গল্পঃ লুকোনো অনুভূতি
গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে ছেয়ে গেছে চারপাশটা । আষাঢ় মাস । কখনো মেঘ তো কখনো বৃষ্টি ।
_ধুর ছাই । আজ ছাতা টা যে কেন আনলাম না । র্নিঘাত আজ বকা খেতে হবে মায়ের হাতে । ছেলে যে এত বড় হয়েছে মা যেন তা মানতেই চায় না ।
ছাউনির নিচে দাড়িয়ে কথা গুলো ভাবছিল নীল । মাটি কে যেন বৃষ্টি তার ভালোবাসা ক্রমেই বাড়িয়ে দিচ্ছিল । গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি যেন ঝড়ের আকার নিয়েছে । নীল ছাউনির নিচে দাড়িয়েই আনমনেই বৃষ্টি দেখছিল ।
হঠাত্ সে আবিষ্কার করল ছাউনির ওপারে একটি মেয়ে দাড়িয়ে , পরণে ছিল তার প্রিয় নীল রঙের শাড়ী আর হাত র্ভতি যেন একশ কাঁচের চুঁড়ি । ছাউনির বাহিরে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টিকে ছুঁয়ে দিচ্ছিল ।
মেয়েটি যখন নীলের দিকে তাকালো নীল যেন হাজার ভোল্টের শক্ খেল ।
_একী তুমি । এখানে ?
_হুম আমি । চিনতে পেরেছ তাহলে ।
_কেন পারব না ! তা এত বছর পর ? কোথায় ছিলে ?
_চিটাগাং । জামানের পোষ্টিং হয়েছিল চিটাগাং এ । এখন ঢাকায় ।
_জামান ! হাজবেন্ড নিশ্চয় ?
_হুম ।
_ঢাকায় কোথায় উঠেছো ?
_বনানীতে । ওর অফিস থেকে একটা ফ্লাট দিয়েছে ।
_ও ।
_আন্টি ভালো আছেন ?
_হুম ।
_আচ্ছা , নীলাকে আনতে যেতে হবে । এখন আসি ।
_নীলা বুঝি মেয়ের নাম ?
_হুম ।
_সুন্দর ।
_এখন বরং যাই । এর স্কুলের ছুটি হয়ে যাবে ।
বলেই তড়িঘড়ি করে চলে যায় মিথিলা ।
যখন ইউনির্ভাসিটিতে পড়ত মিথিলা তখন নীল ছিল তার সবচেয়ে ভাল বেস্ট ফ্রেন্ড । মুর্হূতেই এক সূতোয় গাঁথা সেই রঙিন দিন গুলো পার হতে লাগল তাদের । ক্লাস ফাঁকি দিয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে ফুসকা খাওয়া , কথায় কথায় ঝগড়া , মিষ্টি শাসন , দুষ্টামি একরাশ অভিমান এমন কী মারামারি র্পযন্তও হয়ে যেত তাদের ।
এত বছর পর মিথিলাকে দেখে মুর্হূতেই স্মৃতির মায়াজালে যেন মাকড়সার খাদ্য বস্তু হিসেবে আটকা পরে গেল নীল । স্মৃতি গুলো মাকড়সা রুপে তাকে একটু একটু করে গিলে খাচ্ছে ।
আজ অফিস শেষ করেই নীল মিথিলার সেই পছন্দের লেকের পাড়ে গিয়ে বসল । লেকটা জুড়ে আজও আছে গাছ গুলো মাথা উঁচু করে হাত বাড়িয়ে ঐ আকাশ কে ছুঁয়ে । বৃষ্টির র্স্পশে গাছের পাতা গুলো যেন তাদের প্রাণ ফিরে পেয়েছে ।
হঠাত্ করেই নীল মিথিলার সেই পারফিউমের সু-গন্ধটার উপস্থিতি অনুভব করল । কিছু বুঝে উঠার আগেই একটি হাতের র্স্পশ অনুভব করল তার কাঁধে ।
_তুমি ?
_হুম,কী করছ এখানে ?
_কিছুনা
_অফিস তো শেষ,সন্ধ্যা হয়ে এল বাসায় যাবে না ?
_হুম যাব । আচ্ছা একটা কথা বলব ?
_বলো
_আমার চিঠিটার উত্তর দিলেনা কেন ?
_ঐ বইটার ভাঁজেই ছিল উত্তর তা । কেন অর্ণা তোমাকে বইটি দেয় নি?
_মানে কী ! ও তোমার বিয়ের দু'সপ্তাহ পর বইটা দিয়েছিল । খুলে দেখা হয়নি । মা অসুস্থ ছিল তাই ব্যস্ত ছিলাম ।
_ভালো । তা তোমার ছেলে না মেয়ে ?
_হা হা
_হাসলে কেন?
_কিছুনা । আচ্ছা তুমি এখন কেমন আছো ?
_মেয়ে সংসার নিয়ে অনেক ভালই আছি ।
_হুম নীলার বয়স যেন কত হল ?
_১২ । তুমি বিয়ে করনি ?
_ওর নাম নীলা রেখেছো কেন ?আমার সাথে মিল রেখে ?
_জানিনা । আচ্ছা আজ বরং আসি ।
বলেই মিথিলা চলে যাচ্ছিল । নীল পেছন থেকে ডেকে বলল...
_মিথিলা আমি আজও তোমার চিঠিটার উত্তরের অপেক্ষয় ।জানিনা বইটা আর তার ভাঁজে থাকা চিঠিটা পাব কি না । তবে কী উত্তরটা আজ বলে যাবে?
_এখন বলেইবা কী হবে । ভালো থেকো । আর শোনো,তোমার নামেই ওর নাম রেখেছি "নীলা"।আর ওর মাঝেই আমি তোমাকে খুঁজে পাই ।
মিথিলা চলে যায় ।
মেঘ বৃষ্টি খেলাচ্ছলে ভিজিয়ে দিয়ে যায় প্রকৃতি থেকে শুরু করে উত্তপ্ত রাজ পথ,অলি-গলি এমন কী বৈদ্যুতিক তারে দাড়িয়ে থাকা ঐ কাকটা কেউ ।
আর বৃষ্টির প্রতিটা ফোটার ছন্দে কেউবা লিখে কবিতা,কেউবা সাজায় তার সুপ্ত স্বপ্ন গুলো কে বৃষ্টির র্স্পশে,আর কেউবা শুধুই কাঁদে সবাইকে আড়াল করে ।
সাবস্ক্রাইব করুন:
লিখেছেন - শিহাব হোসেন
_ধুর ছাই । আজ ছাতা টা যে কেন আনলাম না । র্নিঘাত আজ বকা খেতে হবে মায়ের হাতে । ছেলে যে এত বড় হয়েছে মা যেন তা মানতেই চায় না ।
ছাউনির নিচে দাড়িয়ে কথা গুলো ভাবছিল নীল । মাটি কে যেন বৃষ্টি তার ভালোবাসা ক্রমেই বাড়িয়ে দিচ্ছিল । গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি যেন ঝড়ের আকার নিয়েছে । নীল ছাউনির নিচে দাড়িয়েই আনমনেই বৃষ্টি দেখছিল ।
হঠাত্ সে আবিষ্কার করল ছাউনির ওপারে একটি মেয়ে দাড়িয়ে , পরণে ছিল তার প্রিয় নীল রঙের শাড়ী আর হাত র্ভতি যেন একশ কাঁচের চুঁড়ি । ছাউনির বাহিরে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টিকে ছুঁয়ে দিচ্ছিল ।
মেয়েটি যখন নীলের দিকে তাকালো নীল যেন হাজার ভোল্টের শক্ খেল ।
_একী তুমি । এখানে ?
_হুম আমি । চিনতে পেরেছ তাহলে ।
_কেন পারব না ! তা এত বছর পর ? কোথায় ছিলে ?
_চিটাগাং । জামানের পোষ্টিং হয়েছিল চিটাগাং এ । এখন ঢাকায় ।
_জামান ! হাজবেন্ড নিশ্চয় ?
_হুম ।
_ঢাকায় কোথায় উঠেছো ?
_বনানীতে । ওর অফিস থেকে একটা ফ্লাট দিয়েছে ।
_ও ।
_আন্টি ভালো আছেন ?
_হুম ।
_আচ্ছা , নীলাকে আনতে যেতে হবে । এখন আসি ।
_নীলা বুঝি মেয়ের নাম ?
_হুম ।
_সুন্দর ।
_এখন বরং যাই । এর স্কুলের ছুটি হয়ে যাবে ।
বলেই তড়িঘড়ি করে চলে যায় মিথিলা ।
যখন ইউনির্ভাসিটিতে পড়ত মিথিলা তখন নীল ছিল তার সবচেয়ে ভাল বেস্ট ফ্রেন্ড । মুর্হূতেই এক সূতোয় গাঁথা সেই রঙিন দিন গুলো পার হতে লাগল তাদের । ক্লাস ফাঁকি দিয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে ফুসকা খাওয়া , কথায় কথায় ঝগড়া , মিষ্টি শাসন , দুষ্টামি একরাশ অভিমান এমন কী মারামারি র্পযন্তও হয়ে যেত তাদের ।
এত বছর পর মিথিলাকে দেখে মুর্হূতেই স্মৃতির মায়াজালে যেন মাকড়সার খাদ্য বস্তু হিসেবে আটকা পরে গেল নীল । স্মৃতি গুলো মাকড়সা রুপে তাকে একটু একটু করে গিলে খাচ্ছে ।
আজ অফিস শেষ করেই নীল মিথিলার সেই পছন্দের লেকের পাড়ে গিয়ে বসল । লেকটা জুড়ে আজও আছে গাছ গুলো মাথা উঁচু করে হাত বাড়িয়ে ঐ আকাশ কে ছুঁয়ে । বৃষ্টির র্স্পশে গাছের পাতা গুলো যেন তাদের প্রাণ ফিরে পেয়েছে ।
হঠাত্ করেই নীল মিথিলার সেই পারফিউমের সু-গন্ধটার উপস্থিতি অনুভব করল । কিছু বুঝে উঠার আগেই একটি হাতের র্স্পশ অনুভব করল তার কাঁধে ।
_তুমি ?
_হুম,কী করছ এখানে ?
_কিছুনা
_অফিস তো শেষ,সন্ধ্যা হয়ে এল বাসায় যাবে না ?
_হুম যাব । আচ্ছা একটা কথা বলব ?
_বলো
_আমার চিঠিটার উত্তর দিলেনা কেন ?
_ঐ বইটার ভাঁজেই ছিল উত্তর তা । কেন অর্ণা তোমাকে বইটি দেয় নি?
_মানে কী ! ও তোমার বিয়ের দু'সপ্তাহ পর বইটা দিয়েছিল । খুলে দেখা হয়নি । মা অসুস্থ ছিল তাই ব্যস্ত ছিলাম ।
_ভালো । তা তোমার ছেলে না মেয়ে ?
_হা হা
_হাসলে কেন?
_কিছুনা । আচ্ছা তুমি এখন কেমন আছো ?
_মেয়ে সংসার নিয়ে অনেক ভালই আছি ।
_হুম নীলার বয়স যেন কত হল ?
_১২ । তুমি বিয়ে করনি ?
_ওর নাম নীলা রেখেছো কেন ?আমার সাথে মিল রেখে ?
_জানিনা । আচ্ছা আজ বরং আসি ।
বলেই মিথিলা চলে যাচ্ছিল । নীল পেছন থেকে ডেকে বলল...
_মিথিলা আমি আজও তোমার চিঠিটার উত্তরের অপেক্ষয় ।জানিনা বইটা আর তার ভাঁজে থাকা চিঠিটা পাব কি না । তবে কী উত্তরটা আজ বলে যাবে?
_এখন বলেইবা কী হবে । ভালো থেকো । আর শোনো,তোমার নামেই ওর নাম রেখেছি "নীলা"।আর ওর মাঝেই আমি তোমাকে খুঁজে পাই ।
মিথিলা চলে যায় ।
মেঘ বৃষ্টি খেলাচ্ছলে ভিজিয়ে দিয়ে যায় প্রকৃতি থেকে শুরু করে উত্তপ্ত রাজ পথ,অলি-গলি এমন কী বৈদ্যুতিক তারে দাড়িয়ে থাকা ঐ কাকটা কেউ ।
আর বৃষ্টির প্রতিটা ফোটার ছন্দে কেউবা লিখে কবিতা,কেউবা সাজায় তার সুপ্ত স্বপ্ন গুলো কে বৃষ্টির র্স্পশে,আর কেউবা শুধুই কাঁদে সবাইকে আড়াল করে ।
সাবস্ক্রাইব করুন:
লিখেছেন - শিহাব হোসেন