গল্পঃ কানামাছি ( সায়মা ও শিহাব )
শিহাব অনেকক্ষণ যাবৎ লক্ষ্য করছে সায়মা ফোনের দিকে তাকিয়ে কাঁদছে। একমাত্র আদরের ছোট বোনকে কাঁদতে দেখে চমকে উঠলো সে। সচরাচর মন খারাপ থাকে না মেয়েটার। সেই হাসিখুশি মেয়েটার আজ কি হলো? কাঁদছে কেনো! কিন্তু আচমকা ওকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা করলো না তার। কাঁদছে কাঁদুক। মন হালকা হবে। কলেজে পড়ুয়া মেয়েদের অল্পতেই মন খারাপ হয়। কান্না থেমে মন ভালো হলে তারপর জিজ্ঞাসা করা যাবে। এই ভেবে শিহাব পাশের রুমে চলে এলো।
.
রাতে খাবার টেবিলে সবাই খাচ্ছে। সায়মার প্রিয় খাবার বিরিয়ানি রান্না হয়েছে আজ। অথচ ও খাচ্ছে না। অন্যমনস্ক হয়ে থালায় আঙ্গুল ঘোরাচ্ছে শুধু। চোখের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে যেন এখনই টুপ করে পানি বের হয়ে আসবে ওর বড়বড় চোখজোড়া থেকে। খাবার শেষ না করেই টেবিল থেকে উঠে পরলো সে। সবাই একটু অবাক হলো। বিরিয়ানি পাগল মেয়েটা খাবার শেষ না করে উঠে পরলো! এটা বিশ্বাস করা যায় না। মা বললো,"কি হলো? উঠে পরলি যে?" ধরা গলায় সায়মা বললো,"খিদে নেই।"
.
ব্যাপারটা মোটেও সুবিধার লাগছে না শিহাবের। সায়মার রুমের দরজা বন্ধ। ঘুমিয়ে পড়েছে হয়তো। ডিস্টার্ব করা ঠিক হবে না ভেবে আর নক করলো না। সকালে জিজ্ঞাসা করলেই হবে। ঘুমোতে যাওয়ার সময় সায়মার জন্য চিন্তা হলো শিহাবের। ওর কোনো সমস্যা হয় নি তো? রাস্তায় যদি কোনো ছেলে টিজ করে থাকে! কিন্তু ও তো খুব সাহসী মেয়ে। এই ব্যাপারগুলি ভালোই হ্যান্ডেল করতে পারে সায়মা। তাহলে ও কাঁদছে কেন? প্রেমে পড়ে নি তো আবার! না, এরকম হওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। প্রেম জিনিসটা থেকে তার বোন একশো হাত দূরে থাকে। তাহলে ও ফোন হাতে নিয়ে কাঁদছিলো কেন? তখন দেখে তো মনে হচ্ছিলো কোনো কনভার্সেশন পড়ে কাঁদছে। তারমানে ও কোনো লম্পট টাইপ ছেলের সাথে প্রেমে করছে যে ওর আদরের বোনকে কাঁদায়। রাগ আর চিন্তায় অস্থির হয়ে গেলো সে। যেভাবেই হোক সকালে সমস্ত ব্যাপার জানতে হবে।
সাবস্ক্রাইব করুন:
.
ঘুম থেকে উঠেই বোনের রুমের দিকে গিয়ে দেখলো সায়মা রুমে নেই। সারা বাড়ি খুঁজেও ওকে পাওয়া গেলো না। বাবা মা এখনও ঘুমোচ্ছে। তাদেরকে এখনই জানানো ঠিক হবে না। আগে সায়মাকে খুঁজতে হবে। ও বাসা থেকে পালিয়েছে! কি আশ্চর্য!
.
অনেক খুঁজাখুঁজির পরেও সায়মাকে না পেয়ে হতাশ হয়ে বাসায় ফিরলো শিহাব। এতক্ষণে বাসার সবাই হয়তো চিন্তায় অস্থির হয়ে গেছে। কিন্তু বাবাকে দেখা যাচ্ছে ঠান্ডা মাথায় পেপার পড়ছেন আর চা খাচ্ছেন। মা রান্নাঘরে। উনারা কি সায়মার ব্যাপারটা এখনো জানেন না? ভয়ে ভয়ে সায়মার রুমের দিকে তাকালো শিহাব। এই তো দেখা যাচ্ছে সায়মা ঘরেই আছে। বই সামনে নিয়ে বসে আছে। সোজা ওর ঘরে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,"কোথায় গিয়েছিলি? এত ভোরে বাইরে যেতে লজ্জা করলো না তোর?কার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলি? সত্যি করে বল" চেচামেচি শুনে বাবা বললেন,"শিহাব, কি হয়েছে? চিৎকার করছো কেন?" সায়মার দিকে অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে শিহাব বললো,"কিছু হয় নি বাবা।" তারপর সায়মাকে দাঁত কটমটিয়ে বললো,"এখনকার মতো বেঁচে গেলি। বাবা অফিসে যাক। তারপর তোর ব্যবস্থা করছি।"
সায়মা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো শুধু।
.
সকালেও কিছু খেতে পারলো না সায়মা। শিহাব স্পষ্ট খেয়াল করছে সায়মা ভয়ে আড়ষ্ট। ধরা পড়ার ভয়ে। খাবার ওর গলা দিয়ে নামছে না। ভালো করে না খেয়েই উঠে পরলো। চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে রাতে এক ফোঁটা ঘুম হয় নি ওর। শিহাব সিদ্ধান্ত নিলো ওকে বকবে না। ভালোভাবে জিজ্ঞাসা করবে ওর কি হয়েছে। আর ও যেটা করছে সেটা ঠিক না।
সাবস্ক্রাইব করুন:
.
সকাল ১১ টা। সায়মা কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে। শিহাব শুনলো ও বলছে, "আমি এখন কি করবো? আমার অনেক কষ্ট হইতেছে।" পেটে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,"যে করেই হোক একে শেষ করতে হবে। তাছাড়া আমার কাছে আর কোনো পথ খোলা নাই। পেটে এত চর্বি হইছে দোস্ত। এমন ভোটকা হয়ে গেছি। কালকে বিকেলে আমার আগের ছবিগুলা দেখে জাস্ট কান্না করছি। এত চিকন ছিলাম আর এখন কতো ভোটকা হয়ে গেছি। তার মধ্যে কালকে আম্মু বলছে তুই মোটা হচ্ছিস। আবার দ্যাখ,বিরিয়ানি রান্না করছে আমাকে আরও মোটা বানানোর জন্য। কোনো মানে হয়?রাগ করে বাদ দিলাম খাওয়া। কিন্তু বিরিয়ানি খেতে না পারার কষ্টে রাত্রে আমার ঘুম হয় নাই। সকালে কেউ ঘুম থেকে উঠার আগেই বাইরে জগিংয়ে গেছিলাম। সকালেও ভালো করে খাই নাই। চিকন হওয়াই লাগবে at any cost...হেহেহে জানিস কি হইছে? ভাইয়া ভাবছে আমি কারোর সাথে দেখা করতে গেছিলাম সকালে। এমন হাসি পাইছিলো দোস্ত কি আর বলবো...সে নাকি আমার বিচার করবে আজকে হাহাহা।"
এইটুকু শোনার পরে শিহাব তাড়াতাড়ি দরজার আড়াল থেকে ওর রুমে চলে গেলো। ইশ! এত সহজ-সরল বোনটাকে নিয়ে কত বাজে চিন্তা করেছিলো সে! প্রচন্ড লজ্জা হতে লাগলো তার।
এদিকে শিহাব চলে যাওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো সায়মা। যাক! ভাইয়া কিচ্ছু টের পায় নাই। আজ সকালেই তার বয়ফ্রেন্ড জিহাদের সাথে পরামর্শ করে তার পেটের বাচ্চাটাকে অ্যাবোরশন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছে সে। নয়তো জিহাদ ব্রেকআপ করে দিবে।
.
খোলা দরজাটার দিকে তাকিয়ে আবারও দু ফোঁটা চখের জল ফেললো সায়মা। কিন্তু এবার কেউ-ই লক্ষ্য করলো না সেটা।
লিখা : Rifah Tamanna
.
রাতে খাবার টেবিলে সবাই খাচ্ছে। সায়মার প্রিয় খাবার বিরিয়ানি রান্না হয়েছে আজ। অথচ ও খাচ্ছে না। অন্যমনস্ক হয়ে থালায় আঙ্গুল ঘোরাচ্ছে শুধু। চোখের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে যেন এখনই টুপ করে পানি বের হয়ে আসবে ওর বড়বড় চোখজোড়া থেকে। খাবার শেষ না করেই টেবিল থেকে উঠে পরলো সে। সবাই একটু অবাক হলো। বিরিয়ানি পাগল মেয়েটা খাবার শেষ না করে উঠে পরলো! এটা বিশ্বাস করা যায় না। মা বললো,"কি হলো? উঠে পরলি যে?" ধরা গলায় সায়মা বললো,"খিদে নেই।"
.
ব্যাপারটা মোটেও সুবিধার লাগছে না শিহাবের। সায়মার রুমের দরজা বন্ধ। ঘুমিয়ে পড়েছে হয়তো। ডিস্টার্ব করা ঠিক হবে না ভেবে আর নক করলো না। সকালে জিজ্ঞাসা করলেই হবে। ঘুমোতে যাওয়ার সময় সায়মার জন্য চিন্তা হলো শিহাবের। ওর কোনো সমস্যা হয় নি তো? রাস্তায় যদি কোনো ছেলে টিজ করে থাকে! কিন্তু ও তো খুব সাহসী মেয়ে। এই ব্যাপারগুলি ভালোই হ্যান্ডেল করতে পারে সায়মা। তাহলে ও কাঁদছে কেন? প্রেমে পড়ে নি তো আবার! না, এরকম হওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। প্রেম জিনিসটা থেকে তার বোন একশো হাত দূরে থাকে। তাহলে ও ফোন হাতে নিয়ে কাঁদছিলো কেন? তখন দেখে তো মনে হচ্ছিলো কোনো কনভার্সেশন পড়ে কাঁদছে। তারমানে ও কোনো লম্পট টাইপ ছেলের সাথে প্রেমে করছে যে ওর আদরের বোনকে কাঁদায়। রাগ আর চিন্তায় অস্থির হয়ে গেলো সে। যেভাবেই হোক সকালে সমস্ত ব্যাপার জানতে হবে।
সাবস্ক্রাইব করুন:
ঘুম থেকে উঠেই বোনের রুমের দিকে গিয়ে দেখলো সায়মা রুমে নেই। সারা বাড়ি খুঁজেও ওকে পাওয়া গেলো না। বাবা মা এখনও ঘুমোচ্ছে। তাদেরকে এখনই জানানো ঠিক হবে না। আগে সায়মাকে খুঁজতে হবে। ও বাসা থেকে পালিয়েছে! কি আশ্চর্য!
.
অনেক খুঁজাখুঁজির পরেও সায়মাকে না পেয়ে হতাশ হয়ে বাসায় ফিরলো শিহাব। এতক্ষণে বাসার সবাই হয়তো চিন্তায় অস্থির হয়ে গেছে। কিন্তু বাবাকে দেখা যাচ্ছে ঠান্ডা মাথায় পেপার পড়ছেন আর চা খাচ্ছেন। মা রান্নাঘরে। উনারা কি সায়মার ব্যাপারটা এখনো জানেন না? ভয়ে ভয়ে সায়মার রুমের দিকে তাকালো শিহাব। এই তো দেখা যাচ্ছে সায়মা ঘরেই আছে। বই সামনে নিয়ে বসে আছে। সোজা ওর ঘরে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,"কোথায় গিয়েছিলি? এত ভোরে বাইরে যেতে লজ্জা করলো না তোর?কার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলি? সত্যি করে বল" চেচামেচি শুনে বাবা বললেন,"শিহাব, কি হয়েছে? চিৎকার করছো কেন?" সায়মার দিকে অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে শিহাব বললো,"কিছু হয় নি বাবা।" তারপর সায়মাকে দাঁত কটমটিয়ে বললো,"এখনকার মতো বেঁচে গেলি। বাবা অফিসে যাক। তারপর তোর ব্যবস্থা করছি।"
সায়মা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো শুধু।
.
সকালেও কিছু খেতে পারলো না সায়মা। শিহাব স্পষ্ট খেয়াল করছে সায়মা ভয়ে আড়ষ্ট। ধরা পড়ার ভয়ে। খাবার ওর গলা দিয়ে নামছে না। ভালো করে না খেয়েই উঠে পরলো। চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে রাতে এক ফোঁটা ঘুম হয় নি ওর। শিহাব সিদ্ধান্ত নিলো ওকে বকবে না। ভালোভাবে জিজ্ঞাসা করবে ওর কি হয়েছে। আর ও যেটা করছে সেটা ঠিক না।
সাবস্ক্রাইব করুন:
সকাল ১১ টা। সায়মা কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে। শিহাব শুনলো ও বলছে, "আমি এখন কি করবো? আমার অনেক কষ্ট হইতেছে।" পেটে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,"যে করেই হোক একে শেষ করতে হবে। তাছাড়া আমার কাছে আর কোনো পথ খোলা নাই। পেটে এত চর্বি হইছে দোস্ত। এমন ভোটকা হয়ে গেছি। কালকে বিকেলে আমার আগের ছবিগুলা দেখে জাস্ট কান্না করছি। এত চিকন ছিলাম আর এখন কতো ভোটকা হয়ে গেছি। তার মধ্যে কালকে আম্মু বলছে তুই মোটা হচ্ছিস। আবার দ্যাখ,বিরিয়ানি রান্না করছে আমাকে আরও মোটা বানানোর জন্য। কোনো মানে হয়?রাগ করে বাদ দিলাম খাওয়া। কিন্তু বিরিয়ানি খেতে না পারার কষ্টে রাত্রে আমার ঘুম হয় নাই। সকালে কেউ ঘুম থেকে উঠার আগেই বাইরে জগিংয়ে গেছিলাম। সকালেও ভালো করে খাই নাই। চিকন হওয়াই লাগবে at any cost...হেহেহে জানিস কি হইছে? ভাইয়া ভাবছে আমি কারোর সাথে দেখা করতে গেছিলাম সকালে। এমন হাসি পাইছিলো দোস্ত কি আর বলবো...সে নাকি আমার বিচার করবে আজকে হাহাহা।"
এইটুকু শোনার পরে শিহাব তাড়াতাড়ি দরজার আড়াল থেকে ওর রুমে চলে গেলো। ইশ! এত সহজ-সরল বোনটাকে নিয়ে কত বাজে চিন্তা করেছিলো সে! প্রচন্ড লজ্জা হতে লাগলো তার।
এদিকে শিহাব চলে যাওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো সায়মা। যাক! ভাইয়া কিচ্ছু টের পায় নাই। আজ সকালেই তার বয়ফ্রেন্ড জিহাদের সাথে পরামর্শ করে তার পেটের বাচ্চাটাকে অ্যাবোরশন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছে সে। নয়তো জিহাদ ব্রেকআপ করে দিবে।
.
খোলা দরজাটার দিকে তাকিয়ে আবারও দু ফোঁটা চখের জল ফেললো সায়মা। কিন্তু এবার কেউ-ই লক্ষ্য করলো না সেটা।
লিখা : Rifah Tamanna