড়ো করে কাজল দিলো চোখে।এখন তার চোখ গুলো আরো বড় আরও সুন্দর লাগছে।ফ্যাকাশে ঠোঁটজোড়ায় টকটকে লাল লিপস্টিক দেওয়াতে মৃত মানবীর ভাবটাও কেটে গেছে।কপালে নীল টিপ দেওয়া হয়েছে।কানে ছোট্ট আয়নার মতো দেখতে শিল্পের কারুকাজ করা একজোড়া দুল পড়েছে।
এখন তাকে খুব মায়াবতী মেয়ে লাগছে।যে রমনীকে কল্পনা করে কবিরা পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা কবিতা লিখে যায়,কিন্তু তবুও তার রূপের উপমা দিয়ে শেষ করতে পারে না। ঠিক সেইরকম মায়াবতীদের মতই লাগছে।
সোহা এখন তার বালিসের নিচে রাখা ডায়রি,কলম আর মঞ্জু'র দেওয়া প্রথম উপহার সেই সাদা ওড়নাটা নিয়ে ছাঁদের সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালো।চিলেকোঠার একটা রুমে সে মাঝে মাঝেই থাকে,সাধারণত জোৎস্নার রাতে, ঝুম বৃষ্টির রাতে সে চিলেকোঠায় রাত্রি যাপন করে থাকে।আজকে কৃষ্ণ প্রতিপদ, কাল পূর্নিমা ছিলো।আজকের চাঁদের আলোয় পুরো ছাঁদটাই যেনো জোৎস্নায় ভাসিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। সুহা কিছুক্ষণ ডায়রিটা বুকে জড়িয়ে হাঁটাহাঁটি করে,রেলিং ধরে কিছুক্ষণ রবীন্দ্রসংগীতও করলো একমনে,
"সখী, ভাবনা কাহারে বলে
সখী, যাতনা কাহারে বলে
তোমরা যে বলো দিবস-রজনী
‘ভালোবাসা' ‘ভালোবাসা'—"
একমনে হাঁটাহাঁটি করতে করতে সে চিলেকোঠার দরজা খুলে ঘরে ঢুকলো। ঘরের দক্ষিণের জানালাটা খুলতেই ঘর একদম নীল আলোয় ভরে গেলো।যেনো এই আলো ধরা যায়,এই আলোর ওজন আছে, এতো গাড়। চাঁদটাও কেমন বিশাল লাগছে,যেনো শুধু তার এই ঘরটাকে আলোকিত করার জন্যই আজকে চাঁদটার উদয় হয়েছে।
সোহা এই মৃদু আলোয়, ডায়েরিতে কি যেনো লিখছে,আবার কাটছে। তারপর একসময় সে কলমটা ডায়েরির মধ্যে রেখে কিছুক্ষণ সিলিংটার দিকে তাকিয়ে রইলো।হাতের পাশে পড়ে থাকা সেই সাদা ওড়নাটা হাতে নিয়ে গিট দিতে দিতে সে একমনে গান গাইতে লাগলো,
"মনে রবে কি না রবে আমারে,সে আমার মনে নাই মনে নাই।
ক্ষণে ক্ষণে আসি তব দুয়ারে,অকারণে গান গাই।"
একসময় সে মিষ্টি করে হেসে চেয়ারে দাড়িয়ে ওড়নাটা সিলিং-এর কড়িকাঠের সাথে বেধে দিলো।হঠাৎ করে চেয়ারটা মাটিতে পড়ে যায়,কিন্তু সোহার আলতা মাখা রাঙ্গা পা-দুটু আর ফ্লোর স্পর্শ করলো না।ঠিক এই সময় দক্ষিণের জানালাটা দিয়ে একটা মৃদু বাতাস ঘরে ডুকে তার আঁচলটা দুলিয়ে দিয়ে চলে যায়।
সকাল দশটা ত্রিশ মিনিট, সোহার বাবা মাকে খবর দেওয়া হয়েছে,তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে সোহা যখন ক্লাস নাইনে পড়ে তখন। তারা দুজনই থাকে দেশের দুই প্রান্তে। সোহার খবর শুনে তারা এসেছে ঠিকি কিন্তু এখন পর্যন্ত নিজের মেয়েটার মুখ দেখার সাহস হচ্ছে না তাদের। দুজনই এক কঠিন অপরাধবোধে শুধু চোখের পানি ফেলে যাচ্ছেন।বাবা-মার যে সন্তানের প্রতি দায়িত্ব থাকে, তারা তা পালন করতে পারে নি,এই অপরাধবোধ তাদের যেনো কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।
সোহার বন্ধুরা তাদের সান্ত্বনা দিচ্ছে। অন্যদিকে সোহার একসময়ের প্রিয় বন্ধু ভোর চিলেকোঠায় ঢুকে সোহার নিথর দেহটার দিকে তাকিয়ে নিরবে চোখের জল ফেলছে। পুলিশ আসলো দুপুর বারোটা নাগাত। সুহার চাচা আশরাফ আলী এলাকার পলিটিকাল লিডার। সে পুলিশের সাথে কথা বলে সব মিটমাট করে নিলো।
ভোর সোহার পাশে বসে রুমের চারপাশে চোখ বুলাতে গিয়ে হঠাৎ সেই ডায়রিটার দিকে চোখ পারলো। সে উঠে গিয়ে ডায়রিটা হাতে নিলো।ঐ বাড়িতে ডায়েরিটা খুলার সাহস হয়নি তার,তাই সোহার বাসা থেকে ফিরে আসার সময় সে সঙ্গে করে ডায়রিটা নিয়ে আসে।
সন্ধ্যার পরে ভোরের খুব বেশি সোহার কথা মনে পড়তে লাগলো,তখন ভোর দরজা বন্ধ করে একপ্রকার কৌতুহলবসত ডায়েরিটা নিয়ে পড়তে বসলো।
ডায়েরিটার প্রথম পৃষ্ঠায় সোহার একটা ছবি লাগানো, ছবিতে সে হালকা বেগুনি রঙের শাড়ি পড়ে আছে,খুপায় জারুল ফুল দিয়েছে শাড়ির সাথে মিলিয়ে। সোহার প্রিয় ফুল গুলোর মধ্যে জারুল অন্যতম।তা ছাড়া শিউলি ফুল ছিলো তার খুব পছন্দের।
ভোর খুব আগ্রহ নিয়ে ছবিটা দেখছে।এতো সুশ্রী মেয়েটার শেষ পরিনতি এরকমটা হবে তা সে কল্পনাও করতে পারছে না।কলেজে থাকাকালীন সময়ে সে যে কতোবার তার প্রণয়ের ভাষা বলতে গিয়েও বলতে পারে নি,কি একটা জড়তার কারনে।
ভোর ডায়েরি পরবর্তী পৃষ্ঠা গুলো উল্টাতে লাগলো, সে দেখে ডাইরিটাতে সোহা তার মনের মধ্যে জমিয়ে রাখা কথা গুলো লিখতো।তার একাকিত্ব জীবনের কথা,তার বাবা-মায়ের অবহেলার কথা,সব শেষে মঞ্জু'র কথা।ডায়েরিটা পড়তে গিয়ে ভোর বুঝতে পারলো, সুহা ডায়েরিটা কে তার ভালো বন্ধুর মতো মনে করতো।যাকে সব কথা মন খুলে বলা যায়।
সোহার সময় কাটতো বই পড়ে,গান করে, আর রবীন্দ্রসংগীত শুনে।কবিগুরুর কবিতার প্রতিও ছিলো তার প্রবল টান,সেই সুবাদেই মঞ্জু'র সাথে পরিচয়।চারুকলা অনুষদের লাইব্রেরিতে তাদের প্রথম দেখা।সোহা সঞ্চয়িতা নিয়ে একমনে পড়ছে।হঠাৎ দেখলো একটি ছেলে একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে,সুহার অস্বস্তি লাগাতে সে অন্য একটি টেবিলে গিয়ে বসে।যেনো মঞ্জু তাকে আর না দেখতে পায়।সেদিনই হয়ে ছিলো তাদের প্রথম দেখা।
মাস খানেক পর বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তির জন্য নাম উঠে সোহার,তার সাথে পুরুষ কন্ঠে আবৃত্তি করবে মঞ্জু।ঐদিনই মঞ্জু'র সাথে প্রথম ঠিকঠাক পরিচয় সোহার।সেদিন সোহা আর মঞ্জু সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের "যা চেয়েছি, যা পাবো না"কবিতাটি আবৃত্তি করে।
সাবস্ক্রাইব করুন:
সোহা শান্ত গলায় বললো,
--কী চাও আমার কাছে?
মঞ্জু বললো,
--কিছু তো চাইনি আমি!
--চাওনি তা ঠিক।তবু কেন
এমন ঝড়ের মতো ডাক দাও?
--জানি না।ওদিকে দেখ
রোদ্দুরে রুপোর মত জল
তোমার চোখের মতো
দূরবর্তী নৌকো
চতুর্দিকে তোমাকেই দ্যাখা
--সত্যি করে বলো।কবি,কী চাও আমার কাছে
--মনে হয় তুমি দেবী
--আমি দেবী নই।
কবিতার শেষে সজোরে করতালির শব্দ হলো।সবার মুখে মুখে তাদের প্রশংসা। সেই থেকে প্রতিদিন কবিতা নিয়ে কথা,কবিতা আবৃত্তি, খুনসুটিতেই মেতে থাকতো দুজন।
তারপর একদিন মঞ্জু সোহাকে হুমায়ূন আহমেদের "এইসব দিনরাত্রি "বইটা উপহার দেয়।বইটি দিয়ে মঞ্জু বলে ছিলো,
-সোহা,তুমি এই বইয়ের ১১৭ নম্বর পৃষ্ঠাটা সাবধানে খুলবে,খুলার আগে একবার ছাঁদে যাবে, আমার কথা ভাবতে ভাবতে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করবে,তারপর কয়েকবার বড় বড় করে নিশ্বাস নিয়ে বইটা খুলবে।
সোহা বলে ছিলো,
-তোমার কাছে আছে যত্তসব অদ্ভুত অদ্ভুত কথাবার্তা।
সেদিন বাসা ফিরে সোহা মঞ্জু'র কথা গুলো মনে করে হাসতে লাগলো।এর পর সে মঞ্জুর কথার মতোই সব কিছু করে। বইটা হাতে নিয়ে ছাঁদে যায়,মঞ্জুর কথা ভাবতে ভাবতে বেশ অনেকক্ষণ হাটে।তারপর রুমে এসে রঙ্গিন মোড়কটা খুব যত্ন করে খুলে তা একপাশে সযত্নে রেখে দিলো।তার কাছে এই সামান্য মোড়কটাও যেনো খুব মূল্যবান। বইটা খুলে হাতে নিয়ে সে ১১৭ পৃষ্ঠা খুলেই দেখে কত্তোগুলো শিউলি ফুলের মাঝে একটা হলুদ রঙ্গের চিরকুট। সে সেই চিরকুট ধরেই নিঃশব্দে দুফোঁটা চোখের জল চিরকুটার উপর ফেলে।চিরকুটায় লিখা ছিলো,
"সোহা তুমি কি আমার কবিতা হবে?যদি কবিতা হও তাহলে সারাজীবন তোমাকে আবৃত্তি করেই যাবো।
তোমাকে লুকিয় রাখতে চাই কবিতার অক্ষরে অক্ষরে। "
ভোর ডায়েরির লেখাগুলো পড়তে পড়তে তার চোখ দিয়ে নিঃশব্দে পানি ঝরাতে লাগলো।তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছিলো।ডায়রির এই অংশের লিখা গুলোর পাশেই ভোর দেখতে পেলো,সেই চিরকুট আর শুকনো শিউলি ফুলগুলো।
ভোর যতোটুকু ডায়েরিটা পড়েছে তার একটা পাতা ভেঙ্গে চিহ্ন দিয়ে উঠে গেলো।বেলকনিতে গিয়ে বেতের চেয়ারটায় আলো নিবিয়ে চুপচাপ বসে আছে সে।একটা সময় ভোর অনুভব করলো যেনো সোহা তার পাশেই বসে আছে। যেনো একদৃষ্টিতে তাকে দেখছে,মুখে মৃদু হাসি নিয়ে।তার নাকে শিউলি ফুলের তিব্র ঘ্রাণ ভেসে আসছে।সে ভাবছে আজ এতোদিন পর আবারও সোহা ফিরে এসেছে সেই ডায়েরির অক্ষর গুলো হয়ে।প্রকৃতিও আজ সোহার পক্ষ হয়ে সোহাকে তার কাছে বাস্তব করে তুলেছে।
ভোর সিগারেট ধরালো।আজ কৃষ্ণ দ্বিতীয়া,আজকেও জোৎস্নায় তার বেলকনিতে এসে পড়েছে। সে সিগারেটের ধোঁয়াটা চাঁদটাকে লক্ষ করে ছাড়ছে। আর সেই ধোঁয়ায় যেনো সোহার মুখে অবয়ব দেখতে পাচ্ছে। হাত দিয়ে ধরতে চাচ্ছে সে।কিন্তু সোহা প্রতিবারে মতো হারিয়ে যাচ্ছে।
প্রায় ঘন্টা খানেক পর ভোর বেলকনি ছেড়ে আবারও টেবিলে গিয়ে বসলো।রুমের লাইট অফ করে দিয়ে টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে দেয়।এরপর ডায়েরিটা হাতে নিয়ে বাকি অংশটা পড়তে শুরু করে,
সোহা সেই চিরকুটা পেয়ে মঞ্জুকে সম্মতি জানিয়ে ছিলো,সে তার মনের দরজা মঞ্জুর জন্য খুলে দিয়ে ছিলো সেদিনের পর থেকে।এর পর ডায়েরির বেশ অনেকটা পৃষ্ঠাজুড়ে শুধু তাদের ভালোবাসার গল্পই লিখা।লেখার মাঝে মাঝে গানের কয়েকটা লাইন লিখে রাখতো সোহা।যেমন..
"সে ছোট ঘরেতে শূন্যতা ভরে নির্বাক মিছে আশা
তবু বন্ধু ভালবেসো একবার, যা ছিল সব দিয়েছি দেবার।"
সোহা ঐসময়টায় খুব আবেগি হয়ে থাকতো,মঞ্জুর মন্ত্রে সে মুহিত হয়ে থাকতো।সে ভেবেই নিয়ে ছিলো তার একাকিত্ব বিষন্ন এই জীবনে ভালোবাসার চারা রোপণ করে দিয়েছে মঞ্জু,তাই ডায়রিটার সিংহভাগ শুধু মঞ্জুকে নিয়েই লিখা।
মাঝে বেশ কয়েকদিন মঞ্জুর সাথে কথা বা দেখা কিছুই হয়নি সোহার,এদিকে সোহা উৎকন্ঠা হয়ে থাকে দিবসরজনী।হঠাৎ একদিন সোহার কাছে তার পাড়ার অমিত দাদা একটা চিঠি নিয়ে আসে।অমিতদা যখনি বলছে মঞ্জুর চিঠি,সোহার চোখ ঝলঝল করে উঠলো।সে যেনো তার প্রাণ ফিরে পেলো।চিঠি হাতে নিয়ে সে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলো,এতোদিন সে একটা চিঠির জন্য অপেক্ষায় বিভোর হয়ে থাকতো,কিন্তু আজ চিঠি পেয়েও সে খামটা ছিঁড়ছে না।খুললেই তো পড়া হয়ে যাবে,না পড়ে তার ভেতর কি লিখা আছে সেটা কল্পনা করতেই তার ভালো লাগছে।খাম খুললেই চিঠির মজাটা শেষ হয়ে যাবে।সে চিঠিটা হাতে নিয়ে সব অদ্ভুত অদ্ভুত কাজ করতে লাগলো।কখনো নাকের কাছে নিয়ে তার গন্ধ শুঁকছে,আবার কখনো চোখ বন্ধ করে চিঠিটা গালের সাথে লাগিয়ে রাখলো।
ভোর এই লিখা গুলো পড়ে পৃষ্ঠা শেষ করে পরবর্তী পৃষ্ঠায় গিয়ে দেখলো একটা খাম ডায়েরি পাতার সাথে স্টেপলার করা।ভোর বুঝতে পারলো এই সেই মঞ্জুর চিঠি।সে চিঠিটা খাম থেকে খুলে নিয়ে পড়তে শুরু করলো।
কল্যাণীয়েসু সোহা,
কেমন আছো তুমি?জানি ভালো নেই,ভালো থাকার মতো কিছুই যে আমি করতে পারি নি,আমাকে নিয়ে তোমার উৎকন্ঠার শেষ নেই তা আমি জানি।তাই আর চিঠিটা না লিখে থাকতে পারলাম না। হতে পারে এটাই আমার শেষ চিঠি।কিন্তু তুমি মনে রেখো,মানুষের জীবন থেমে থাকে না,জীবন নদীর মতো প্রবাহমান হয়,বৃক্ষের মতোই শান্ত হয়ে সার্থকতার গান শুনিয়ে যায়।তাই তোমাকে এই কঠিন সত্যিটা যতোই কঠিন হোক না কেন,তুমি মেনে নিবে।
চিঠি লিখতে গিয়ে বার বার আটকে যাচ্ছি,কি লিখবো বুঝতে পারছি না,কিন্তু একসময় যা ইচ্ছে হতো তাই লিখতাম, অশান্ত কলম থামার নাম নিতো না,কিন্তু এখন হাজারো চেষ্টা করে কিছুই লিখতে পারছি না।কি একটা জড়তা কাজ করছে আমার মধ্যে। শব্দ গুলো এতোই কঠিন, এতোই শক্তযে কলম দিয়ে আসতে চাচ্ছে না।লিখতে গেলেই চিঠির পাতায় তোমার ঐ শুভ্র মুখের অবয়ব বেশে উঠছে। ৷ তখন কলমটাকে একটা ধারালো অস্ত্রের মতো মনে হয়, যেন লিখতে গেলেই তোমার চেহারায় আঁচড় আনবে।তাই ভয়ে কিছুই লিখতে পারছি না।
বাস্তবতার মতো কঠিন সত্যের কাছে আজ আমাকে হার মানতে হচ্ছে। আমি নিন্ম মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে,যে কিনা স্বপ্ন ফেরি করে বেড়াতে পারে।কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।স্বপ্ন সার্থকতা লাভের আগেই কফিনে পুরে করব দিয়ে দিতে হয়।আমার মতো ছেলেদের এই জগৎ সংসারে অন্তঃকেন্দ্রিক হলে চলে না।
স্বপ্ন দেখেছিলাম তোমাকে সাথে নিয়ে বৃদ্ধ হবো।একে-অপরের হাতের উপর হাত রেখে আমৃত্যু পর্যন্ত ছায়া হয়ে থাকবো।তোমার গালের নরম দুঃখ গুলো আমার শুষ্ক হাত দিয়ে মুছে দিবো।কিন্তু বিধাতার লিখন যায় না খণ্ডন, তিনি চাচ্ছেন না,তাই আমাকে যেতে হবে আমার শেষ ঠিকানায়।মনে রেখো,মনের কথা গুলো সব সময় অগোছালোই থাকে,মিথ্যা কথাগুলো সুন্দর করে গুছিয়ে বলা যায়।
তোমার মনে আছে?একটা সময় ছিলো তোমাকে নিয়মিতই চিঠি লিখতাম। তোমাকে লিখা চিঠিগুলো কেমন কবিতা হয়ে যেতো।
হঠাৎ মনে পরে গেলো,সেদিনটা কথা,সেদিনও আকাশে ছিলো কালো মেঘ।হিমশীতল বাতাশে লেকের পাড়টায় বসে আছি।মনে মনে ভেবে রেখেছিলাম যদি বৃষ্টি হয় তাহলে তোমাকে নিয়ে লিখা কবিতাটি পড়ে শুনাবো।একসাথে হাতে হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজবো।যখন বৃষ্টি শুরু হলো, আমি আবৃত্তি করলাম ,
মেঘ জমেছে দক্ষিণ দিকে
বিষন্ন এই সন্ধ্যা বেলা,
বৃষ্টি নামুক নাইবা নামুক
মন গেঁথেছে গানের মালা।
কালো হয়ে আসবে আকাশ
পাগল হয়ে ছুটবে বাতাস,
তখন আমি গাইবো গান
জীবন তরীর জুড়বে প্রান।
বেলকনিতে বসে একা
চা' হাতে বর্ষা দেখা,
এসো তুমি আমার বাড়ি,
দিলাম তোমায় নিমন্ত্রণ।
সময় হলে ভিজবো ছাদে,
বৃষ্টি পড়বে যতক্ষণ।
বর্ষাবিলাস করবো দুজন
খুলা ছাদের মধ্যে গিয়ে,
ইচ্ছা হলেই ছুয়ে দিবো
চুল সড়ানোর বাহানা দিয়ে।
হঠাৎ বিকট বজ্রপাতে
ঘুর কাটবে আমার।
দেখবো আমি একলা ছাদে,
নেইক দেখা তোমার।
ভাববো আমার হয়েছে ভুল,
হাতে নিয়েছি কদম ফুল
দিতে তোমায় উপহার।
সাবস্ক্রাইব করুন:
সেদিন দুজনে বৃষ্টিতে ভিজে চোখ লাল করে ছিলাম।কদম ফুল হাতে নিয়ে হাঁটু গেড়ে ভালোবাসার প্রস্তাব পেশ করে ছিলাম। কি নাটকীয় ছিলো ঐ দিন গুলো।
থাক ঐসব কথা।তুমি আমাকে ভুলতে পারবে না জানি,কিন্তু আমার কথা মনে করে তুমি কখনো পাপ করে বসো না যেন।মনে রেখো আত্মহত্যা মহা পাপ।জীবনে যা কিছুই হোক বেঁচে থাকতে হবে।আত্মহত্যা মানে পরাজয় মেনে নেওয়া।
তোমার কাছে শেষ অনুরোধ, দয়াকরে তুমি আমার খুঁজ কখনো করো না।আমার খুঁজে তুমি শুধু কষ্টই পাবে,প্রতিবারের মতো।তাই আমাকে,আমার সাথে কাটানো সময়টাকে একটা দুঃস্বপ্ন ভেবে সামনে এগিয়ে যাবে।আর যদি সম্ভব হয় আমাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখো।
ইতি,
মঞ্জু
মঞ্জুর চিঠি দেখার পর সপ্তাহখানেক সোহা কোথাও যায়নি।সে ঘরের মধ্যে দরজা জানালা বন্ধ করে প্যারালাইজডের মতো আধঘুমে দিনরাত কাটিয়েছে।
পরে একদিন ভার্সিটিতে গেলো,সেদিনই ছিলো সোহার ইউনিভার্সিটি জীবনের শেষদিন।সে ক্যাম্পাসে ঢুকার সময় মেইন গেটে দেখলো একটা কালো ব্যানার ঝুলানো। ব্যানারটায় মঞ্জুর হলুদ পাঞ্জাবি পড়া একটা ছবি, ছবিতে মঞ্জু'র মুখে মলিন হাসি দেওয়া।
ব্যানারটায় লিখা ছিলো,
মোঃ মঈনুল হোসেন মঞ্জু'র আকাল মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। গত ১৭ই এপ্রিল রাত ৩টা ১০ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করে।
সেদিন সে বাসায় কিভাবে ফিরে বলতে পারে না, ঐরাতেই সোহা ডায়েরি শেষ পাতায় লিখে,
ভেবেছিলাম তোমার জন্য অপেক্ষা করবো,এই ভেবে যে তুমি কোনো না কোনো দিন ঠিকি ফিরে আসবে।পরবর্তীতে মনে হলো অপেক্ষা মানেই শুধু মনের অপচয়। যে আসার সে আসবেই। অবহেলা আমার জীবনে নতুন কিছু নয়।তাই নিজেকে বুঝিয়েও নিয়ে ছিলাম।কিন্তু আজ তোমাকে নিয়ে শোকবার্তা দেখে বুঝতে পারলাম তুমি ভিষণরকম মিথ্যাবাদী। তোমার সাজানো নাট্যমঞ্চে আমি এক নির্বিক দর্শক ছিলাম মাত্র,আর কিছু না।
আমি জানি আত্মহত্যা মহাপাপ, কিন্তু আত্মাকে কি কেউ হত্যা করতে পারে।আমি বিশ্বাস করি আত্মা অবিনশ্বর।তাই মৃত্যু নামক সত্যকে কাছে টেনে নিলাম।
ভোর দেখে,সোহা ডায়েরি শেষ পাতাটায় লিখা ছিলো,আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না।পরবর্তীতে "না" শব্দটা কেটে দিয়ে ছিলো সে।
ভোর ডায়েরিটা পড়া শেষ করে রেখে দিয়ে ছাঁদে যায়।আকাশে মেঘের ছুটাছুটি।মেঘগুলো চাঁদটাকে ডেকে দিয়ে আবার চলে যাচ্ছে। বাতাসের সাথে তিব্র শিউলী ফুলের ঘ্রাণ ভেসে আসছে।সে ছাদের রেলিংএর পাশে দাড়িয়ে সিগারেট ধরাতে ধরাতে দেখলো সোহা বাসার নিচের শিউলী গাছটার তলায় বসে আছে।মুখে হাসি নিয়ে তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ভোরও সোহার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,হঠাৎ একদল মেঘ এসে চাঁদটাকে ঢেকে দেওয়াতে সোহাকে আর দেতে পায় না সে।মেঘের সিঁড়ি বেয়ে হয়তো সে চলে গেছে অন্য কোন এক জগতে।
লিখা: মোঃ মঈন খান
আয়নার সামনে সে প্রায় একঘন্টা যাবত বসেই আছে,পাথর হয়ে।
হঠাৎ সে উঠে গিয়ে,ঘরের আলমারি খুলে একটা পুরনো দিনের নীল রং-এর সিল্কের শাড়ি বের করলো।সেটা তার মায়ের শাড়ি।শাড়িটা দেখেই সোহার মনে পড়ে গেলো ঐদিনটার কথা,যেই দিনটায় মঞ্জু বলেছিলো,
-সোহা,তুমি কোনদিনি শাড়ি পড়া শিখবে না,আর কখনো টিপ পড়ে আসবে না।
সোহা কারণ জানতে চাইলে মঞ্জু বলেছিলো,
-কারণ, প্রেমিকাদের শাড়ি পড়তে জানা বারন আছে, আর দরিদ্র প্রেমিকের প্রেমিকার কপাল ছোঁয়ারও তো একটা বাহানা লাগে,তাই না?
টিপ খুব সহজ মূল্যে পাওয়া যায়,যা আমি তোমাকে দেওয়ার সাধ্য রাখি,বিনিময় তোমার শুভ্র ললাট স্পর্শ করে দিতে পারি।
মঞ্জুর এইসব অদ্ভুত কথা শুনে সোহা শুধু হেসেই যেতো।
আজ আবার সেই কথা গুলো মনে করে সোহা মৃদু হাসলো।
সে অনেক ধীরগতিতে শাড়িটা পড়লো।খুব যত্ন নিয়ে নিজেকে সাজিয়ে নিলো।গাড়ো করে কাজল দিলো চোখে।এখন তার চোখ গুলো আরো বড় আরও সুন্দর লাগছে।ফ্যাকাশে ঠোঁটজোড়ায় টকটকে লাল লিপস্টিক দেওয়াতে মৃত মানবীর ভাবটাও কেটে গেছে।কপালে নীল টিপ দেওয়া হয়েছে।কানে ছোট্ট আয়নার মতো দেখতে শিল্পের কারুকাজ করা একজোড়া দুল পড়েছে।
এখন তাকে খুব মায়াবতী মেয়ে লাগছে।যে রমনীকে কল্পনা করে কবিরা পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা কবিতা লিখে যায়,কিন্তু তবুও তার রূপের উপমা দিয়ে শেষ করতে পারে না। ঠিক সেইরকম মায়াবতীদের মতই লাগছে।
সোহা এখন তার বালিসের নিচে রাখা ডায়রি,কলম আর মঞ্জু'র দেওয়া প্রথম উপহার সেই সাদা ওড়নাটা নিয়ে ছাঁদের সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালো।চিলেকোঠার একটা রুমে সে মাঝে মাঝেই থাকে,সাধারণত জোৎস্নার রাতে, ঝুম বৃষ্টির রাতে সে চিলেকোঠায় রাত্রি যাপন করে থাকে।আজকে কৃষ্ণ প্রতিপদ, কাল পূর্নিমা ছিলো।আজকের চাঁদের আলোয় পুরো ছাঁদটাই যেনো জোৎস্নায় ভাসিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। সুহা কিছুক্ষণ ডায়রিটা বুকে জড়িয়ে হাঁটাহাঁটি করে,রেলিং ধরে কিছুক্ষণ রবীন্দ্রসংগীতও করলো একমনে,
"সখী, ভাবনা কাহারে বলে
সখী, যাতনা কাহারে বলে
তোমরা যে বলো দিবস-রজনী
‘ভালোবাসা' ‘ভালোবাসা'—"
একমনে হাঁটাহাঁটি করতে করতে সে চিলেকোঠার দরজা খুলে ঘরে ঢুকলো। ঘরের দক্ষিণের জানালাটা খুলতেই ঘর একদম নীল আলোয় ভরে গেলো।যেনো এই আলো ধরা যায়,এই আলোর ওজন আছে, এতো গাড়। চাঁদটাও কেমন বিশাল লাগছে,যেনো শুধু তার এই ঘরটাকে আলোকিত করার জন্যই আজকে চাঁদটার উদয় হয়েছে।
সোহা এই মৃদু আলোয়, ডায়েরিতে কি যেনো লিখছে,আবার কাটছে। তারপর একসময় সে কলমটা ডায়েরির মধ্যে রেখে কিছুক্ষণ সিলিংটার দিকে তাকিয়ে রইলো।হাতের পাশে পড়ে থাকা সেই সাদা ওড়নাটা হাতে নিয়ে গিট দিতে দিতে সে একমনে গান গাইতে লাগলো,
"মনে রবে কি না রবে আমারে,সে আমার মনে নাই মনে নাই।
ক্ষণে ক্ষণে আসি তব দুয়ারে,অকারণে গান গাই।"
একসময় সে মিষ্টি করে হেসে চেয়ারে দাড়িয়ে ওড়নাটা সিলিং-এর কড়িকাঠের সাথে বেধে দিলো।হঠাৎ করে চেয়ারটা মাটিতে পড়ে যায়,কিন্তু সোহার আলতা মাখা রাঙ্গা পা-দুটু আর ফ্লোর স্পর্শ করলো না।ঠিক এই সময় দক্ষিণের জানালাটা দিয়ে একটা মৃদু বাতাস ঘরে ডুকে তার আঁচলটা দুলিয়ে দিয়ে চলে যায়।
সকাল দশটা ত্রিশ মিনিট, সোহার বাবা মাকে খবর দেওয়া হয়েছে,তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে সোহা যখন ক্লাস নাইনে পড়ে তখন। তারা দুজনই থাকে দেশের দুই প্রান্তে। সোহার খবর শুনে তারা এসেছে ঠিকি কিন্তু এখন পর্যন্ত নিজের মেয়েটার মুখ দেখার সাহস হচ্ছে না তাদের। দুজনই এক কঠিন অপরাধবোধে শুধু চোখের পানি ফেলে যাচ্ছেন।বাবা-মার যে সন্তানের প্রতি দায়িত্ব থাকে, তারা তা পালন করতে পারে নি,এই অপরাধবোধ তাদের যেনো কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।
সোহার বন্ধুরা তাদের সান্ত্বনা দিচ্ছে। অন্যদিকে সোহার একসময়ের প্রিয় বন্ধু ভোর চিলেকোঠায় ঢুকে সোহার নিথর দেহটার দিকে তাকিয়ে নিরবে চোখের জল ফেলছে। পুলিশ আসলো দুপুর বারোটা নাগাত। সুহার চাচা আশরাফ আলী এলাকার পলিটিকাল লিডার। সে পুলিশের সাথে কথা বলে সব মিটমাট করে নিলো।
ভোর সোহার পাশে বসে রুমের চারপাশে চোখ বুলাতে গিয়ে হঠাৎ সেই ডায়রিটার দিকে চোখ পারলো। সে উঠে গিয়ে ডায়রিটা হাতে নিলো।ঐ বাড়িতে ডায়েরিটা খুলার সাহস হয়নি তার,তাই সোহার বাসা থেকে ফিরে আসার সময় সে সঙ্গে করে ডায়রিটা নিয়ে আসে।
সন্ধ্যার পরে ভোরের খুব বেশি সোহার কথা মনে পড়তে লাগলো,তখন ভোর দরজা বন্ধ করে একপ্রকার কৌতুহলবসত ডায়েরিটা নিয়ে পড়তে বসলো।
ডায়েরিটার প্রথম পৃষ্ঠায় সোহার একটা ছবি লাগানো, ছবিতে সে হালকা বেগুনি রঙের শাড়ি পড়ে আছে,খুপায় জারুল ফুল দিয়েছে শাড়ির সাথে মিলিয়ে। সোহার প্রিয় ফুল গুলোর মধ্যে জারুল অন্যতম।তা ছাড়া শিউলি ফুল ছিলো তার খুব পছন্দের।
ভোর খুব আগ্রহ নিয়ে ছবিটা দেখছে।এতো সুশ্রী মেয়েটার শেষ পরিনতি এরকমটা হবে তা সে কল্পনাও করতে পারছে না।কলেজে থাকাকালীন সময়ে সে যে কতোবার তার প্রণয়ের ভাষা বলতে গিয়েও বলতে পারে নি,কি একটা জড়তার কারনে।
ভোর ডায়েরি পরবর্তী পৃষ্ঠা গুলো উল্টাতে লাগলো, সে দেখে ডাইরিটাতে সোহা তার মনের মধ্যে জমিয়ে রাখা কথা গুলো লিখতো।তার একাকিত্ব জীবনের কথা,তার বাবা-মায়ের অবহেলার কথা,সব শেষে মঞ্জু'র কথা।ডায়েরিটা পড়তে গিয়ে ভোর বুঝতে পারলো, সুহা ডায়েরিটা কে তার ভালো বন্ধুর মতো মনে করতো।যাকে সব কথা মন খুলে বলা যায়।
সোহার সময় কাটতো বই পড়ে,গান করে, আর রবীন্দ্রসংগীত শুনে।কবিগুরুর কবিতার প্রতিও ছিলো তার প্রবল টান,সেই সুবাদেই মঞ্জু'র সাথে পরিচয়।চারুকলা অনুষদের লাইব্রেরিতে তাদের প্রথম দেখা।সোহা সঞ্চয়িতা নিয়ে একমনে পড়ছে।হঠাৎ দেখলো একটি ছেলে একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে,সুহার অস্বস্তি লাগাতে সে অন্য একটি টেবিলে গিয়ে বসে।যেনো মঞ্জু তাকে আর না দেখতে পায়।সেদিনই হয়ে ছিলো তাদের প্রথম দেখা।
মাস খানেক পর বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তির জন্য নাম উঠে সোহার,তার সাথে পুরুষ কন্ঠে আবৃত্তি করবে মঞ্জু।ঐদিনই মঞ্জু'র সাথে প্রথম ঠিকঠাক পরিচয় সোহার।সেদিন সোহা আর মঞ্জু সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের "যা চেয়েছি, যা পাবো না"কবিতাটি আবৃত্তি করে।
সাবস্ক্রাইব করুন:
সোহা শান্ত গলায় বললো,
--কী চাও আমার কাছে?
মঞ্জু বললো,
--কিছু তো চাইনি আমি!
--চাওনি তা ঠিক।তবু কেন
এমন ঝড়ের মতো ডাক দাও?
--জানি না।ওদিকে দেখ
রোদ্দুরে রুপোর মত জল
তোমার চোখের মতো
দূরবর্তী নৌকো
চতুর্দিকে তোমাকেই দ্যাখা
--সত্যি করে বলো।কবি,কী চাও আমার কাছে
--মনে হয় তুমি দেবী
--আমি দেবী নই।
কবিতার শেষে সজোরে করতালির শব্দ হলো।সবার মুখে মুখে তাদের প্রশংসা। সেই থেকে প্রতিদিন কবিতা নিয়ে কথা,কবিতা আবৃত্তি, খুনসুটিতেই মেতে থাকতো দুজন।
তারপর একদিন মঞ্জু সোহাকে হুমায়ূন আহমেদের "এইসব দিনরাত্রি "বইটা উপহার দেয়।বইটি দিয়ে মঞ্জু বলে ছিলো,
-সোহা,তুমি এই বইয়ের ১১৭ নম্বর পৃষ্ঠাটা সাবধানে খুলবে,খুলার আগে একবার ছাঁদে যাবে, আমার কথা ভাবতে ভাবতে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করবে,তারপর কয়েকবার বড় বড় করে নিশ্বাস নিয়ে বইটা খুলবে।
সোহা বলে ছিলো,
-তোমার কাছে আছে যত্তসব অদ্ভুত অদ্ভুত কথাবার্তা।
সেদিন বাসা ফিরে সোহা মঞ্জু'র কথা গুলো মনে করে হাসতে লাগলো।এর পর সে মঞ্জুর কথার মতোই সব কিছু করে। বইটা হাতে নিয়ে ছাঁদে যায়,মঞ্জুর কথা ভাবতে ভাবতে বেশ অনেকক্ষণ হাটে।তারপর রুমে এসে রঙ্গিন মোড়কটা খুব যত্ন করে খুলে তা একপাশে সযত্নে রেখে দিলো।তার কাছে এই সামান্য মোড়কটাও যেনো খুব মূল্যবান। বইটা খুলে হাতে নিয়ে সে ১১৭ পৃষ্ঠা খুলেই দেখে কত্তোগুলো শিউলি ফুলের মাঝে একটা হলুদ রঙ্গের চিরকুট। সে সেই চিরকুট ধরেই নিঃশব্দে দুফোঁটা চোখের জল চিরকুটার উপর ফেলে।চিরকুটায় লিখা ছিলো,
"সোহা তুমি কি আমার কবিতা হবে?যদি কবিতা হও তাহলে সারাজীবন তোমাকে আবৃত্তি করেই যাবো।
তোমাকে লুকিয় রাখতে চাই কবিতার অক্ষরে অক্ষরে। "
ভোর ডায়েরির লেখাগুলো পড়তে পড়তে তার চোখ দিয়ে নিঃশব্দে পানি ঝরাতে লাগলো।তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছিলো।ডায়রির এই অংশের লিখা গুলোর পাশেই ভোর দেখতে পেলো,সেই চিরকুট আর শুকনো শিউলি ফুলগুলো।
ভোর যতোটুকু ডায়েরিটা পড়েছে তার একটা পাতা ভেঙ্গে চিহ্ন দিয়ে উঠে গেলো।বেলকনিতে গিয়ে বেতের চেয়ারটায় আলো নিবিয়ে চুপচাপ বসে আছে সে।একটা সময় ভোর অনুভব করলো যেনো সোহা তার পাশেই বসে আছে। যেনো একদৃষ্টিতে তাকে দেখছে,মুখে মৃদু হাসি নিয়ে।তার নাকে শিউলি ফুলের তিব্র ঘ্রাণ ভেসে আসছে।সে ভাবছে আজ এতোদিন পর আবারও সোহা ফিরে এসেছে সেই ডায়েরির অক্ষর গুলো হয়ে।প্রকৃতিও আজ সোহার পক্ষ হয়ে সোহাকে তার কাছে বাস্তব করে তুলেছে।
ভোর সিগারেট ধরালো।আজ কৃষ্ণ দ্বিতীয়া,আজকেও জোৎস্নায় তার বেলকনিতে এসে পড়েছে। সে সিগারেটের ধোঁয়াটা চাঁদটাকে লক্ষ করে ছাড়ছে। আর সেই ধোঁয়ায় যেনো সোহার মুখে অবয়ব দেখতে পাচ্ছে। হাত দিয়ে ধরতে চাচ্ছে সে।কিন্তু সোহা প্রতিবারে মতো হারিয়ে যাচ্ছে।
প্রায় ঘন্টা খানেক পর ভোর বেলকনি ছেড়ে আবারও টেবিলে গিয়ে বসলো।রুমের লাইট অফ করে দিয়ে টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে দেয়।এরপর ডায়েরিটা হাতে নিয়ে বাকি অংশটা পড়তে শুরু করে,
সোহা সেই চিরকুটা পেয়ে মঞ্জুকে সম্মতি জানিয়ে ছিলো,সে তার মনের দরজা মঞ্জুর জন্য খুলে দিয়ে ছিলো সেদিনের পর থেকে।এর পর ডায়েরির বেশ অনেকটা পৃষ্ঠাজুড়ে শুধু তাদের ভালোবাসার গল্পই লিখা।লেখার মাঝে মাঝে গানের কয়েকটা লাইন লিখে রাখতো সোহা।যেমন..
"সে ছোট ঘরেতে শূন্যতা ভরে নির্বাক মিছে আশা
তবু বন্ধু ভালবেসো একবার, যা ছিল সব দিয়েছি দেবার।"
সোহা ঐসময়টায় খুব আবেগি হয়ে থাকতো,মঞ্জুর মন্ত্রে সে মুহিত হয়ে থাকতো।সে ভেবেই নিয়ে ছিলো তার একাকিত্ব বিষন্ন এই জীবনে ভালোবাসার চারা রোপণ করে দিয়েছে মঞ্জু,তাই ডায়রিটার সিংহভাগ শুধু মঞ্জুকে নিয়েই লিখা।
মাঝে বেশ কয়েকদিন মঞ্জুর সাথে কথা বা দেখা কিছুই হয়নি সোহার,এদিকে সোহা উৎকন্ঠা হয়ে থাকে দিবসরজনী।হঠাৎ একদিন সোহার কাছে তার পাড়ার অমিত দাদা একটা চিঠি নিয়ে আসে।অমিতদা যখনি বলছে মঞ্জুর চিঠি,সোহার চোখ ঝলঝল করে উঠলো।সে যেনো তার প্রাণ ফিরে পেলো।চিঠি হাতে নিয়ে সে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলো,এতোদিন সে একটা চিঠির জন্য অপেক্ষায় বিভোর হয়ে থাকতো,কিন্তু আজ চিঠি পেয়েও সে খামটা ছিঁড়ছে না।খুললেই তো পড়া হয়ে যাবে,না পড়ে তার ভেতর কি লিখা আছে সেটা কল্পনা করতেই তার ভালো লাগছে।খাম খুললেই চিঠির মজাটা শেষ হয়ে যাবে।সে চিঠিটা হাতে নিয়ে সব অদ্ভুত অদ্ভুত কাজ করতে লাগলো।কখনো নাকের কাছে নিয়ে তার গন্ধ শুঁকছে,আবার কখনো চোখ বন্ধ করে চিঠিটা গালের সাথে লাগিয়ে রাখলো।
ভোর এই লিখা গুলো পড়ে পৃষ্ঠা শেষ করে পরবর্তী পৃষ্ঠায় গিয়ে দেখলো একটা খাম ডায়েরি পাতার সাথে স্টেপলার করা।ভোর বুঝতে পারলো এই সেই মঞ্জুর চিঠি।সে চিঠিটা খাম থেকে খুলে নিয়ে পড়তে শুরু করলো।
কল্যাণীয়েসু সোহা,
কেমন আছো তুমি?জানি ভালো নেই,ভালো থাকার মতো কিছুই যে আমি করতে পারি নি,আমাকে নিয়ে তোমার উৎকন্ঠার শেষ নেই তা আমি জানি।তাই আর চিঠিটা না লিখে থাকতে পারলাম না। হতে পারে এটাই আমার শেষ চিঠি।কিন্তু তুমি মনে রেখো,মানুষের জীবন থেমে থাকে না,জীবন নদীর মতো প্রবাহমান হয়,বৃক্ষের মতোই শান্ত হয়ে সার্থকতার গান শুনিয়ে যায়।তাই তোমাকে এই কঠিন সত্যিটা যতোই কঠিন হোক না কেন,তুমি মেনে নিবে।
চিঠি লিখতে গিয়ে বার বার আটকে যাচ্ছি,কি লিখবো বুঝতে পারছি না,কিন্তু একসময় যা ইচ্ছে হতো তাই লিখতাম, অশান্ত কলম থামার নাম নিতো না,কিন্তু এখন হাজারো চেষ্টা করে কিছুই লিখতে পারছি না।কি একটা জড়তা কাজ করছে আমার মধ্যে। শব্দ গুলো এতোই কঠিন, এতোই শক্তযে কলম দিয়ে আসতে চাচ্ছে না।লিখতে গেলেই চিঠির পাতায় তোমার ঐ শুভ্র মুখের অবয়ব বেশে উঠছে। ৷ তখন কলমটাকে একটা ধারালো অস্ত্রের মতো মনে হয়, যেন লিখতে গেলেই তোমার চেহারায় আঁচড় আনবে।তাই ভয়ে কিছুই লিখতে পারছি না।
বাস্তবতার মতো কঠিন সত্যের কাছে আজ আমাকে হার মানতে হচ্ছে। আমি নিন্ম মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে,যে কিনা স্বপ্ন ফেরি করে বেড়াতে পারে।কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।স্বপ্ন সার্থকতা লাভের আগেই কফিনে পুরে করব দিয়ে দিতে হয়।আমার মতো ছেলেদের এই জগৎ সংসারে অন্তঃকেন্দ্রিক হলে চলে না।
স্বপ্ন দেখেছিলাম তোমাকে সাথে নিয়ে বৃদ্ধ হবো।একে-অপরের হাতের উপর হাত রেখে আমৃত্যু পর্যন্ত ছায়া হয়ে থাকবো।তোমার গালের নরম দুঃখ গুলো আমার শুষ্ক হাত দিয়ে মুছে দিবো।কিন্তু বিধাতার লিখন যায় না খণ্ডন, তিনি চাচ্ছেন না,তাই আমাকে যেতে হবে আমার শেষ ঠিকানায়।মনে রেখো,মনের কথা গুলো সব সময় অগোছালোই থাকে,মিথ্যা কথাগুলো সুন্দর করে গুছিয়ে বলা যায়।
তোমার মনে আছে?একটা সময় ছিলো তোমাকে নিয়মিতই চিঠি লিখতাম। তোমাকে লিখা চিঠিগুলো কেমন কবিতা হয়ে যেতো।
হঠাৎ মনে পরে গেলো,সেদিনটা কথা,সেদিনও আকাশে ছিলো কালো মেঘ।হিমশীতল বাতাশে লেকের পাড়টায় বসে আছি।মনে মনে ভেবে রেখেছিলাম যদি বৃষ্টি হয় তাহলে তোমাকে নিয়ে লিখা কবিতাটি পড়ে শুনাবো।একসাথে হাতে হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজবো।যখন বৃষ্টি শুরু হলো, আমি আবৃত্তি করলাম ,
মেঘ জমেছে দক্ষিণ দিকে
বিষন্ন এই সন্ধ্যা বেলা,
বৃষ্টি নামুক নাইবা নামুক
মন গেঁথেছে গানের মালা।
কালো হয়ে আসবে আকাশ
পাগল হয়ে ছুটবে বাতাস,
তখন আমি গাইবো গান
জীবন তরীর জুড়বে প্রান।
বেলকনিতে বসে একা
চা' হাতে বর্ষা দেখা,
এসো তুমি আমার বাড়ি,
দিলাম তোমায় নিমন্ত্রণ।
সময় হলে ভিজবো ছাদে,
বৃষ্টি পড়বে যতক্ষণ।
বর্ষাবিলাস করবো দুজন
খুলা ছাদের মধ্যে গিয়ে,
ইচ্ছা হলেই ছুয়ে দিবো
চুল সড়ানোর বাহানা দিয়ে।
হঠাৎ বিকট বজ্রপাতে
ঘুর কাটবে আমার।
দেখবো আমি একলা ছাদে,
নেইক দেখা তোমার।
ভাববো আমার হয়েছে ভুল,
হাতে নিয়েছি কদম ফুল
দিতে তোমায় উপহার।
সাবস্ক্রাইব করুন:
সেদিন দুজনে বৃষ্টিতে ভিজে চোখ লাল করে ছিলাম।কদম ফুল হাতে নিয়ে হাঁটু গেড়ে ভালোবাসার প্রস্তাব পেশ করে ছিলাম। কি নাটকীয় ছিলো ঐ দিন গুলো।
থাক ঐসব কথা।তুমি আমাকে ভুলতে পারবে না জানি,কিন্তু আমার কথা মনে করে তুমি কখনো পাপ করে বসো না যেন।মনে রেখো আত্মহত্যা মহা পাপ।জীবনে যা কিছুই হোক বেঁচে থাকতে হবে।আত্মহত্যা মানে পরাজয় মেনে নেওয়া।
তোমার কাছে শেষ অনুরোধ, দয়াকরে তুমি আমার খুঁজ কখনো করো না।আমার খুঁজে তুমি শুধু কষ্টই পাবে,প্রতিবারের মতো।তাই আমাকে,আমার সাথে কাটানো সময়টাকে একটা দুঃস্বপ্ন ভেবে সামনে এগিয়ে যাবে।আর যদি সম্ভব হয় আমাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখো।
ইতি,
মঞ্জু
মঞ্জুর চিঠি দেখার পর সপ্তাহখানেক সোহা কোথাও যায়নি।সে ঘরের মধ্যে দরজা জানালা বন্ধ করে প্যারালাইজডের মতো আধঘুমে দিনরাত কাটিয়েছে।
পরে একদিন ভার্সিটিতে গেলো,সেদিনই ছিলো সোহার ইউনিভার্সিটি জীবনের শেষদিন।সে ক্যাম্পাসে ঢুকার সময় মেইন গেটে দেখলো একটা কালো ব্যানার ঝুলানো। ব্যানারটায় মঞ্জুর হলুদ পাঞ্জাবি পড়া একটা ছবি, ছবিতে মঞ্জু'র মুখে মলিন হাসি দেওয়া।
ব্যানারটায় লিখা ছিলো,
মোঃ মঈনুল হোসেন মঞ্জু'র আকাল মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। গত ১৭ই এপ্রিল রাত ৩টা ১০ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করে।
সেদিন সে বাসায় কিভাবে ফিরে বলতে পারে না, ঐরাতেই সোহা ডায়েরি শেষ পাতায় লিখে,
ভেবেছিলাম তোমার জন্য অপেক্ষা করবো,এই ভেবে যে তুমি কোনো না কোনো দিন ঠিকি ফিরে আসবে।পরবর্তীতে মনে হলো অপেক্ষা মানেই শুধু মনের অপচয়। যে আসার সে আসবেই। অবহেলা আমার জীবনে নতুন কিছু নয়।তাই নিজেকে বুঝিয়েও নিয়ে ছিলাম।কিন্তু আজ তোমাকে নিয়ে শোকবার্তা দেখে বুঝতে পারলাম তুমি ভিষণরকম মিথ্যাবাদী। তোমার সাজানো নাট্যমঞ্চে আমি এক নির্বিক দর্শক ছিলাম মাত্র,আর কিছু না।
আমি জানি আত্মহত্যা মহাপাপ, কিন্তু আত্মাকে কি কেউ হত্যা করতে পারে।আমি বিশ্বাস করি আত্মা অবিনশ্বর।তাই মৃত্যু নামক সত্যকে কাছে টেনে নিলাম।
ভোর দেখে,সোহা ডায়েরি শেষ পাতাটায় লিখা ছিলো,আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না।পরবর্তীতে "না" শব্দটা কেটে দিয়ে ছিলো সে।
ভোর ডায়েরিটা পড়া শেষ করে রেখে দিয়ে ছাঁদে যায়।আকাশে মেঘের ছুটাছুটি।মেঘগুলো চাঁদটাকে ডেকে দিয়ে আবার চলে যাচ্ছে। বাতাসের সাথে তিব্র শিউলী ফুলের ঘ্রাণ ভেসে আসছে।সে ছাদের রেলিংএর পাশে দাড়িয়ে সিগারেট ধরাতে ধরাতে দেখলো সোহা বাসার নিচের শিউলী গাছটার তলায় বসে আছে।মুখে হাসি নিয়ে তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ভোরও সোহার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,হঠাৎ একদল মেঘ এসে চাঁদটাকে ঢেকে দেওয়াতে সোহাকে আর দেতে পায় না সে।মেঘের সিঁড়ি বেয়ে হয়তো সে চলে গেছে অন্য কোন এক জগতে।
লিখা: মোঃ মঈন খান